খেলাধুলা – পড়াশোনায় জীবনে উন্নতির একমাত্র অবলম্বন,বাবা-মায়ের এমন চিন্তাধারার যাতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে সন্তানের সুবিকাশ,ভারাক্রান্ত হচ্ছে একটা শিশুমন। আধুনিকতার এই যুগে, স্কুল, কোচিং আর প্রাইভেট টিউটর এই চক্রে আবদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এর বাইরে যেটুকু সময় পাওয়া যায় মোবাইল গেমস আর কম্পিউটার নিয়ে থাকা।
সবুজের ছোঁয়া মানে লোক দেখানো পিকনিক সেটিও আবার ওই দু’চারটি গাছ লাগানো শহরের কোন পার্কে। আজ আমরা এত সভ্য হয়েছি যে সন্তানকে কাদামাটি লাগার ভয়ে খেলতেই দেয়না। তাছাড়া খেলাধুলার করার কারনে অনেক সময়ের অপচয় হয়,এই রকম চিন্তাধারনার জন্যেও অনেক শিশু-কিশোর আজ খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত।
খেলাধুলার বাদ দিয়ে
হাতে মোবাইল দেওয়াতে ঠিকঠাক পড়াশোনা তো হচ্ছেই না, সেই সাথে অনলাইন আসক্তি, পর্নগ্রাফির মত নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আজ সারাবিশ্বে স্থুলতা এক ধরনের ব্যাধি বলে পরিচিত। তার জন্যে এই খেলাধুলা থেকে দূরে সরে আসা কে দায়ি করা যায়।
নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে খুব সহজে নিজেকে শারীরিকভাবে ঠিক রাখা যায়। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শেখে নিয়মাবর্তিতা, নেতৃত্ব কীভাবে দিতে হয়। যা পরবর্তী জীবনের প্রতিটা ধাপে তাকে সবার থেকে এগিয়ে রাখ্তে সহায়তা করে।
আমরা সবাই জানি খেলাধুলায় জয়-পরাজয় থাকে। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী জীবনের উঠানামায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। একজন খেলোয়াড় খুব ভাল করে জানে জয়কে কীভাবে উদযাপন করতে হয় আর পরাজয়কে মেনে নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করতে হয়।
একটা সত্যি গল্প বলি- খেলাধুলা
একটা গ্রামের স্কুলের মেয়ে ফুটবল টিমের কথা। সারা, এমিলি,হ্যামিলি,হীরা,আর রুপা ওই টিমের খেলোয়াড়, সবাই খুব ভাল খেলত। প্রথমে বাবা মা বাধা দিয়েছিল,মেয়ে হয়ে কেনো খেলা তাও আবার ফুটবল। গ্রামবাসীরা অনেক বিরোধিতা করে। তবে ক্রীড়া শিক্ষক স্যারের অদম্য ইচ্ছায় সমালোচনা দাঁড়াতে পারেননি।
স্যার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। নিয়মিত পড়া ছাড়াও প্রত্যেক মেয়ে প্রতিদিন সকালে অনুশীলন করে। জাতীয় পর্যায়ে খেলার গৌরব অর্জন করেছেন। তারপরে গ্রামের প্রত্যেকে একটি বাস ভাড়া করে খেলাটি দেখত। পা ভাঙার কারণে দলের দুই খেলোয়াড় ফাইনাল জিততে পারেনি। কিন্তু সে বছর তিনি
অ্যাথলেটিকসে 4 স্বর্ণ এবং 2 রৌপ্য পদক পেয়েছিলেন। স্যার তখন গর্ব করে হীরা বলেছিলেন, রুপার নাম নয়, আমরা কাজেই প্রমাণ করেছি। দল এখন নেই। তবে প্রতিটি মেয়ে 5-10 ছেলে-মেয়েদের চেয়ে ভাল করেছে যারা খেলাধুলা করেনি, সব ক্ষেত্রে সাফল্যের রেখা টানা হয়েছে, রূপা আজ বিকেএসপিতে দেশ-বিদেশে খেলছে, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন স্কুল এবং কলেজ সেরা ফলাফল।
এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রতিটি খেলোয়াড় শারীরিক ও মানসিকভাবে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকে, জীবনের প্রথম জিনিসটি একটি সুস্থ দেহ এবং মানসিক বিকাশ, খেলা উভয় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সৃজনশীল শিক্ষায় সফল হওয়ার জন্য, খেলাধুলাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মোবাইলের জন্য নয়, বাচ্চাদের জন্য আমাদের একটি সুন্দর ক্ষেত্র সরবরাহ করতে হবে, যাতে প্রযুক্তির মানসিক বিকাশ যেন ভেঙে না যায়, আমি, আপনি, আমাদের সকলকেই এর জন্য কাজ করতে হবে।
কবি সুকান্তের শপথ,
শিশুর জন্যে এই বাসস্থানকে যোগ্য করার,সেই প্রতিশ্রুতি এবার পূর্ণ করার সময় হয়েছে।।
***লিখেছেন- সায়মা রহমান***
আরো পড়ুন-