জন্ডিসের লক্ষণ – সাধারণত প্রস্রাব হলুদ হওয়া, ত্বক ও চোখের ভেতরের অংশ হলুদ হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শরীরে জন্ডিসের লক্ষণগুলো আত্মপ্রকাশ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি বড় কোন রোগ নয়, তবে বেশ কয়েকটি শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
ভিডিও তে জন্ডিসের লক্ষণ – জন্ডিস রোগীর খাবার ও চিকিৎসা দেখতে এখানে ক্লিক করুন!
জন্ডিস অবহেলা করার মতো কোন বিষয় নয়। সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ এই ক্ষেত্রে খুবই জরুরী। তবে এই ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। আসুন জন্ডিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
শীতলকারক ওষুধ (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) মেডিসিন কিনুন আমাদের শপ থেকে!
Table of Contents
জন্ডিস কেন হয়?
সাধারণত রক্তে বিলিরুবিন নামক উপাদানের মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে জন্ডিস বলে। রক্তের লৌহিত কণিকায় এটি থাকে এবং যখন এই লৌহিত কণিকাগুলো ভেঙ্গে যায় তখন বিলিরুবিন বের হয়ে আসে। যেটাকে লিভার (যকৃত) মলের সঙ্গে শরীর থেকে বের করে দেয়।
কোন কারণে এই প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ হলে জন্ডিসের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। সবার ক্ষেত্রে জন্ডিসের কারণ এক নয়। ভিন্ন ভিন্ন কারণে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন-
- হেপাটাইটিস: এটি একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা স্বল্পকালীন বা প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এর মাধ্যমে লিভার মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং স্বাভাবিক কার্যকারীতা ব্যাহত হয়ে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- পিত্ত নালী ব্লকড হয়ে যাওয়া: একটি সূক্ষ নালী যা লিভার ও পিত্তথলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং এই নালীর মাধ্যমে পিত্ত বা পিত্তরস প্রবাহিত হয়। যদি কোন সমস্যার কারণ এই নালী ব্লকড হয়ে যায় তাহলে জন্ডিস হতে পারে।
- অ্যালকোহলজনিত লিভারের রোগ: যারা অ্যালকোহলে আসক্ত বা দীর্ঘ সময় (প্রায় আট থেকে দশ বছর) ধরে অ্যালকোহল পান করে আসছেন তাদের জন্ডিসের ঝুঁকি খুব বেশি। এর মাধ্যমে লিভার মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সাধারণত মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।
- অগ্নাশয় ক্যান্সার: পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। অগ্নাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে পিত্ত নালী ব্লকড হয়ে জন্ডিস হতে পারে।
- কিছু ঔষধ গ্রহনের মাধ্যমে: কিছু কিছু ঔষধ লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে এবং এর মাধ্যমেও জন্ডিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
জন্ডিসের লক্ষণ গুলো কি কি?
ব্যক্তি ভেদে জন্ডিসের লক্ষণগুলোর তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণভাবে যে লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে প্রকাশ পায় সেগুলো হলো- গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব, চোখের সাদা অংশ এবং ত্বক হলুদ বর্ণের হয়ে যায়, ফ্যাকাশে রঙের মল, ত্বকের চুলকানি, বমি বা বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, জ্বর এবং সর্দি, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, বিভ্রান্তি, পেটেব্যথা, মাথা ব্যথা, পেট ফোলাভাব ইত্যাদি।
>> সাফি ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জেনে নিন!
জন্ডিস হলে করনীয়
আপনার শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে কোন প্রকার ভারী কাজ বা পরিশ্রমের কাজ করবেন না। সাধারণত ভাইরাল হেপাটাইটিস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যে কারণ বিশ্রাম না নিলে বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> হামদর্দ এর ঔষধ সমূহ | কোন রোগে কোন ঔষধ খাবেন বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন!
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীদের খাবার ব্যাপারে উল্লেখ্যযোগ্য কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে সহজেই হজমযোগ্য সরল শর্করা যেমন- ভাত, জাউভাত, রুটি ইত্যাদি বেশি খাওয়া উঁচিত। তাছাড়া পানি এবং তরল জাতীয় খাবার প্রয়োজনীয় পরিমাণ খেতে পারলে ভাল হয় যেমন- শরবত, ডাবের পানি, আঁখ বা আখের রস, গ্লুকোজের শরবত ইত্যাদি।
তবে হেপাটাইটিস হলে যেহেতু লিভারের স্বাভাবিক কার্যকারিতা কিছুটা হলেও বাঁধাগ্রস্ত হয় তাই লিভার বা পিত্তথলির উপর চাপ সৃষ্টি করে এই ধরণের খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ যেমন- চর্বিজাতীয় খাবার, ঘি, মাখন, ফাস্টফুড বা বাইরের ভাঁজাপোড়া টাইপের খাবার, কোমল পানীয়, গরু বা খাসির মাংস ইত্যাদি।
জন্ডিস টেস্ট
সাধারণত রক্তে বিলিরুবিনের পরিমান পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিস নির্ণয় করা হয়। একজন সুস্থ্য মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১.২ mg/dL এর নিচে থাকে। তাছাড়া রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে লিভার ফাংশন এর কার্যকারিতাও নির্ণয় করা সম্ভব।
এরপরেও রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে জন্ডিসের সঠিক কারণ অনুসন্ধান করার জন্য ডাক্তার আরো কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন যেমন- রক্তের সিবিসি, পেটের আলট্রাসাউন্ড, লিভার বায়োপসি ইত্যাদি।
জন্ডিস এর চিকিৎসা
জন্ডিসের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই, কারণ আগেই বলেছি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি নিজেই কোন রোগ নয় বরং অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র। যেহেতু হেপাটাইটিসের কারণেই এটি বেশি হয় তাই জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে পূর্ণ বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবারই আপনার চিকিৎসার সবচেয়ে জরুরী অংশ।
এভাবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ্য হয়ে ওঠে। অপ্রয়োজনে বা নিজে থেকে কোন ঔষধ খাবেন না, পাশাপাশি কবিরাজি ঔষধ থেকে দূরে থাকুন। তবে ভিন্ন কোন জটিল কারণে জন্ডিস হলে ডাক্তারেরা প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করবেন।
>> কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা | লক্ষণ,ঝুঁকি,প্রয়োজনীয় টেস্ট, ঔষধ সহ বিস্তারিত!
জন্ডিস কত দিনে ভালো হয়?
সাধারণত ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং জন্ডিস এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। তবে এটি একটি গড় হিসাব, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং সংক্রমণের মাত্রার উপর ভিত্তি করে সময় কম বা বেশি লাগতে পারে।
উপসংহার
শুধুমাত্র অবহেলা এবং অসচেতনতার কারণ অনেক সময় জন্ডিস মারাত্বক আকার ধারণ করে এবং রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তাই জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে পূর্ণ বিশ্রাম নিন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করুন। খাবার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। সুস্থ্য থাকুন, ভাল থাকুন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
>> ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়? ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জেনে নিন!
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!