কিডনি রোগ : মানব দেহের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। বর্তমানে মানুষের যেসব প্রাণঘাতী রোগ রয়েছে তার মধ্যে কিডনি রোগ একটি। কিডনি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে কীভাবে এর প্রতিকার করা যায় তা পড়ে ফেলুন এখানে।
কিডনি রোগ কেন হয়?
কিডনির প্রধান কাজ গুলোর মধ্যে অনত্যম হলো রক্ত পরিশোধন করা ও শরীরে হরমোন উৎপাদন করা। কিন্তু নানা কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়৷
কিডনি রোগের কারণগুলো একনজর দেখে নিন।
- কিডনিতে প্রদাহ হলে।
- জন্মগত ভাবে কোনো সমস্যা থাকলে।
- বিভিন্ন ধরনের ঔষুধের কেমিক্যালের পার্শপ্রতিক্রিয়া হলে।
- শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে।
- অনিয়ন্ত্রিত কিংবা অকর্মণ্য জীবন যাপন করলে।
- ধূমপান কিংবা এলকোহল সেবন করলে।
- ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ থাকলে।
কিডনি রোগের লক্ষণ
সময়মতো চিকিৎসা না করালে কিডনি ফেইলর হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই কিডনি রোগের লক্ষণগুলো জানা থাকলে আপনি দ্রুত এর পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক কিডনি রোগের লক্ষণ সমূহ:
- ঘুমের সমস্যা হওয়া:
যখন কিডনি রক্ত পরিশোধন করতে পারে না তখন রক্তে টক্সিন প্রস্রাবের সাথে বাহির হতে ব্যর্থ হয়। ফলে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল বাহির করে দেয়। ফলে লাল রক্ত কণিকা তৈরি হয় এবং খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। খনিজ এর অভাবে ত্বক শুষ্ক হয় ও ফেটে যায়।
অতিরিক্ত মূত্রত্যাগ কিডনি রোগের একটি লক্ষণ। কিডনির ছাঁকনি নষ্ট হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
- চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া:
কিডনি লিক করলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এর ফলে চোখের চারপাশে ফুলে যায়।
কিডনি রোগের চিকিৎসা
যে কোনো রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায় হচ্ছে রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা। রোগাক্রান্ত হওয়ার আগেই রোগ প্রতিরোধ উত্তম। তবে আক্রান্ত হলে অবশ্যই এর চিকিৎসা রয়েছে।
চলুন জেনে নিই কিডনি রোগের চিকিৎসা।
- অ্যান্টিবায়োটিক:
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই কিডনির রোগে অ্যান্টিবায়োটিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা।
- লিথোট্রিপসি :
উচ্চপ্রযুক্তির শক ব্যবহার করে কিডনির পাথরকে ছোট করা যায়। এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতিকে লিথোট্রিপসি বলে।
- নেফ্রেকটোমি :
চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি অপসারণকে নেফ্রেকটোমি বলে। কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করলে নেফ্রেকটোমি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে।
- ডায়ালাইসিস :
কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় রক্ত পরিশোধন করার নামই ডায়ালাইসিস। ডায়ালাইসিস বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন- হেমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস। তবে এটি অনেক ব্যয় বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি।
- কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট :
অকেজো কিডনি পরিবর্তন করে অন্য কোনো ব্যক্তির সুস্থ কিডনি সংযোজন করাকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বলে। তবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বেশ ব্যয় বহুল।
কিডনি সুস্থ রাখার খাদ্যভাস
কিডনি সুস্থ রাখতে পানির কোনো বিকল্প নেই। অবশ্যই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে খাদ্যাভাসে রাখতে হবে কিডনির জন্য উপকারী খাদ্যসমূহ। কিডনি রোগীর খাবার তালিকা । কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলবেন জেনে নিন!
একনজর দেখে নিন কোন কোন খাদ্য উপাদান কিডনি রোগের প্রতিকারক।
- ক্যাপসিকাম:
ক্যাপসিকামে খুবই স্বল্প মাত্রার পটাশিয়াম থাকে যা কিডনির জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এটি শরীরের কিডনি রোগের সাথে সাথে ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকারি ভূমিকা রাখে।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনিকে সুস্থ রাখতেও রসুন বিশেষ উপকার করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে রসুন কিডনি ফেইলরের মতো বড় ধরণের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন রান্নায় বহুল ব্যবহৃত উপাদানটি হলো পেঁয়াজ। এই খাদ্য উপাদানটি রক্তে কোলেস্টেরল এবং দেহে চিনির মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। যা কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়া থেকে বিরত রাখে।
লেবুর রস শরীরের pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এবং শরীরের বড় বড় রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে লেবুর রস খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দেয় না।
- গাজর:
গাজর খাওয়ার ফলে শরীরে নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্রিয়েটিনিন হ্রাস পায়। ক্ষতিকর এই ক্রিয়েটিনিন কিডনিজনিত নানান ধরণের রোগের অন্যতম কারণ।
ভিডিওঃ ১২ টি উপায়ে সুস্থ্য রাখুন কিডনি ।। কিডনি ভালো রাখার ঘরোয়া উপায়
কিডনি রোগের প্রতিকার
একটা মানুষের দেহের জন্য কিডনির গুরুত্ব অপরিহার্য। সুস্থ কিডনি একজন মানুষ কে স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত কিডনির রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। কিডনি ভালো রাখার ১২টি গুরুত্বপূর্ণ উপায় জেনে নিন!
কিডনি রোগ এড়িয়ে চলতে নিম্নোলিখিত উপায়গুলি মেনে চলতে পারেন।
- কিডনি ভালো রাখার জন্য অবশ্যই প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তবে কেউ যদি শারীরিক পরিশ্রম বা খেলাধুলায় করে থাকে তাহলে আরও বেশী পানি পান করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম ও অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রম করুন। নিয়মিত শরীরচর্চার কোন বিকল্প নেই। ব্যায়াম ও শরীরিক পরিশ্রমের জন্য সময় না থাকলে, বেশি বেশি হাঁটার চেষ্টা করুন।
- ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এবং তা নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
শেষকথা
দেহে কিডনির রোগ অনেক ভয়াবহ বিপদ ঢেকে অানতে পারে। তাই, উপরোক্ত কিডনি রোগ এর লক্ষণ ও প্রতিকার এর মাধ্যমে এটি থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।। আমাদের অধিক সচেতনতায় পারে কিডনি রোগের প্রতিকার করতে।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!