গলা খুসখুস অতি সাধারণ একটি সমস্যা। তবে সমস্যাটি সাধারণ হলেও এটি অত্যন্ত বিরক্তিকর। সকলের ক্ষেত্রেই এটি অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। তবে গলা খুসখুস দূর করার উপায় কী?
গলা খুসখুস দূর করতে হালকা গরম পানিতে লবন মিশিয়ে গরগরা করলে কাজ হয়। এছাড়াও আদা চা, লবঙ্গ, এমনকি দুধও গলা খুসখুস দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আরো কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যা অনুসরণ করলে আপনি গলা খুসখুস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ভিডিওঃ গলার ভিতরে ঘা হলে করনীয় কি জেনে নিন।
Table of Contents
গলা খুসখুস দূর করার উপায়
বর্তমানে গলা খুসখুস একটি প্রচলিত সমস্যা। প্রাচীন কাল থেকেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভরসা রাখুন ঘরোয়া টোটকাই। গলা খুসখুস দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. আদা, মধু ও কালোমরিচ
আদা, মধু ও কালো মরিচ গলা খুসখুস দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। এক কাপ পানি ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে পরিমাণ মতো আদা কুঁচি,কয়েকটি কালো মরিচ এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। উষ্ণ গরম অবস্থায় সেই পানি পান করুন। প্রাকৃতিক এই উপাদান ব্যবহার করুন, গলা খুসখুস থেকে মুক্তি পাবেন।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!
২. আদা, গুড় ও জোয়ান
গলা খুসখুস দূর করতে এই তিনটি উপাদান বেশ কার্যকর। সামান্য পরিমাণ গুড় নিয়ে তার সাথে আদা কুঁচি এবং জোয়ান মিশিয়ে খান। নিয়মিত খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই গলা খুসখুস দূর হবে।
৩. গোলমরিচ ও তুলসী
গলা খুসখুস দূর করার উপায় হিসেবে গোলমরিচ ও তুলসীপাতা অত্যন্ত উপকারি। এক্ষেত্রে এক কাপ পানিতে ৫ থেকে ৬ টা গোলমরিচ এবং কয়েকটি তুলসীপাতা একত্রে বেটে খান এতে গলা খুসখুস দূর হবে।
৪. আদা এবং লবঙ্গ
আদাতে রয়েছে ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংসকারী উপাদান। শুকনো আদা চিবিয়ে খান খুসখুসি দূর হবে। লবঙ্গ গলার সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। একটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে ধীরে ধীরে চিবিয়ে রস খান।
৫. হলুদ এবং দুধ
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে হলুদ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। হলুদে থাকা এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যে কোন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে গরম দুধের সঙ্গে সামান্য কাঁচা হলুদ খেয়ে নিন। এতে গলা খুসখুস, গলা ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
৬. কিসমিস
সংক্রমণের কারনে যাদের গলায় খুসখুস লেগেই থাকে তারা সকাল বিকাল ৪ থেকে ৫টি কিশমিশ দানা পানি ছাড়া চিবিয়ে খান। টানা ৮ থেকে ১০ দিন খেলেই ফল পাবেন।
৭. ডুমুর এবং সোহাগা
ডুমুর এবং সোহাগা ব্যবহার করে গলার খুসখুস দূর করা যায়। ৫ থেকে ৬টি ডুমুর পানিতে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ করা পানি ফিল্টার করে সকাল সন্ধ্যায় গরম পানি পান করুন। এছাড়াও আধা গ্রাম কাঁচা সোহাগা মুখে নিয়ে রস চুষে খান উপকার পাবেন।
গলা খুসখুস কেন হয় ?
বিভিন্ন কারনে গলা খুসখুস হয়ে থাকে। যেমন- পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি, এলার্জি, নানা ধরনের ঔষুধ সেবন, সাইনাসের প্রদাহ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ঠান্ডা পদার্থ সেবন, ধুলো, শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাস জনিত সংক্রমণ, নাক দিয়ে দীর্ঘদিন সর্দি ঝরার পরবর্তী জটিলতা, অতিরিক্ত ধুমপান ইত্যাদি কারনে গলা খুসখুস বা খুসখুসে কাশি হয়ে থাকে।
আসলে গলা খুসখুস ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণে দেহের প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি।
এলার্জিজনিত কাশি দূর করার উপায়
এলার্জি একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এলার্জিজনিত ঠান্ডা, সর্দি, কাশি আমাদের প্রায় লেগেই থাকে। এলার্জিজনিত কাশি দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে দেয়া হলো।
>>৫ থেকে ৬টা তুলসীপাতা থেঁতো করে তার সাথে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে সারাদিনে ৩ বার খান। কয়েক দিন খেলেই ফল পাবেন।
>>এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ মধু এবং অর্ধেক লেবুর রস আর সামান্য পরিমাণ আদার রস মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে দুই বার পান করুন। এতে এলার্জিজনিত কাশি দূর হবে এবং গলা ব্যথাও সেরে যাবে।
এছাড়াও এলার্জি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং সেই সাথে নিজের ব্যবহৃত পোশাক, বালিশের কভার গরম পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিন।
পুরাতন কাশি দূর করার উপায়
শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সকল বয়সী মানুষেরই কাশি হয়। কাশি যদি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তবে তাকে পুরনো কাশি বলে।
পুরাতন কাশির কারন হলো অতিরিক্ত ধুমপান, হাঁপানি, এ্যাজমা, এলার্জিক রাইনাটিস, সাইনাসের সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমন, যক্ষা, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ইত্যাদি কারনে কাশি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়ে থাকে।
পুরাতন কাশি থেকে মুক্তি পেতে ৩টি ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে নিন।
১. বাসক পাতা
কাশি দূর করতে বাসক পাতা বেশ উপকারি। পরিমাণ মতো বাসক পাতা নিয়ে সেদ্ধ করে সেই পানি কুসুম গরম অবস্থায় সকাল ও সন্ধায় পান করুন। নিয়মিত খেলে ২ থেকে ৩ দিনেই ভালো ফল পাবেন।
২. যষ্টিমধু
পুরাতন কাশি দূর করতে যষ্টিমধুর জুড়ি নেই। যষ্টিমধু ভেতর থেকে কফ বের করার পাশাপাশি শ্বাসনালী পরিস্কার করে ফেলে।
এক্ষেত্রে এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন রাতে শোয়ার পূর্বে নিয়মিত পান করুন কাশি দূর হবে। তবে এক বছর বয়সের নিচে শিশুদের মধু খাওয়ানো একেবারেই উচিৎ নয়।
৩. আদা
কাশি দূর করতে আদা বেশ কার্যকর উপাদাম। আদা ছোট ছোট টুকরো করে লবন দিয়ে কিছুক্ষন পর পর খেতে থাকুন। এতে কাশি দূর হবে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
গলা ভাঙ্গা দূর করার উপায়
স্বর ভঙ্গ বা গলা ভাঙ্গা একটি প্রচলিত সমস্যা। অনেক সময় শীতের কারনে অথবা শ্বাসনালীতে ইনফেকশন বা সংক্রমণে গলা ভাঙ্গে। এমনকি উচ্চস্বরে কথা বললেও গলা ভেঙ্গে যায়। ফলে কন্ঠস্বর বদলে যায়, কন্ঠনালী দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয় না। ফ্যাসফ্যাসে শব্দ হয়।
এর সঠিক চিকিৎসা না নিলে ভিভিন্ন জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।
গলার স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে প্রথমে কথা বলা একেবারেই কমিয়ে দিতে হবে। তবে গলা ভাঙ্গা দূর করতে ঘরে বসেই প্রাথমিক ভাবে কিছু চিকিৎসা করতে পারেন। যেমন-
>>গলা ভাঙ্গা দূর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি হলো লবন পানি দিয়ে গড়গড়া করা। সারা দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ বার গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন উপকার পাবেন।
>>মূলত গলা ভাঙ্গা উপশমে লেবু পানি ও আদা বেশ উপকার। এক্ষেত্রে হালকা গরম লেবু পানি পান করুন কিংবা শুকনো আদা চিবিয়ে খান। কারন আদায় রয়েছে ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংসকারী উপাদান যা গলা ভাঙ্গা দূর করে।
>>গলা ব্যথা বা গলা ভাঙ্গার আর একটি ওষুধ হলো গরম বাষ্প। ফুটন্ত পানির বাষ্প ১০ মিনিট মুখ দিয়ে টানুন গলা বসা কমে যাবে।
শুকনো কাশি দূর করার ঔষধ
শুকনো কাশি বা খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। মানব দেহে কাশির বিভিন্ন কারন থাকতে পারে। যাদের শুকনো কাশি বা খুসখুসে কাশি রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয়।
তবে যারা শুকনো কাশিতে ভুগছেন, তাদের জন্য একটি ঘরোয়া উপায় আছে যা অনুসরণ করলে ভালো ফল পাবেন এবং এতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
এক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খান অথবা রস করে খেতে পারেন। টানা ৩ দিন খেতেই আপনার শুকনো কাশি দূর হয়ে যাবে।
সমাপ্তি
পরিশেষে বলা যায়, গলা খুসখুস বা খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। কাশি হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করার পাশাপাশি গরম পানি পান করার চেষ্টা করুন। গলা খুসখুস দূর করার উপায় হিসেবে উল্লেখিত সবকটি উপায় কার্যকর। এ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করার পরেও যদি সমস্যা দূর না হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!