টিবি রোগ কি তা আমরা হয়তো জানি না। তবে যক্ষা নামটা আমরা অনেকেই শুনেছি। যক্ষারই আরেক নাম হলো টিবি রোগ।
একসময় এই রোগটার কথা শুনলেই মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করতো। কারণ তখনকার সময় এই রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা ছিলোনা। কিন্তু বর্তমানে সময় বদলেছে। আজকে আমরা কথা বলবো টিবি রোগ রোগ নিয়ে।
ভিডিওঃ জেনে নিন বেরিবেরি রোগ কি? কেন হয়, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা | Bangla Health Tips
টিবি রোগ কি ?
মূলত টিবি রোগ হচ্ছে বায়ুবাহিত সংক্রামক একটি রোগ। মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) নামক জীবাণু এই রোগটির জন্য দায়ী। এই রোগের জীবাণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। একসময় সুস্থ মানুষের ফুসফুসে বাসা বাঁধে। যেকোনো সময় যেকোনো বয়সের মানুষ টিবি রোগয় আক্রান্ত হতে পারেন।
টিবি রোগ কিভাবে ছড়ায়?
সাধারণত টিবি রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির কফ ,হাঁচি কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়। টিবি রোগর জীবাণু কয়েকঘন্টা বাতাসে বেঁচে থাকতে পারে। এইভাবে সুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে এই রোগটি ছড়িয়ে যায়।
টিবি রোগ রোগীর সংস্পর্শে থাকলে সুস্থ ব্যক্তির টিবি রোগ হতে পারে। তাছাড়া দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে পান না করলেও টিবি রোগ হতে পারে। দীর্ঘদিন অপরিষ্কার জায়গায় বসবাস করলেও টিবি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
টিবি রোগ কি শুধু ফুসফুসের অসুখ?
অনেকেই মনে করেন টিবি রোগ শুধুমাত্র ফুসফুসের অসুখ। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। টিবি রোগ ফুসফুস ছাড়াও দেহের যেকোনো জায়গা যেমন -পরিপাকতন্ত্র, পাকস্থলি, টনসিল, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ,মেরুদন্ড এমনকি মস্তিষ্কেও হতে পারে। তবে ফুসফুসে টিবি রোগ হলে সেটি তাড়াতাড়ি শরীরে ছড়িয়ে পরে।
টিবি রোগ রোগের লক্ষণগুলো কি কি ?
টিবি রোগের প্রধান কিছু লক্ষণ রয়েছে। যার দ্বারা এই রোগটি সহজেই শনাক্ত করা যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক টিবি রোগের লক্ষণগুলো।
- তিনসপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকবে। কোনো ওষুধেই কাশি সারবে না।
- কাশির সাথে কফ আসবে। কফের সাথে অনেকসময় রক্ত আসবে।
- রোগীর ওজন কমে যাবে।
- রোগী দুর্বল অনুভব করবে।
- রাতে হালকা জ্বর এবং ঘাম হবে।
- ক্ষুধামন্দা দেখা দিবে।
- রোগীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।
এগুলো সব ফুসফুসের টিবি রোগের উপস্বর্গ। তাই উপরের এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে মোটেও অবহেলা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কাদের টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূর্বল ব্যক্তি এবং বয়স্কদের টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও আরো অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- যারা অপুষ্টিতে ভুগছেন।
- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
- বয়স্ক ব্যক্তিদের।
- যারা টিবি রোগ রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন।
- মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের।
টিবি রোগ রোগের কি চিকিৎসা আছে ?
একটাসময় একটা প্রবাদ প্রচলিত ছিল -যার হয় টিবি রোগ,তার নাই রক্ষা। কিন্তু এখন এই প্রবাদের কোনো মূল্য নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান বর্তমানে অনেক উন্নত।
এখন টিবি রোগর সঠিক চিকিৎসা এবং ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। সুতরাং ,ভয় নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মত নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন করলে টিবি রোগ ভালো হয়।
যদিও চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু সুস্থ হতে হলে অবশ্যই ওষুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। অনেক রোগী আছেন ওষুধ খাওয়ার পর কিছুদিন ভালো বোধ করলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এমনটা মোটেও করা যাবে না। এতে করে টিবি রোগ রোগ আবার ফিরে আসতে পারে এবং আগের ওষুধ কোনো কাজে আসবে না।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
টিবি রোগ রোগ প্রতিরোধে করণীয় কি ?
কার্যত টিবি রোগ প্রতিরোধের উপায় অবশ্যই আছে। সুষ্ঠু চিকিৎসা ও সাবধানতার মাধ্যমে টিবি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- টিবি রোগ রোগীকে জনসমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে।
- টিবি রোগ রোগীর কফ, থুতু মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা ব্যবহৃত টিস্যু কিংবা রুমাল পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- টিবি রোগর লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- হাঁচি কাশির সময় রুমাল কিংবা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
- টিবি রোগর রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন বিছানার চাদর ,বালিশ ইত্যাদি প্রতিদিন সূর্যের আলোতে রাখতে হবে। এতে করে টিবি রোগর জীবাণু মরে যাবে।
- জন্মের পর শিশুকে বিসিজি টিকা দিতে হবে। এতে টিবি রোগয় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
- টিবি রোগ রোগীকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। এতে করে রোগের বিস্তার কম ঘটবে।
- টিবি রোগ রোগীকে আলো বাতাস সম্পন্ন ঘরে রাখতে হবে।
টিবি রোগ এখন আর প্রাণঘাতী কোনো রোগ নয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে টিবি রোগও ভালো হয়। টিবি রোগ রোগ নির্মূল করতে হলে আমাদের এই বিষয় সচেতন হতে হবে।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!