চিরতার উপকারিতা

চিরতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন!

চিরতার উপকারিতা অতুলনীয়। এটি এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। 

আজকের প্রতিবেদনে আমরা চিরতার নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

চিরতার উপকারিতা

চিরতা এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার সবটাই রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা জটিল রোগের চিকিৎসায় এটি বেশ উপকারি। 

বিশেষ করে চিরতার শেকড় বেশি কার্যকর। নিয়মিত তিতা চিরতার পানি খেলে অসুখ হবার সম্ভাবনা থাকে না। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক আর কী কী চিরতার উপকারিতা রয়েছে। 

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

চিরতা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাতে পরিমাণমতো চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং এতে বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়। 

২. রক্তস্বল্পতা পূরণ করে

চিরতা রক্তস্বল্পতা পূরণেও সাহায্য করে। এটি দেহে রক্ত কোষ গঠন করে থাকে। ফলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করলে শরীরে রক্ত তৈরি হয় এবং রক্তশুন্যতা দূর হয়। 

. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে 

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে চিরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

এক্ষেত্রে চিরতার গুড়ো ৫০০ গ্রাম এবং গোক্ষর গুড়ো পানির সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল দুই বার পান করুন। এতে ডায়াবেটিস সেরে যাবে। 

৪. এলার্জির সমস্যা দূর করে 

এলার্জি সারাতে চিরতার রস বেশ উপকারী। অনেকের এলার্জির কারণে শরীর লাল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে শুকনা চিরতা পরিমাণমতো নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন সেই পানি ছেকে সারাদিনে দুই থেকে তিন বার পান করুন। এলার্জি সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

৫. সংক্রমণ প্রতিরোধ করে 

চিরতা আমাদের শরীরকে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে রক্ষা করে। কারণ চিরতার স্বাদ তেঁতো। আর তেঁতো খাবার যেকোনো ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাস সংক্রমণ হতে দেয় না। তাই চিরতা ভেজানো পানি নিয়মিত পান করলে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

৬. লিভার পরিষ্কার রাখে

চিরতা লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন। এতে লিভার সুরক্ষিত থাকবে। 

এছাড়াও লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফ্যাটি লিভার দূর করতে চিরতা বেশ উপকারি। 

৭. বমি ভাব দূর করে 

অনেকের বমির সমস্যা থাকে। কোনো কিছু খেলেই বমি বমি ভাব হয়। বমি ভাব দূর করতে চিরতা দারুণ কার্যকর। 

এক্ষেত্রে ৫ গ্রাম চিরতা থেঁতো করে ২ কাপ গরম পানিতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সেই পানি ছেঁকে অল্প অল্প করে খেতে থাকুন। এতে বমি ভাব দূর হবে। 

৮. হজমের সমস্যা দূর করে 

হজমের সমস্যা দূর করতে চিরতার উপকারিতা অপরীসিম। হজম শক্তি না থাকলে এসিডিটি, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ব্যথার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন। উপকার পাবেন। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

৯. টক্সিন দূর করে  

চিরতা শরীরকে পরিষ্কার করতে খুব উপকারী। নিয়মিত চিরতার রস পান করলে শরীর থেকে টক্সিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ  বের হয়ে যায়। ফলে শরীর ভেতর থেকে পরিস্কার ও ফ্রেশ থাকে। 

১০. ত্বকের যত্নে 

ত্বকের যত্নে চিরতা কার্যকর ভুমিকা রাখে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ত্বকের ব্রন, ঘা, ক্ষত এবং ত্বকের ইনফেকশন সারতে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করুন। 

১১. তারুণ্য ধরে রাখতে 

চিরতা তারুণ্য ধরে রাখতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। চিরতার পানি রক্ত পরিস্কার করে ও রক্ত সঞ্চালনা বৃদ্ধি করে। তাই তারুণ্য ধরে রাখতে নিয়মিত চিরতার পানি পান করুণ। 

১২. হাঁপানি রোগে

হাঁপানি রোগে চিরতার বেশ সুনাম রয়েছে। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত রোগীরা আধা গ্রাম চিরতার গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুণ ফল পাবেন। 

১৩. ক্ষত সারতে

শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত সারতে চিরতা দারুণ কার্যকর।   

এক কাপ গরম পানিতে ৪ থেকে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে সেই পানি ছেঁকে সেটা দিয়ে ক্ষত স্থান ভালো ভাবে পরিষ্কার করুন। এভাবে ৪ থেকে ৫ দিন ব্যবহারে আপনার ক্ষত সেরে যাবে। 

১৪. জ্বর উপশম করে 

আমাদের অনেকের মধ্যেই ঠান্ডা লাগা জ্বর হয়। যার কারণে রাতে জ্বর আসে এবং হাত পা কামড়ায়। এমন অবস্থায় ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ২ কাপ পানিতে পরিনত করুন। এরপর পানি ঠান্ডা করে ছেঁকে রাখুন। এই পানি নিয়মিত সকাল ও বিকেলে অর্ধেক করে পান করুণ। এতে জ্বর সেরে যাবে। 

ভিডিওঃ অলিভ অয়েল তেলের ১৯ স্বাস্থ্যকর উপকারিতা জেনে নিন!

চিরতার অপকারিতা 

চিরতার উপকারিতা অতুলনীয় হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন-

  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিরতার রস পান করলে উপকারের পরিবর্তে অপকার হতে পারে। কারণ চিরতা তেঁতো, তাই বমি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। 
  • ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি একটানা চিরতা খাওয়া যাবে না। 
  • চিরতা ব্লাড সুগার লেভেলকে যেহেতু কমিয়ে দেয় তাই চিরতা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 

উপসংহার

 পরিশেষে বলা যায় চিরতার উপকারিতা অনেক। চিরতার পানি তেঁতো হলেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারে। বিভিন্ন রোগ সারতে তাই চিরতার জুড়ি নেই। তাই দেরি না করে আজ থেকেই নিয়মিত চিরতার পানি পান করা শুরু করতে পারেন।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top