ঘাড়ে ব্যথা হলে করণীয় – মস্তিষ্কের সাথে পুরো শরীরে সংযোগ স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ঘাড়। ঘাড়ের মাধ্যমেই মস্তিষ্ক থেকে আসা সমস্ত আদেশ মেরুদণ্ডে সংরক্ষিত স্নায়ুরজ্জু দিয়ে সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কিন্তু এই ঘাড়ের ব্যথাটাই আজকাল খুব প্রচলিত একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণত প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ঘাড় ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন। যদিও খুব কম ক্ষেত্রে ঘাড় ব্যথা মারাত্নক সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। তবে কি কি কারনে ঘাড় ব্যথা হয় এবং ঘাড়ে ব্যথা হলে করণীয় কি হতে পারে তার সঠিক তথ্য এখনো অনেকেরই অজানা।
Table of Contents
ঘাড়ে ব্যথার কারণঃ
হয়তো এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা যাদের জীবনে একবারও ঘাড় ব্যথা হয়নি। অনেক ক্ষুদ্র কারণ থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় কারনে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। ঘাড় ব্যথা ঠিক কি কি কারনে হতে পারে এখন আমরা ঝটপট সেই কারনগুলো জেনে নেবো।
ভুল পশচার বা অঙ্গভঙ্গিঃ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল পশচার বা ভুল অঙ্গভঙ্গি হলো ঘাড় ব্যথার প্রধান এবং সাধারণ একটি কারন। আমরা আমাদের ঘাড় ঘোরানো যেভাবে পরিচালনা করি তাতে ভুলভাল হলেই ঘাড়ের হাড় যেসব লিগামেন্ট দ্বারা যুক্ত তাতে অসুবিধা দেখা দেয়। ফলে শুরু হয় ঘাড় ব্যথা।
দীর্ঘক্ষণ অলস ভঙ্গিতে বসে থাকা, ঘুমানোর সময় ঘাড় বাঁকা করে ঘুমানো, উঁচু-নিচু বালিশের ব্যবহার, দীর্ঘ সময় কম্পিউটার চালানো বা ফোনে কথা বলা ইত্যাদি কারনে ঘাড়ের পেশিতে প্রচন্ড চাপ পড়ে ঘাড় ব্যথা শুরু হয়।
হাড়ের টিস্যু ক্ষয়ঃ
সাধারণত বয়সজনিত কারনে হাড়ের টিস্যুর ক্ষয় হতে পারে এবং হাড়ের ক্ষয়জনিত কারনে ঘাড় ব্যথা হয়।
>> রসুন এর উপকারিতা – ১১ টি গুণাগুণ জেনে নিন!
সারভাইকাল স্পন্ডাইলসিসঃ
মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশে সাতটি কশেরুকা রয়েছে এবং দুটো কশেরুকার মাঝখানে থাকা ডিস্ক যখন শুকিয়ে যায় এবং সংকুচিত হয়ে যায় তখন একে সারভাইকাল স্পন্ডাইলসিস বলে। এটি মূলত বয়সজনিত সমস্যা এবং এর ফলে রুগী ঘাড়ে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করেন।
মেরুদন্ডে যক্ষাঃ
বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যক্ষা কেবল ফুসফুসে হয়। কিন্তু যক্ষা ফুসফুস ছাড়াও হাড় এবং লিম্ফয়েড গ্রন্থিতে হয়ে থাকে। মেরুদন্ডে যক্ষা হলে তীব্র ঘাড় ব্যথার একটি অন্যতম কারন যা অনেক মানুষ বুঝে উঠতেই পারেন না।
>> ঘি এর উপকারিতা এবং ঘি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন!
টিউমার, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড ও টনসিলঃ
টিউমার, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড এবং টনসিলজনিত কারনে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
দূর্ঘটনাঃ
কোন দূর্ঘটনায় ঘাড়ে হঠাৎ ঝাঁকুনি লেগে ঘাড়ে আঘাত লেগে মারাত্মক ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাকে হুইপল্যাশ আঘাত বলা হয়ে থাকে।
ঘাড়ে ব্যথা হলে করণীয়
আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের চাই সমান যত্ন এবং গুরুত্ব। পুরো দেহের স্বাস্থ্য অনেকটা নির্ভর করে ঘাড়ের পেশী এবং হাড়ের সুস্থতার উপর। যেহেতু এই ঘাড় ব্যথা আজকাল একটি সাধারণ সমস্যা তাই ঘাড়ে ব্যথা হলে করণীয় কি কি তা আমাদের জেনে রাখা ভীষণ জরুরি।
>> সাফি ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জেনে নিন!
সঠিক নিয়মে জীবনযাপনঃ
ঘাড় ব্যথার প্রধান কারন ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি। তাই আমাদের সঠিক নিয়মে বসা, ঘুমানো, ঘাড় ঘুরানো ইত্যাদির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে ঘাড়ের ব্যথা এড়ানো সম্ভব।
খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার হাড় ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম। এছাড়াও প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট রোদে থাকলে শরীরে ভিটামিন -ডি’র অভাব পুরন হয় যা হাড়কে রাখে শক্ত। সুতরাং নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং রোদে থাকার অভ্যাস আপনার ঘাড় ব্যথা কমিয়ে আনবে।
এছাড়াও, অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা, তীব্র মানসিক চাপ, কাজের চাপ, অনিদ্রা, অবসাদ ঘাড়ের ব্যথার সাথে প্রবলভাবে সম্পর্কিত। তাই নিজের প্রতি যত্নশীল হোন, নিজেকে সময় দিন, শারীরিক ও মানুষিক ভাবে সক্রিয় থাকুন।
মোটকথা, পরিকল্পিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন যা আপনাকে ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।
>> পায়ে ব্যথা হলে করণীয় কি? জেনে নিন!
গরম স্যাঁক ও মালিশঃ
ঘাড় ব্যথায় তাৎক্ষণিক আরাম পেতে গরম স্যাঁক দিতে পারেন। সেই সাথে ঘাড়ে তেল দিয়ে আলতোভাবে মালিশ নিতে পারেন। তবে কখনোই ঘাড়ে জোরে চাপ দেবেন না।
সারভাইকাল কলার ব্যবহারঃ
যাদের ঘাড় নিচু রেখে কাজ করতে হয় তাদের ঘাড় ব্যথা নিত্যদিনের ব্যাপার। তাই ঘাড় ব্যথা কমাতে কাজের সময় সারভাইভাল কলার ব্যবহার করুন। এছাড়াও দূরের জার্নিতে অবশ্যই কলার ব্যবহার করুন।
থেরাপিঃ
যদি দীর্ঘদিন ঘাড়ে একটানা ব্যথা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঘাড়ের ব্যথায় ফিজিওথেরাপি এবং কাইরোপ্রাকটিক থেরাপি বেশ কার্যকর। ফিজিওথেরাপি প্রশিক্ষক বিভিন্ন প্রকার ঘাড়ের ব্যায়াম শিখিয়ে আপনার ঘাড় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং কাইরোপ্রাকটিক থেরাপির মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ন্ত্রিত চাপ প্রয়োগে ঘাড় ব্যথার চিকিৎসা দেয়া হয়।
অস্ত্রপোচারঃ
টিউমার, হাড়ের যক্ষা,টনসিল,সারভাইকাল স্পাইন অস্থিতিশীলতা এবং নিউরোলজিকাল ডিসফাংশন ইত্যাদি জটিল কারনজনিত ঘাড় ব্যথায় চিকিৎসক অস্ত্রপোচারের শরনাপন্ন হতে পারেন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
শেষকথাঃ
পরিশেষে বলা যায়, যদি আপনি কোন কারনে ঘাড় নাড়াতে না পারেন তবে জোর করে চেষ্টা করবেন না। ঘাড় ব্যথার সময় ঘাড় ঝুঁকিয়ে কাজ করা, গাড়ি চালানো বা ঝাঁকুনি লাগে এমন যানবাহনে চড়া থেকে বিরত থাকুন।
এক্ষেত্রে গরম গরম স্যাঁক নিতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘাড়ে ব্যথা হলে করণীয় একটাই, চিকিৎসকের পরামর্শ শরণাপন্ন হোন। সঠিক চিকিৎসা পেলে দ্রুত ঘাড় ব্যথা নিরাময় সম্ভব।
>> ভিটামিন বি জাতীয় খাবার সমূহের নাম জেনে নিন!