ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম জেনে রাখা আমাদের দেশের বর্তমান সময়ে আবহাওয়া অনুযায়ী জরুরি। আবহাওয়ার কারণেই এখন এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। মূলত সর্দি কাশি এক প্রকার সংক্রমিত রোগ, যা ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে রাইনোভাইরাস শ্বাসনালির উপরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়,শ্বাসনালীর উপরের অংশে রয়েছে নাক,গলা, সাইনাস ও স্বরযন্ত্র।
সাধারণত সর্দির লক্ষ্মণগুলো প্রকাশ পায় ভাইরাস সংক্রমণের দুই দিন পর থেকেই। তাই আমাদের প্রয়োজন অনুসারে এই লেখনীতে ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম ঘরোয়া ও এলোপ্যাথিক উভয় সম্পর্কে চলুন জেনে নেই।
Table of Contents
ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম; এলোপ্যাথিক
সাধারণত ঠান্ডা বা সর্দি হলে কাশি দেখা দেয়। সর্দি-কাশি কমানোর ট্যাবলেট গুলো হলো:
- হিস্টাসিন (Histacin)
- হিস্টালেক্স (Histalex)
- হিস্টামিন (Histamin)
- হিস্টানল (Histanol)
- হিস্টিন (Histin)
ক্যাপসুল এর নাম
- অ্যামব্রোক্স এস আর ৭৫ মিঃগাঃ (Ambrox SR 75mg)
- অ্যাকোরেক্স ৩০ মিঃগ্রাঃ (Acorex 30mg)
- অ্যামবেট ৭৫ মিঃগ্রাঃ (Ambeet 75mg)
- অ্যামবোজিন এস আর ৭৫ মিঃগ্রাঃ (Ambozin SR 75mg)
- অ্যামব্রোক্সল এস আর ৭৫ মিঃগ্রাঃ (Ambroxol SR 75mg)
ঠান্ডা- কাশির সিরাপের নাম
- অ্যামব্রোক্স (Ambrox)
- এডোভাস (Adovas)
- তুসকা প্লাস (Tusca Plus)
- বক্সোল (Boxol)
- এমভোলিট (Ambolit)
- ডেক্সোপোটিন (Dexpoten)
- সুডোকফ (Sudocof)
- ওকফ (Ocof)
ঠান্ডা-কাশি দেখা দিলেই সাথে সাথে ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কখনো কখনো ঠান্ডার আসল কারণ না জানা থাকায় আরো মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
সর্দিকালীন শিশুদের সিরাপ:
- এডোলেফ (adolef)
- রিমোকফ (remocof)
- এডোভাস (adovas)
- ই-কফ (e-cof)
- তুসকা (tusca)
- এবেক্স (abex)
সর্দি/কাশির চূড়ান্ত লক্ষণ জেনে নেওয়া যাক:
লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করলে দ্রুত আরোগ্য পাওয়া যায়। তাই চিকিৎসক গণ রোগের সিমটম অনুযায়ী ঔষধ পেসক্রাইব করেন।
- বার বার হাঁচি আসা,মাঝে মাঝে বিকট শব্দে।
- কফ জমে নাক বন্ধ হয়ে থাকা।
- চোখ, গাল, এবং কপালে চাপ বা তীব্র ব্যথা অনুভব হওয়া।
- নাক দিয়ে পানি পড়া।
- সর্দি জমে নাক ভারি ভারি লাগা।
- কোনকিছুর গন্ধ নাকে না লাগা,নাক অনুভূতিহীন হওয়া।
- গলায় বিরক্তিকর উচ কুচ লাগলে।
- ঘন ঘন কাশি
- দীর্ঘক্ষণ গলাব্যথা
- হাচি ও নাক দিয়ে পানি পরা
- মাথাব্যথা
- দেহের ভিতর জ্বর অনুভূত হওয়া
সর্দি কাশি উপশমের ঘরোয়া পদ্ধতি
প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই সর্দি কাশি দ্রুত নিরাময় করতে পারবেন। এখানে আমরা কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো যেগুলো অনুসরণ করে সর্দির লক্ষণগুলি কমানো যাবে অর্থাৎ সর্দি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
তাই আসুন সর্দি কাশি উপশমের ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।
মধু:
প্রাকৃতিক খাটি মধুতে অ্যন্টি ইনফ্লামেটরি গুন রয়েছে। তাই মধু পান করলে সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে, ১ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মধু আরো ভালো ফলদায়ক হয়।
আদা চা:
গলায় খুসখুসে ভাব দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন আদা চা। ২ কাপ জলে কিছুটা আদার কুচি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলেই গলার খুসখুসে ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আদা এবং মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া কমায়। সেই সাথে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি:
সর্দি কমাতে ভিটামিন সি এর বেশ ভালো কার্যকারিতা রয়েছে। ভিটামিন সি গ্রহনে সর্দিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু সেটা স্পষ্ট নয়। তবে ভিটামিন সি সর্দির ফলে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন: মাথাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পরা, গলা ব্যথা ইত্যাদি কমিয়ে দেয় এবং সর্দির সময়কালও কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ ভিটামিন সি সর্দি হতে দ্রুত সুস্থ্য হতে বেশ ভালো সাহায্য করে।
গাজর:
গাজরকে বলা হয় সবসময়ের সুপার ফুড। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত গাজর খাওয়ার কারণেই চট করে সর্দি-কাশির মতো রোগগুলো শরীরকে কাবু করতে পারে না। তবে ঠান্ডা লাগলে কাঁচা গাজর না খেয়ে সেদ্ধ করেই খাওয়াই ভালো।
জিংক:
সর্দি কমাতে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি জিংক যুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। ভিটামিন সি এর মতো জিংকও সর্দি কমাতে এবং সর্দি হতে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করে থাকে।
খাদ্য:
ভিটামিন সি ও জিংকের পাশাপাশি আমাদের প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার বেশি পরিমানে খেতে হবে। ভিটামিন সি, জিংক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সর্দি দ্রুত কমানোর পাশাপাশি শরীরে বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
বিশ্রাম:
সর্দি, কাশি ও জ্বর উপশমে আমাদের অতিরিক্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। সেইসাথে তরল খাবার ও পানি বেশি বেশি পান করতে হবে।
সর্দি থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হতে হলে শরীরকে সবসময় হাইড্রেড রাখতে হবে। এজন্য আমাদের গরম চা,পানি ও অন্যান্য তরল পদার্থ বেশি পরিমাণে পান করতে হবে।
ক্ষতিকর পানীয় বর্জন:
ঠান্ডা কাশি অবস্থায় ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় বর্জন করতে হবে, কারন এগুলো শরীরকে দ্রুত ডিহাইড্রেড করে ফেলে। এছাড়াও বিভিন্ন কোল্ড ড্রিংকস এবং আইসক্রিম এড়িয়ে চলা উচিত।
বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রনে স্যালাইন:
লবণ,বেকিং সোডা ও গরম পানি দিয়ে হট স্যালাইন তৈরি করে উক্ত স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দ্রুত সর্দির উপসর্গগুলো কমানো যায়। এই স্যালাইন ভীষণ তাড়াতাড়ি নাকের জ্যাম দূর করে। এর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
হট স্যালাইন বানানোর পদ্ধতি:
১/৪ চা চামচ লবণ ও ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা ৮ আউন্স উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে হট স্যালাইন তৈরি করতে হবে। নিজ হাতে তৈরী এই হট স্যালাইন দিয়ে নাকের ভিতরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করলে নাকের প্রতিবন্ধকতা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
মনে রাখবেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে ভালো ফলাফল পাওয়া না গেলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যতদ্রুত সম্ভব।
সর্দি কাশির ঔষধ গ্রহনে নির্দেশনা:
- ওষুধ গ্রহনের পুর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে, ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিৎ নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যাবহারের পূর্বে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- ডাক্তার আপনার সর্দির উপসর্গগুলো অনুযায়ী চিকিৎসা দেন। হাঁচি,কাশি,সর্দি,গলা ব্যথা,নাকের প্রতিবন্ধকতা, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি কমাতে অালাদা ঔষধ পেসক্রাইব করে থাকেন।
- উদাহরণ স্বরূপ মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, হাঁচি ও নাক দিয়ে পানি পরা বন্ধের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, নাকের প্রতিবন্ধকতার জন্য অক্সিমেটাজোলিন হাইড্রোক্লোরাইড ন্যাজাল ড্রপ ইত্যাদি।
- মনে রাখবেন যে, সর্দি কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণ, কানের সংক্রমণ, সাইনাসের সংক্রমণ সহ অন্যান্য জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে
সর্দি কখন ভয়াবহ?
সর্দির কাশির সাথে নিচের লক্ষণগুলি থাকলে অবশ্যই যতদ্রুত সম্ভব একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
১.সর্দির লক্ষণগুলি ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
২.১০১.৩°F বা তার বেশি জ্বর থাকলে।
৩.বমি হলে।
৪.সাইনাসে ব্যথা হলে।
৫.বুকে ব্যথা হলে।
৬.শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হলে।
এসময় হাঁচি কাশির এলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে যাতে সংক্রমণ পরিবার ও আশেপাশে না ছড়ায়।
শেষ কথা
ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম যদিও জানলেন তবে সর্দি-কাশি ভাইরাস জনিত রোগ তাই এর কোন ভালো প্রতিকার নেই। এই রোগ ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করে কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না।
৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু মনে রাখবেন এই রোগের লক্ষণগুলি একটু দীর্ঘস্থায়ী হয়, প্রায় ২১ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!