টিউমার চেনার উপায়

৫টি ভয়ংকর টিউমার চেনার উপায় ও প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানুন!

অনেক সময় শরীরে ব্যাথাবিহীন কিছু মাংসপিণ্ড দেখা যায় যা থেকে পরবর্তীতে সৃষ্টি হতে পারে টিউমার। আসুন আজকে এই টিউমার চেনার উপায় এবং টিউমার ব্যাপারে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিই।

শরীররে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দ্রুত, অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কোন কোষ বৃদ্ধি পেলে টিউমার সৃষ্টি হয়।প্রতিদিন আমাদের শরীরে অসংখ্য কোষ মরে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং সেখানে নতুন কোষ তৈরি হয়। এই কোষগুলি মারা গেলে এবং নতুন কোষ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে টিউমার তৈরি হয়।

টিউমার যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন তার চিকিৎসা করা অত্যাধিক ব্যয়বহুল হয়। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার চিনতে পেরে যথাযথ চিকিৎসা নিলে খরচ, কষ্ট ও সময় কমানো সম্ভব।

ভিডিওঃ টিউমার ভালো করার ৭টি উপায় জেনে নিন।

টিউমার চেনার উপায়

মূলত টিউমার দু’ধরনের হয়। এক ধরনের টিউমার শুধু এক জায়গাতে বৃদ্ধি পেয়ে এক জায়গাতেই  অবস্থান করে। এদের বলে বিনাইন টিউমার। এটা তেমন ক্ষতিকারক নয়। আরেক প্রকার টিউমার শরীরের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্য কোনো অংশে গিয়ে জমা হয়ে সেই অংশের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এবং নতুন টিউমার তৈরি করে। এদের বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সারাস টিউমার। যাকে সংক্ষেপে ক্যান্সার বলে। আসুন জেনে নিই বিভিন্ন ধরনের টিউমার চেনার উপায় গুলো।

১. গলার টিউমার চেনার উপায় 

বেশিভাগ ক্ষেত্রে গলার পেছনের নরম হাড়ে এধরনের টিউমার হয়ে থাকে।

আপনি যদি সবসময় গলায় কিছু একটা আটকে আছে অনুভব করেন। তাহলে এটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। যে টিউমার আপনার গলার কোনো অংশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও  

দীর্ঘদিন ধরে কফ ও কাশি থেকে থাকে।এটিও টিউমারের লক্ষণ।হঠাৎ করে গলার স্বর পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া, মুখ এবং গলা ফুলে যাওয়া, গলা খসখস করা, গলার সঙ্গে কানেও ব্যথা করা হতে পারে গলায় ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ। এগুলো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

২. পেটে টিউমার চেনার উপায়

পেটে ব্যথা হয় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বিভিন্ন কারণে পেট ব্যাথা হয়। তবে সব ব্যথা মারাত্মক নয়।

পেটে টিউমার হলে পেট ব্যথার সঙ্গে পেটে চাকাজাতীয় পদার্থের অনুভূতি হতে পারে। মনে হবে পেটের কোথাও যেন চাকা বা শক্ত কোনো পদার্থ তৈরি হয়েছে। এসব চাকা স্থির থাকতে বা নড়াচড়া করতে পারে। এছাড়াও পেটব্যথার সঙ্গে মলে রক্ত, কালো মল, প্রস্রাবে রক্ত, বমিবমি ভাব হওয়া টিউমারে লক্ষণ। এধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। 

৩. জরায়ু টিউমার চেনার উপায়

জরায়ুতে সৃষ্ট টিউমারের অপর নাম হলো ইউটেরিন ফাইব্রয়েড। সংক্ষেপে যাকে ফাইব্রয়েড বলা হয়।

জরায়ু টিউমার বা ফাইব্রয়েড টিউমারের তেমন কোন চেনার উপায় নাই। রোগী নিজে বুঝতেই পারেন না তিনি ফাইব্রয়েড সমস্যায় ভুগছেন।গবেষণার ফলাফল বলে প্রতি তিনজন আক্রান্তের মধ্যে এক জনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে কিছু  লক্ষণ প্রকাশ পেলে দেরী না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।শুধু বিবাহিত মহিলা না অবিবাহিত মহিলারাও আক্রান্ত হতে পারেন জরায়ু টিউমারে।

তেমন কোন লক্ষণ না থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাসিকের পরিমাণ বেশি হয়, মাসিকে ব্যথা হয়,  তলপেটে চাকা অনুভূত হওয়া। এছাড়াও তলপেটে ব্যাথা, মুত্রথলী অন্ত্রে চাপ,সহবাসকালীন সময়ে ব্যথা হতে পারে। এ লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪. ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়

স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে কিংবা অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে স্তনে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়।

অধিকাংশ সময়ে স্তন টিউমার প্রথমে এক বা একাধিক ছোট আকারে চাকা আকারে দেখা দেয়। অনেকে স্তনের বোঁটায় ঘা, ক্ষত বা বোঁটার চারপাশে কালো অংশে চুলকানির লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও কারো স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধের মত সাদা রস নিঃসৃত হতে থাকে। স্তন লাল রং হয়ে গেছে এমনও হতে পারে।

বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়।এমনকি অবিবাহিতারাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।

অনেকেই মনে করেন শুধু  নারীদের স্তন টিউমার হয়।নারীদের পাশাপাশি  পুরুষরাও সমানভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পুরুষদেরও কিছু স্তন টিউমার হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। স্তনে ব্যথাহীন কোনো মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া। স্তনের নিপল দিয়ে তরল পদার্থ বের হওয়া। স্তনের আশেপাশে গর্তের  হওয়া।

৫. মাথায় টিউমার চেনার উপায়

 সাধারণত মাথার টিউমারকেই ব্রেন টিউমার বলা হয়। যেকোনো বয়সে ব্রেন টিউমার হতে পারে।

মাথায় যেকোন টিউমার প্রধান লক্ষণ হল মাথাব্যথা।এই মাথাব্যথা রোগীর কর্মকাণ্ডের সাথে কমতে এবং বাড়তে থাকে। অর্থাৎ রোগী বিশ্রামে থাকলে মাথাব্যথা কম থাকে। আর কোন কাজ করলে মাথাব্যথা বাড়ে। অনেক সময় রাতে এবং  ভোরে মাথাব্যথাটা বেশি হয়।

পাশাপাশি রোগীর বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে যেতে শুরু করে।এছাড়াও রোগীর খিঁচুনি হতে পারে। শরীরের যেকোনো একদিক দুর্বল বা অবশ হয়ে যেতে পারে।

কী খেলে টিউমার ভালো হয়?

টিউমার চেনার উপায়ের পর কীভাবে টিউমার ভালো হয় সেটা জেনে রাখা ভালো। খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সাথে টিউমারেরে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ধূমপান বা মদ্যপানের সাথে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং  লিভারের টিউমারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনই ভাবে  মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি,মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল ইত্যাদি খাবারের সাথেও টিউমারের যোগসূত্র রয়েছে। যে খাবারগুলো খেলে টিউমার ভালো হয় তা নিচে বলা হলোঃ

রসুন

রসুনের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হচ্ছে এটি শরীরের বিভিন্ন ধরনের টিউমার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। রসুনে থাকা আন্টি-বাক্টোরিয়াল শরীরে টিউমার  কোষের ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। 

টমেটো

যারা নিয়মিতভাবে টমেটোর সস খান তাদের প্রস্টেট টিউমার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে আসে। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন যা একটি শক্তিশালি অ্যান্টিঅক্সিডে

হলুদে থাকা ‘কারকিউমিন’ প্রদাহজনিত সমস্যা বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব দেহের টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে ভেতর থেকে টিউমার প্রতিরোধী করে তোলে।। শরীরকে টিউমার প্রতিরোধী করতে চাইলে কাঁচা হলুদ  অথবা মাছ ও মাংসের তরকারিতে প্রয়োজন মতো হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।

মাছ

মাছে রয়েছে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড -এন্টিইনফ্ল্যামেটরি যা এন্টিটিউমার  বৈশিষ্ট্য সম্পন্। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষাক্ততা কমাতে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ভূমিকা রাখে। তৈলাক্ত মাছ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

টিউমার প্রতিরোধের উপায়

টিউমার চেনার উপায় থেকে টিউমার প্রতিরোধ নিয়ম জানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন টিউমার থেকে বাঁচার উপায় নেই বললেই চলে। সহজ কিছু উপায় মেনে চললে টিউমারের ঝুঁকি কমানো যায়। টিউমার প্রতিরোধে আপনি নিতে পারেন কিছু পদক্ষেপ। 

আসুন জেনে নিই টিউমার প্রতিরোধের ৭ উপায়–

১. টিউমার প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে ধূমপান। ধূমপানের সঙ্গে টিউমার অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বিশ্বে যত ধরনের টিউমার  আছে, তারমধ্যে ৯০ শতাংশ  ধূমপানের কারণে হয়। 

২. আমরা অনেকেই জানি যে, সূর্যের আলো শরীরে ভিটামিন ডি সঞ্চার হয় ও মেলানিনের সৃষ্টি হয়, যা আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। 

তবে সূর্যের তাপ নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের স্বাস্থ্য ও ত্বকের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা থেকে হয় স্কিনে টিউমার। তাই সূর্যের তাপ থেকে শরীরকে বাঁচিয়ে চলুন। 

৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শরীরের নানা রোগের পেছনে খাদ্যাভ্যাসের প্রত্যক্ষ জড়িত রয়েছে। অনিয়মিত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠে।

৪. অবাঞ্চিত যৌন সম্পর্ক ছড়াতে পারে টিউমার। সুতরাং সুরক্ষিত উপায়ে সহবাস করুন।

৫. ব্যায়াম টিউমারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরের হরমোন প্রবাহ, কোষ বৃদ্ধির হার, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা স্বাভাবিক থাকে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সুতরাং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীর চর্চার পেছনে সময় দেন।

৬. সবসময় কম আঁচে খাবার রান্না করুন। গবেষকরা বলেন, যারা অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবারে অভ্যস্ত, তাদের বেশিরভাগেই অগ্ন্যাশয়, কোলোরেক্টাল ও প্রোস্টেট টিউমারের ঝুঁকি থাকে।

৭. পরিবারের সদস্যদের পুরনো কোনো রোগ আছে কিনা সেই সম্বন্ধে আগে জানুন। প্রতি ৩ মাসে অন্তত একবার হেলথ চেকআপ করান।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

শেষকথা

টিউমার চেনার উপায় না জানা থাকলে টিউমার অনেকক্ষেত্রে ক্যান্সারে পরিণত হয়ে প্রাণঘাতি হতে পারে। তাই টিউমার চেনার পাশাপাশি ভালো করার উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। আমরা এখানে টিউমারের ব্যাপারে অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করেছি। যেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আপনি টিউমারের ঝুঁকি অনেকটা এড়াতে পারবেন বলে আশা করি।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

1 thought on “৫টি ভয়ংকর টিউমার চেনার উপায় ও প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানুন!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top