চিরতা খাওয়ার উপকারিতা : চিরতা প্রাচীনকাল হতে ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিরতার আদিনিবাস ভারতবর্ষে । হিমালয়ের পাদভূমিতে তার উৎপত্তি। সেখান থেকে ভারতের বিভিন্ন অংশে, নেপাল ও ভুটান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে। চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে প্রাচীন আয়ুর্বেদ ও চরক সংহিতায় উল্লেখ আছে। চিরতার আয়ুর্বেদিক নাম কিরাততিক্তা।
চিরতা নানা রকম সংক্রামক অসুখ-বিসুখের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। চিরতায় রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। চিরতায় এমন কিছু কিছু উপাদান আছে যা অন্য উদ্ভিদে নেই।
রোগ নিরাময়ে চিরতার সমস্ত গাছই ব্যবহার করা যায়। তবে শিকড় সবচেয়ে বেশি কার্যকর।যেকোনো অসুখের চিকিৎসাতে চিরতা ব্যবহার করা হয়। নিচে চিরতার উপকারীতা উল্লেখযোগ্য কিছু ভেষজ গুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
Table of Contents
চিরতা কি – চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
চিরতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Swertia। হিন্দিতে একে চিরায়াতা বলা হয়ে থাকে। চিরতা মূলত একটি ভেষজ উদ্ভিদ।চিরতা চিকিৎসা ও চিকিৎসা সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলত ফুল থাকা আবস্থায় পুরো গাছ তুলে রোদে শুকিয়ে ঔষধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
চিরতা একটি বর্ষজীবি উদ্ভিদ। গাছটির গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার। গাছের পাতা প্রায় ১০ সে.মি. দীর্ঘ। পাতার অগ্রভাগ সূঁচালো হয়। ফুল বৃন্তহীন এবং জোড়ায় জোড়ায় বিপরীতমুখী হয়ে ফোটে। ফুল হালকা সবুজের সঙ্গে গোলাপী মেশানো প্রত্যেক পাপড়ি লতিতে এক জোড়া সবুজ গ্রন্থি থাকে। ফল ৬ মি.মি. কিংবা তারও বেশি লম্বা এবং ডিম্বাকৃতি হয়।
ভিডিওঃ অলিভ অয়েল তেলের ১৯ স্বাস্থ্যকর উপকারিতা জেনে নিন!
চিরতা কোথায় পাওয়া যায়?
রাস্তার আশেপাশেই প্রচুর চিরতা জন্মাতে দেখা যায়। আপনার এলাকায় না পাওয়া গেলে দোকান থেকে কিনে নিতে পারেন। আজকাল অনলাইন শপগুলোতেও চিরতার গুঁড়া কিনতে পাওয়া যায়। ঔষধিগুন সমৃদ্ধ চিরতার দামও কিন্তু খুবই নাগালের মধ্যে।১০০ গ্রাম শুকনো চিরতার দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
চিরতার পানি পান করাতে রয়েছে অনেক উপকারিতা। চিরতার ডাল ভালো করে শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেট খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। চিরতার পানির উপকারিতা বেশি থাকায়, এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিরতার পানি পান করলে গ্যাস,বদহজম, আলসার রোধ সম্ভব। চিরতার পানি রক্তে দূষিত পদার্থ দূর করতেও ভালো ভূমিকা রাখে। এর পানি খেলে শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তি বাড়িয়ে দেয়।ফলে অনিদ্রা, বিষণ্ণতা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।খালি পেটে চিতরার পানি খেলে কৃমির উপদ্রব থাকবেনা।
এ ছাড়াও চিরতা লিভারকে পরিষ্কার রাখতে এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ ভূমিকা রাখে।
খালি পেটে চিরতা খেলে বেশ কার্যকারী ফলাফল পাওয়া যায়। অনেকেই বেশি তিতার জন্য খেতে পারেন না। এক্ষেত্রে চিরতা ভিজানো পানির সাথে মধু বা সামান্য চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
ত্বকের যত্নে চিরতা
চিরতা অনেক ভেষজ গুণে গুণান্বিত। চিরতার উপকারীতা আমাদের দেহের সবকিছুতেই রয়েছে। নিন্মে ত্বকের যত্নে চিরতার উপকারীতা আলোচনা করা হলোঃ
১. ত্বকের এলার্জি দূরে করতে
যাদের এলার্জি আছে তাদের জন্য চিরতা রস বেশ ভালো কাজে দিনে।এলার্জি হয়ে শরীর চুলকায়, চুলকানোর জায়গাটা ফুলে লাল হয়ে যায়। ত্বক থাকা থাকা হয়ে ওঠে। তারা চিরতার শরণাপন্ন হতে পারেন। অ্যালার্জি সারাতে চিরতার তিতা রস বেশ ভালো সাহায্য করে। আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস ( ২৫০ মি.লি.) গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে দিনের মধ্যে ২-৩ বার খেতে হবে। সাথে খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে। যেসব খাবার খেলে আপনার অ্যালার্জি হয় সেসব খাবার খাওয়া যাবে না।
২. ত্বকের ব্রণ দূর করতে
চিরতার রস এবং নিমপাতার রস একসাথে ব্রণের দারুণ উপকারী। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অতুলনীয় এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান। নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। নিয়মিত চিরতা ও নিমপাতার পেস্ট তৈরি করে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ১০০ গ্রাম চিরতা এবং নিমপাতা ১ লিটার পানিতে ফুটিয়ে আধা লিটার করে তা বোতলে ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। নিয়মিত ৩-৪ বার কটন বল সেই পানিতে ভিজিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। চিরতমার রসে রয়েছে অ্যান্ট্রি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যা ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে।
৩. ত্বকের পচা ঘা সারাতে
ঘা হয়েছে কিছুতেই সারছে না। তাহলে এখুনি চিরতা ব্যবহার করুন।খুব দ্রুত আপনার ঘা ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ১০ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে দিন। পরেরদিন সেই জল ছেঁকে পচা ঘা অংশ ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে ঘায়ের পচানি চলে যাবে। এবং দ্রুত ঘা শুকাবে।
৪. ত্বকের চুলকানি সারাতে
ত্বকে চুলকানি জনিত সমস্যা থাকলে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম চিরতা নিন। এতে সামান্য পানি ছিটিয়ে বেটে অথবা ব্লেন্ডার দিয়ে স্মুথ করে নিন। এরপর ছেঁকে নিন। ছেঁকা হয়ে গেলে লোহার কড়াইতে ১০০ গ্রাম পরিমান সরিষার তেল দিয়ে জ্বাল দিন। তেল ফুটালে ফেনা জাগতে শুরু হবে। ফেনা কমে গেলে ফুটন্ত তেলে ভেজে চুলা বন্ধ করে দিন। খেয়াল রাখতে হবে, যেন পুড়ে না যায়।
এবার তেল ছেঁকে নিন। যে সকল যায়গায় চুলকায় সেসব যায়গায় এই তেল দিয়ে আস্তে আস্তে মালিশ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই ভালো ফলাফল পেয়ে যাবেন।
৫. মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করে
কোনো কারণ ছাড়াই রোজ মাথা থেকে প্রচুর চুল উঠছে। মূলত এটি মাথার ত্বকের সমস্যা জন্য হয়ে থাকে। চুল উঠতে উঠতে ঘন চুল, পাতলা হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চিরতার রস বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।
আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫-১০ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সেই পানি ছেঁকে নিন। এবার পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল ওঠা কমবে। একদিন পর পর এভাবে চিরতার পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। ৩-৪ বার এভাবে ধুতে পারলে চুল ওঠা অনেক কমে যাবে।
চিরতার অপকারিতা
গর্ভবতী মহিলারা চিরতার রস খাওয়া উচিত না। যাদের আলসার আছে তাদেরও চিরতার রস খাওয়া উচিত না।
কোনো খাবার অতরিক্ত খাওয়া ঠিক না। তেমনিই চিরতা কখনো অতিরিক্ত খাবেন না।
একটানা ১৫-২০ দিন খেয়ে, ১৫-২০ দিনের জন্য একটা বিরতি দিন। তারপর আবার ১৫-২০ দিন খেয়ে বিরতি দিন। নিয়মিত খেতে চাইলে এই নিয়ম মেনে চলুন।
আবার বেশি পরিমাণে চিরতা খেলে গায়ে জ্বালা পোড়া করতে পারে। বমি বমি ভাব হতে পারে।
এ ছাড়া চিরতার স্বাদ খুবই তেঁতো হয়। তাই প্রথম খেলে বমি হবার সম্ভাবনা থাকে।
এমনি কি শরীরে কোনো কঠিন সমস্যা বা রোগ ব্যাধি থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিরতা খেতে হবে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
উপসংহার
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করার যাবে না। মানব শরীরে যেকোনো সমস্যায় চিরতা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। বনে অথবা রাস্তার ধারে জন্মালেও এই উদ্ভিদের রয়েছে চমৎকার গুনাগুন। শরীর সুস্থ রাখতে তাই চিরতার পানি পান করুন।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!