ডায়রিয়া হলে করণীয় কি

ডায়রিয়া হলে করণীয় কি; জানুন কার্যকরি সমাধান!

ভূমিকা: আমাদের দেশে ডায়রিয়া খুব সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। সাধারণভাবে বারবার পায়খানা হলে এবং পায়খানা পানির মতো তরল হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। সাধারণত জীবাণু পেটে ঢোকার কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়া থেকে শুরু হয় মারাত্মক পানিশূন্যতা হয়।

পানিশূন্যতা বেশি হলে তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে ডায়রিয়া হলে করণীয় কি তা নিয়ে থাকছে আজকের আর্টিকেলে। এছাড়াও আরো থাকছে শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে আপনি কী কী করতে পারেন। 

ডায়রিয়া হলে করণীয় কি

সাধারণ অবস্থায় ডায়রিয়া হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যেতে পারে। শরীর খারাপের সময়টুকু বিশ্রামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানীয় পান করতে হয়। এবং খাবারের সময় সতর্ক থাকতে হয়। আসুন জেনে নিই ডায়রিয়া হলে করণীয় কি 

  • ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। তাই স্যালাইনের পাশাপাশি বার বার বেশি বেশি তরল খাবার খাবেন। যেমন : ভাতের মাড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস, স্যুপ, লবণ-গুড়ের শরবতসহ যেকোনো তরল খাবার ডায়রিয়া রোগীর জন্য ভালো।
  • তরল জাতীয় খাবারের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে।
  • যে খাবারগুলো ডায়রিয়া অবস্থা আরও খারাপ করে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, কাঁচা ফল,মশলাদার খাবার, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়।
  • যতবার পাতলা পায়খানা বা বমি হবে ততোবারই সমপরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।
  • প্রতিবার পাতলা পায়খানা করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  • চিকিৎসক এর পরামর্শ ব্যতীত কোন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না (যেটা অনেকেই করে থাকেন)।
  • ডায়রিয়া ভাল হয়ে গেলেও পরবর্তী ১৫ দিন বাড়তি তরল খাবার খেতে হবে।
  • পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, প্রসাবের পরিমাণ কমে যায়, অতিরিক্ত পানি পিপাসা লাগে, মুখ শুকিয়ে যায় এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ডায়রিয়ার লক্ষণ

সাধারণত এক থেকে দুই বার পাতলা পায়খানা করতে পারে। তবে এটি ডায়রিয়া নয়। যদি দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার পাতলা পায়খানা করে তখনই তাকে আমরা ডায়রিয়া বলব। ডায়রিয়া হলে করণীয় কি সেটা জানার পূর্বে আমাদের অবশ্যই লক্ষণের ব্যাপারে জানতে হবে। নাহলে সঠিক সময়ে সঠিক করণীয় কাজ করতে পারবো না।আসুন জেনে নিই ডায়রিয়া লক্ষণ

  • হঠাৎ করে কিছুক্ষণ পরপর মলত্যাগের জন্য প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হওয়া। 
  • পায়খানা লাগলে দ্রুত টয়লেটে যাওয়া বা অপেক্ষা করতে না পারা।
  • পায়খানা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা। অনেকসময় পোশাকে পায়খানা লেগে যেতে পারে।
  • তলপেটে কাঁমড় বা তীব্র ব্যাথা অনুভব করা। এছাড়াও পেটে ব্যথা, পেটে চাপ,পেট ফোলা অনুভূত হওয়া।
  • বমি-বমি ভাব থাকা। অনেক সময় বমি-বমি ভাব নাও থাকতে পারে।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।

ডায়রিয়ার গুরুতর জটিলতা হল পানিশূন্যতা। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরলের একটি বিশাল অংশ বেরিয়ে যায়। এর ফলেই পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো প্রচণ্ড ক্লান্তি, শুকনো শ্লেষ্মা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, প্রস্রাব হ্রাস এবং শুষ্ক মুখ। ডায়রিয়ার পাশাপাশি পানিশূন্যতা লক্ষণ দেখা দিলে দেরী না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়

ডায়রিয়া হলে করণীয় কি তা জানার পাশাপাশি আমাদের প্রতিরোধ ব্যাপারেও জানতে হবে। যেকোনো কিছু প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান থাকলে সেটা থেকে দূরে থাকা যায়। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী মেনে চলুন:

  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
  • অধিক পরিমাণে পানি ও লবণ গ্রহণ (বিশেষত রমজান মাসে অন্তত ০২ লিটার পানি পান) করুন।
  • অত্যধিক গরম পরিবেশে কাজ না করা। যদি করতে হয়, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
  • আবদ্ধ পরিবেশে কাজ না করা। কাজ করার জায়গায় বাতাস চলাচল করতে পারে এরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা (যেমন- পায়খানা থেকে বের হয়ে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিয়মিত নখ কাটা, পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা এবং নিয়মিত গোসল করা)।
  • বাসি-পচা খাবার, মাছি বসা খাবার এবং বাইরের খোলা খাবার, শরবত বা ফলের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • রান্না করা খাবার বেশিক্ষণ বাইরে রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং খাবার খেয়ে নিন গরম গরম।
  • নিরাপদ পানি পান করুন।

সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ডায়রিয়া ও আমাশয় এর হামদর্দের ওষুধ কিনুন আমাদের শপ থেকে!

শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয়

শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ততটা শক্তিশালী নয়। এজন্য শিশুদের ডায়রিয়া মতো পেটের রোগের প্রবণতা বেশি থাকে। তাই শিশুর ডায়রিয়া খুব সাধারন সমস্যা তবে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে মারাত্বক হতে পারে। আসুন জেনে নিই শিশুর ডায়রিয়া হলে করণীয়

১. ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ায় পানিশূন্য হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ফলে শিশুকে বারবার তরল খাবার দিতে হবে যেমন: ডাবের পানি, চিড়ার পানি, ভাতের মাড়, ফলের জুস, লবণ-গুড়ের শরবত ইত্যাদি।

২. তরল খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর শিশুকে স্যালাইন খাওতে হবে। শিশুর ওরস্যালাইন এর পরিমান হচ্ছে, প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২৪ মাসের কম বয়সী শিশুর জন্য ৫০-১০০ মিলি, ২-১০ বছর বয়সী ‍শিশুর জন্য ১০০-২০০ মিলি এবং ১০ বছর এর অধিক বয়সীদের জন্য চাহিদা অনুযায়ী।

৩. যেসব শিশু বুকের দুধ খায় তাদেরকে বারবার বুকের দুধ দিতে হবে।

৪. শিশু যদি বমি করে তাহলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার খাওয়াতে হবে।

৫. তাজা ফলের রস দিলে পটাশিয়াম এর ঘাটতি পূরণ হবে।

৬. ডায়রিয়া ভাল হয়ে গেলেও পরবর্তী ২ সপ্তাহ শিশুকে এরকমভাবে বাড়তি খাবার প্রতিদিন দিতে হবে।

৭. চিকিৎসক এর পরামর্শ ব্যতীত কোন অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোন ওষুধ শিশুকে খাওয়ানো যাবে না (যেটা অনেক বাবা মা করে থাকেন)।

রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে বা বেশি খারাপ হলে, বেশি মাত্রায় বমি হলে, মুখে খেতে না পারলে, প্রচণ্ড পেটে ব্যথা ও পায়খানার সাথে রক্ত গেলে দ্রুত হাসাপাতালে নিতে হবে।

খাবার স্যালাইন তৈরি ও খাবার নিয়ম

ডায়রিয়া হলে রোগিকে দ্রুত সুস্থ করতে ভূমিকা রাখে এই খাবার স্যালাইন। ডায়রিয়ার সাথে যে পানি বের হয়ে যায় তার ঘাটতি মেটায় খাবার স্যালাইন। আসুন জেনে নিই খাবার স্যালাইন তৈরি ও খাবার নিয়ম- 

এছাড়াও হামদর্দ ও আর এস – Hamdard O R S খাওয়ার স্যালাইন (সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) কিনতে পারেন আমাদের শপ থেকে!

  • বর্তমানে খাওয়ার স্যালাইন প্যাকেটে তৈরি অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকেটের নির্দেশ অনুসারে আধা কেজি পরিষ্কার/ ফুটানো ঠাণ্ডা খাওয়ার পানিতে এক প্যাকেটের সবটুকু গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করা যায়। স্যালাইন বানানোর পর ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এরপর প্রয়োজন হলে পুনরায় স্যালাইন বানাতে হবে।
  • স্যালাইন বানানোর পূর্বে সঠিক পদ্ধতিতে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে স্যালাইন তৈরি করতে হবে। 
  • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২০০ মি.লি. বা এক গ্লাসের মতো খাবার স্যালাইন খাবেন।
  • বমি হলেও স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। অনেক সময় স্যালাইন খাওয়া মাত্র বমি হতে পারে। এক্ষেত্রে অল্প অল্প পরিমাণে স্যালাইন খেতে হবে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে চামচ দিয়ে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে শিশুকে শোয়ানো অবস্থায় স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে কোলে নিয়ে অথবা মাথা কিছুটা উচু করে খাওয়াতে হবে।
  • যদি স্যালাইন কেনা না থাকে, তাহলে একটি পরিষ্কার পাত্রে আধাকেজি পরিষ্কার বা ফুটানো ঠাণ্ডা খাওয়ার পানির সাথে এক চিমটি লবণ এবং একমুঠ গুড় অথবা চিনি পরিষ্কার চামচ দিয়ে মিশাতে হবে। বাড়িতে বানানো এ স্যালাইন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যায়। এরপর প্রয়োজন হলে পুনরায় বানাতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসায় এটা ডায়রিয়া রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে।
  • স্যালাইন খাওয়ানোর পরও যদি রোগীর অবস্থা খারাপ হয়, যেমন পেট ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, শ্বাস কষ্ট বা হাত-পা খিচুনি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

উপসংহার

ডায়রিয়া একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক ব্যাধি যেকোনো সময় যে কারোর হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে ঘাবড়ে না গিয়ে ডায়রিয়া হলে করণীয় কি এগুলো সঠিক ভাবে পালন করলে ঘরে বসে ডায়রিয়া সমস্যা থেকে সেরে উঠা সম্ভব।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top