এলার্জি দূর করার উপায়

মুখে, নাকের, হাতের ও পায়ের এলার্জি দূর করার সকল উপায় ও ঔষধ সহ বিস্তারিত জানুন!

এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে আমরা বিভিন্ন রকম ঔষধ গ্রহন করে থাকি। কেননা এলার্জির যন্ত্রণা শুধু এর ভুক্তভোগীরাই জানেন। এলার্জি দূর করতে নানারকম প্রচেষ্টা করেন সবাই। সুস্বাদু সব খাবার সামনে রেখেও খেতে পারেন না শুধুমাত্র এলার্জির ভয়ে। যার ফলাফল হিসেবে ভুগতে হয় পুষ্টিহীনতায়।

আজকের লেখনীতে দেওয়া উপায় মেনে চললে সহজেই আপনি এলার্জিকে দূর করতে পারবেন সারা জীবনের জন্য। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত।

এলার্জি দূর করার উপায় কি জানুন প্রাথমিক পদ্ধতি

এলার্জির জন্য নানারকম ঔষধ রয়েছে। সেসব ঔষধ সেবনের পূর্বে নিচের খাদ্যগুলো গ্রহন করলে তাড়াতাড়ি সুফল মিলতে পারে।

নিমপাতা:

১ কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকাতে হবে। শুকনো নিমের পাতা পাটায় পিষে গুঁড়ো করে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কৌটায় রাখুন। নিয়মটি হলো এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো মতো নাড়ুন।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে মিশ্রণটি খেয়ে ফেলুন। ২১ দিন একটানা খাওয়ার পর, কার্যকারিতা শুরু হতে ১ মাস লাগতে পারে। এরপর থেকে এলার্জির জন্য যা যা খেতে পারতেন না, যেমন ধরুন- হাঁসের ডিম বা গোশত, বেগুন, গরুর গোশত, চিংড়ি, কচুশাক, গাভীর দুধ, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য খাবার খান। ইনশাআল্লাহ আর সমস্যা হবে না।

মাশরুম:

আমরা দৈনন্দিন সাধারণত যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকি সেগুলোর চেয়ে মাশরুমের পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীর সুস্থ সবল রাখতে খুবই সাহায্য করে। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, মিনারেল ও সবরকম ভিটামিন চর্বি ও অল্প শর্করা, ফলিক অ্যাসিড, লৌহ-প্রভৃতি ওষুধি গুণাগুণ ও উপাদান রয়েছে।

মাশরুম মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার, কিডনি ও এলার্জি সহ বাতের ব্যথা প্রভৃতি জটিল ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি মুক্ত করে নিরাময়কের মহাভূমিকা পালন করে থাকে।

একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের পরিমাণের উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় এই ৯টি এমাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান।

এলার্জি দূর করার উপায় ঔষধ

চুলকানি কি কারনে হয়েছে সেটা সঠিকভাবে নির্নয় করতে পারলে সহজেই চুলকানির চিকিৎসা করা যায়।

  • দ্রুত চুলকানি কমানোর জন্য চুলকানির স্থানে পেভিসোন মলম লাগান। ৫ মিনিটের মধ্যেই আপনার চুলকানি কমে যাবে। 
  • পেভিসোন মলম ব্যবহারের পাশাপাশি সাথে এলাট্রল ট্যাবলেট খেতে পারেন। এটি খেলে কিছুটা ঝিমুনি বা ঘুম পেতে পারে।
  • এলার্জি জনিত চুলকানি হলে খাটি সরিষার তেলে ৬-৭ কোয়া রসুন ছেঁচে দিন এবং তা চুলায় ভাজুন। রসুনের রঙ বাদামী হলে নামিয়ে হালকা গরম থাকা অবস্থায় এলার্জি আক্রান্ত জায়গায় মাখুন। চুলকানি কমে যাবে কিন্তু আরো ফল পেতে এর সাথেও এলাট্রল ট্যাবলেট খেতে পারেন।
  • ওরাডিন নামের  ট্যাবলেট আছে, যা দ্রুত চুলকানি কমাতে ভালো কাজ করে। ওরাডিন খেলে আপনার ঘুম পাবে না। তবে আপনি ওরাডিন বা এলাট্রল যেটিই খান না কেন, ২৪ ঘণ্টায় একটির বেশি খাওয়া যাবে না। 

নিচের এই ঔষধগুলো চুলকানির সময় একবার খেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চুলকানি কমিয়ে দেয়ার সক্ষমতা রাখে।

১. ডাইফেনাহাইড্রামিন

২. সিটিরিজিন

৩. লোরাটিডিন

৪. ডেসলোরাটিডিন

৫. ফেক্সোফেনাডিন

তবে যে কোন ওষুধ ব্যাবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিজ দায়িত্বে ওষুধ ব্যবহার করে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিবেন না।

নাকের এলার্জি দূর করার ঘরােয়া উপায়

অ্যালার্জির বড় কনাগুলো নাকে ও ছোট কনাগুলো ফুসফুসে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। যাদের হাঁপানি আছে তাদের মধ্যে শতকরা ৫৬-৭৪ জনেরই নাকে অ্যালার্জি থাকে। বায়ুমণ্ডলের দূষণ, ধূলা, সিগারেটের ধোঁয়া থেকে অ্যালার্জি ছাড়াও নাকে ইরিটেশন বা খুশ খুশ হতে পারে। এলার্জি রোধে করণীয়, 

  • ধুলাবালু, ধোঁয়া, ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলতে হবে। বাসা-বাড়ির কার্পেট, পুরাতন বই, কাপড় বা ফোমের সোফা সরিয়ে ফেলতে হবে। 
  • তোশককে রেক্সিন বা ম্যাট্রেস দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে সবসময়।
  • ফুলের রেণু থেকে দূরে থাকতে হবে। 

এরপরও সমস্যা না কমলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

হাতের এলার্জি দূর করার উপায়

হাতের এলার্জি প্রতিরোধে প্রথমেই যে কারণগুলো এড়ানো সম্ভব তা এড়িয়ে চলতে হবে।

  •  যে দ্রব্য স্পর্শ করলে প্রতিক্রিয়া হয় তা থেকে দূরে বা ব্যবহার কমাতে হবে। 
  • সাবান নয় এমন কিছু দিয়ে হাত ধোয়াসহ প্রয়োজনে হাতে গ্লাভস দরকার। 
  • নিয়মিত মেরিল বা ভ্যাসলিন লাগাতে হবে।
  • এলার্জি চিকিৎসায় স্থানীয়ভাবে স্টেরয়েড, ক্যালসিনিউরিন ইনহেবিটার ইত্যাদি দেওয়া হয়। 
  • ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে কিংবা মারাত্নক অবস্থার সময় মুখে খাবার এন্টিবায়টিক ও স্টেরয়েড দেওয়া যেতে পারে।

কোল্ড এলার্জি দূর করার উপায়

শীতের হাঁচি ও সর্দির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া খুবই সহজ। যদি সমস্যাটি চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলা যায় তাহলে সমস্যা অনেকাংশ কমে আসবে।

  • সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠার পর ঠান্ডা ফ্লোরে কিংবা মাটিতে কোনো অবস্থাতেই খালি পায়ে হাঁটা ঠিক হবে না। বিশেষত যারা খালি পায়ে হেঁটে অভ্যস্ত নন এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে কম গেছেন,তাদের বেলায় এ সমস্যা বেশি হয়। 
  • বাচ্চাদের শীতের সকালে গরম কাপড়ের সঙ্গে মাথায় ক্যাপ এবং পায়ে মোজা পরাতে পারেন।
  • সর্দির সময়ে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, যেমন- হিস্টাসিন, হিস্টাল, এভিল , এক্সপিলিন ইত্যাদি ট্যাবলেট খাওয়া যায়।
  •  নাক বন্ধ হলে নাকের ড্রপ, যেমন- এন্টাজল, রাইনোজল, নোভিন ইত্যাদি দুই-তিন ফোঁটা করে দিনে তিনবার নাকের ছিদ্রপথে ব্যবহার করতে পারেন। 
  • প্রতিদিনই সমস্যা হতে থাকলে সে ক্ষেত্রে রাতে ট্যাবলেট এভিল রিটার্ড একটি করে খেতে পারেন।
  • যারা সকালবেলা জগিং করেন তারা নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। এছাড়া প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি রাখতে হবে।

প্রয়োজনে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলতে পারেন।

মুখে এলার্জি দূর করার উপায়

মুখে এলার্জি সর্বদাই যন্ত্রণাদায়ক। এ থেকে মুক্তি পেতে নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে । 

অ্যালোভেরা:

কার্যত অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক ওষধি এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক নিরাময়ের প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। এটি এলার্জি থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে গতি দেয় এটি মুখের ত্বকের অ্যালার্জির অন্যতম সেরা প্রতিকার।

অ্যালোভেরা পাতা থেকে এক চামচ জেল বের করুন বা কিনে নেওয়া অ্যালোভেরা পণ্য থেকে এক চা চামচ জেল বের করুন। তারপরে আক্রান্ত স্থানে জেলটি সরাসরি লাগিয়ে দিন।

প্রায় ৩০ মিনিট রেখে এটি ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন এক নাগারে দিনে তিন-চারবার প্রয়োগ করুন, আশা করি ভালো ফল পাবেন। 

কোল্ড শাওয়ার:

ঠাণ্ডা পানির গোসল ত্বকের জ্বালা এবং এলার্জি হ্রাস করতে সহায়তা করে। একটি শীতল ঝরনা আপনার রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত করে এবং হিস্টামিন বেরোতে দেয় না। এটি অ্যালার্জির তীব্রতা এবং ত্বকের জ্বালাও কমায়।

অলিভ অয়েল:

জলপাই তেল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে উপকারি। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এ তেল চুলকানি হ্রাস করে,আরাম দেয়।

রক্তের এলার্জি দূর করার উপায়

এলার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল কারণগুলো শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। এলার্জি হাচি থেকে শুরু করে খাদ্য ও ওষুধের ভীষণ প্রতিক্রিয়া ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

রক্তে এলার্জি কমাতে এলার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন ও এলার্জিজনিত রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যাবহারে কর্টিকোষ্টেরয়েডের ব্যাবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোষ্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহায় পাওয়া যায়। 

পায়ের এলার্জি দূর করার উপায়

নারকেল তেল ত্বকে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পণ্য। যে কোন প্রকার চুলকানি, পোকার কামড় বা অন্য কোন কারণে ত্বকে চুলকানি হলে যেখানে চুলকাবে সেখানে নারকেল তেল দিয়ে দিন। এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন,

পেট্রোলিয়াম জেলি:

যদি আপনি সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারী হন তবে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। শরীরের কোন অংশে চুলকানি হলে আপনি পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। মেরিল বা জেলি সবার ঘরেই থাকে, ফলে যেকোন সময়ই আপনি ইহা ব্যবহার করতে পারবেন।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

বেকিং সোডা:

চুলকানি প্রতিরোধে বেকিং সোডা অনেক বেশি কার্যকরী। পানি ও বেকিং সোডা দিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিন। এক অংশ পানির মধ্যে ৩ অংশ বেকিং সোডা দিতে হবে। তারপর চুলকানির জায়গায় এই পেষ্ট লাগান। দেখবেন চুলকানি অনেক কমে গেছে। বেকিং সোডা দিয়ে গোসলও করতে পারেন। এক্ষেত্রে বড় এক বালতি পানিতে ১/২ কাপ বেকিং সোডা মেশাতে হবে। বেকিং সোডা মেশানো পানিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীর ভিজিয়ে রাখার পর শরীর পানি দিয়ে না ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। এতে পুরো শরীরের চুলকানি দূর হয়ে যাবে।

মুখে এলার্জি দূর করার ঔষধ

কর্পূর এবং নারকেল তেল – যদি আপনার ত্বকে এলার্জি থাকে এবং সেই জায়গায় যদি চুলকানি হয় তাহলে সেখানে কাপুর এবং নারকেল তেল ব্যাবহার করতে পারেন। কর্পূর এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে এলার্জি আক্রান্ত জায়গায় দিন তাহলে আপনি দ্রুত আরোগ্য পাবেন।

ফিটকিরির পানি দিয়ে এলার্জি হওয়া জায়গা ধুয়ে পরিষ্কার করুন । কর্পূর এবং সরিষা তেল সেই জায়গায় লাগাতে থাকুন।

আমলকীর বীজ পুড়িয়ে রাখুন এবং তাতে একটু কাপুর এবং নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে লাগান। এর ফলে আপনি অনেক আরাম পাবেন।

এলার্জি দূর করার ক্রিম

স্কিন সমস্যার জন্য অনেক ডাক্তার নানা ধরনের ক্রিম এর ব্যবহার করতে বলেন। সেই সকল ক্রিমের মধ্যে অন্যতম টারবিন। এছাড়াও ডাক্তাররা এন্টিহিস্টামিন স্টেরয়েড মলম ও ক্যালামিন লোশন জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করতে বলেন। এসকল ক্রিম স্কিন এলার্জির জন্য খুবই উপাদেয়।

শেষকথা

এলার্জি দূর করার উপায় হিসেবে ক্রিম,ঔষধ ব্যবহার না করে ভেষজ খাবারে মনোযোগ দিলে দ্রুত আরোগ্য সম্ভব। কেননা ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। অন্যদিকে আমরা দামি খাবার হিসেবে যে মাছ, গোশত, ডিম খেয়ে থাকি তার মধ্যে ১০০ গ্রাম মাছ, গোশত ও ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ হলো মাত্র ১৬-২২ গ্রাম, ২২-২৫ গ্রাম ও ১৩ গ্রাম।

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন ও মিনারেলের আসল কাজ। শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহন না করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল হয়ে নানারূপ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top