খবর – জোফরা আর্চার, নাম শুনলেই যেন চোখে ভেসে ওঠে লাল-সাদা বল হাতে তেড়ে আসা একটি উঁচু লম্বা যুবকের ছবি। ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের এক অন্যতম নায়ক, যিনি কি না বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলেই ছিলেন না। ভক্তকূল ও সাবেক প্লেয়ারদের দাবির মুখে যাকে বিশ্বকাপ দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে নেওয়া হয়।
সেই জোফরা আর্চার নিজের জাত চেনালেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। দলের বিশ্বকাপ জেতানোর পেছনে রাখলেন অনস্বীকার্য অবদান। এবং বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে ব্যাটসম্যানদের জন্য হয়ে উঠলেন এক আতঙ্কের নাম।
পাঠক, আজ আলোচনা করবো ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য জোফরা আর্চার-কে নিয়ে। যার লিজেন্ডারি ভবিষ্যত এখনি দেখে ফেলেছেন শতশত ক্রিকেটবোদ্ধা।
Table of Contents
পরিচয়ঃ
নাম- জোফরা চিওকি আর্চার।
জন্ম- ১ এপ্রিল, ১৯৯৫; ব্রিজটাউন, বারবাডোজ।
বোলিংয়ের ধরন- ডানহাতি, ফাস্ট।
ব্যাটিংয়ের ধরন- ডানহাতি, ফিঞ্চ হিটার ব্যাটসম্যান।
ভূমিকা- বোলিং অলরাউন্ডার।
ক্যারিবীয় কিচ্ছাঃ
বারবাডোজের ব্রিজটাউন শহরে ১৯৯৫ সালে জন্ম হয় জোফরা আর্চারের। বাবা ফ্রাংক আর্চার হলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। এবং মা একজন আফ্রিকান প্রভাবযুক্ত ইংরেজি ভাষাভাষীর মানুষ, সে অঞ্চলে যাদের বাজান বলে ডাকা হয়। ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর
আর দশজন বাজানের মতো আর্চারও স্বপ্ন দেখেন ওয়েস্ট-ইন্ডিজের ক্রিকেটার হওয়ার। স্থানীয় ক্রাইস্ট চার্চ ফাউন্ডেশনে শুরু করেন পড়াশোনা। ক্রিকেট খেলার শুরুও সেখান থেকে।
ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ গতিতে বল করতেন জোফরা আর্চার। তার স্কুল শিক্ষকদের মতে ১০/১১ বছর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার মতো বলের গতি ছিলো তার। একটি অমানবিক শক্তি ছিলো আর্চারের ঘাড়ে সে বয়সেই। ঐ স্কুলের শিক্ষক ও ক্রিকেট কোচ ব্রুস কোজেন এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে জানান, ‘স্কুল ক্রিকেটে আর্চার একজন ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন এবং মাঝে মাঝে বোলিংও ওপেন করতেন। এমনকি স্কুলে ফাস্ট বোলারদের সংখ্যা বেশি থাকায় আর্চারকে লেগ স্পিন করতেও দেখা গেছে। পরবর্তীতে ১৫ কী ১৬ বছর বয়সে তিনি আবার পেস বোলিংয়ে ফিরে আসেন। তৈরি হোন পুরোদস্তুর বোলার হিসেবে। হয়ে ওঠেন ব্যাটসম্যানদের জন্য এক দৃশ্যমান আতঙ্ক। ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর
ইংল্যান্ড পাড়ি দেবার গল্প- ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর
ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলবে এমনটা নিজেও কখনো ভাবেনি জোফরা আর্চার। তবে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের দল সাসেক্সের হয়ে খেলার সুযোগ হয়ে যায় খুব অল্প বয়সেই। জোফরা আর্চার-কে সাসেক্সে ভেড়ানোর পেছনে বড় একটি ভূমিকা আছে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের আরেক খেলোয়াড় ক্রিস জর্ডান এর। সেবার বিদেশি খেলোয়ার হিসেবে বারবাডোজের হয়ে খেলতে এসে জোফরা আর্চার কে দেখে ক্রিস জর্ডান।
রীতিমতো মুগ্ধ হয় আর্চার এর বলের গতি আর বাউন্সে। ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে একথা জানায় সাসেক্সের কোচ মার্ক রবিনসনকে। ব্যাস, জোফরা আর্চার এর সুযোগ হয়ে যায় কাউন্টি দল সাসেক্সের হয়ে খেলার।
তবে আসল ঘটনাটা ঘটে ২০১৪ সালের দিকে। আর্চার তখন ওয়েস্ট-ইন্ডিজ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলা টগবগে যুবক। স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলে খেলার। কিন্তু কোনো একটা কারণে জাতীয় দলে সুযোগ হচ্ছিলো না তার। ক্যারিবীয় নির্বাচকেরা হয়তো অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন আরো কিছু সময়। কিন্তু আর্চার তো থামবার পাত্র নয়। নিয়ে নিলেন জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত। গায়ে জড়ালেন ব্রিটিশদের নীল-শীতল জার্সি।
বাবা ব্রিটিশ হওয়ায় ইংল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেতে খুব একটা সময় লাগলো না। খুলে গেলো ভাগ্যের চাকাও। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে জড়াতে যেখানে দীর্ঘ ৭ বছর অপেক্ষা করতে হতো জোফরা আর্চার-কে, সেখানে ২০১৮ সালে এই নিয়মের পরিবর্তন হলো। ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর , সময়ের পরিব্যাপ্তি কমে আসলো মাত্র ৩ বছরে। খুব অল্প সময়েই আমরা পেয়ে গেলাম ইংল্যান্ডের নিউ ইয়াং পেস বোলিং সেনসেশন জোফরা আর্চার- দ্যা স্পিড মনস্টার। খবর
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান- খবর
টেস্টঃ
ম্যাচ- ৭
উইকেট- ৩০
বোলিং গড়- ২৭.৪০
ইনিংসে ৫ উইকেট- ৩ বার।
সেরা বোলিং- ৬/৪৫
ওয়ানডেঃ
ম্যাচ- ১৪
উইকেট- ২৩
বোলিং গড়- ২৪.৭৩
ইনিংসে ৫ উইকেট- ০ বার।
সেরা বোলিং- ৩/২৭
টি-২০-
ম্যাচ- ১
উইকেট- ২
বোলিং গড়- ১৪.৫০
ইনিংসে ৫ উইকেট- ০ বার।
সেরা বোলিং- ২/২৯
ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই ঘরে তুলেছেন শিরোপা। দলকে জিতিয়েছেন কাঙ্খিত বিশ্বকাপ। করেছেন সেই ঐতিহাসিক সুপার ওভার। রাতারাতি হয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের ওয়ান্ডার বয়।
তবে এই ওয়ান্ডার বয় কী পারবে সেরাদের সেরা তালিকায় নাম লেখাতে? যখন ক্রিকেটের বিখ্যাত পেস বোলারদের নাম বলা হবে, তখন কী ওয়াকার ইউনিস, কোর্টনি এম্ব্রোস, ব্রেট-লি’দের পাশে থাকবে জোফরা আর্চার এর নাম? উত্তরটা সময়ই বলে দিবে।
তবে যিনি এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছেন, ভাইয়ের মৃত্যুর শোক বুকে নিয়ে খেলেছেন বিশ্বকাপ, তিনি নিশ্চয় মাঝপথে থেমে যাবেন না। ছুটে যাবেন দুরন্ত গতিতে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে। যে গন্তব্যের প্রতিচ্ছবি বুকে লালিত করেই এতদূর এসেছেন জোফরা আর্চার।
লিখেছেন- আরিফুল আবির***
আরো পড়ুন-