ডায়াবেটিস কমানোর উপায় আমরা অনেকেই জানিনা। এই নিবন্ধে ডায়াবেটিস কি? এর শ্রেনীবিভাগ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা সহ বিস্তারিত গভীরভাবে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নি ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সহ বিস্তারিতঃ
ডায়াবেটিসের (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) মেডিসিন কিনুন আমাদের শপ থেকে!
Table of Contents
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ডায়াবেটিস কি ?
*ডায়াবেটিস শব্দের অর্থ হচ্ছে বহুমুত্র। অর্থাৎ ঘন ঘন প্রসাব করা। ডায়াবেটিস রোগিদের একটি সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে পলিইউরিয়া বা ঘন ঘন প্রসাব করা, এ থেকেই ডায়াবেটিস নামের উৎপত্তি।
ডায়াবেটিস হলে কি করণীয়, ডায়াবেটিস কমানোর উপায় ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন
ডায়াবেটিস কাকে বলে?
মূলত ডায়াবেটিস বলতে আমরা সাধারণত ডায়াবেটিস মেলিটাস কে বুঝি। মূলত ডায়াবেটিস হল আমাদের শরীরের এক ধরনের মেটাবলিক রোগ। ডায়াবেটিস হলে আমাদের রক্তে গ্লূকোজ বা সুগারের পরিমাণ প্রয়োজনীয় লেভেলের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে যায়, রক্তে গ্লুকোজ এর স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেশি হলে সাধারণত ডায়াবেটিস মেলিটাস বলা হয়। মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন, ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, সেরেবোভাস্কুলার ডিজিস এবং কিডনি রোগ সহ অনেক রোগের জন্যই ডায়াবেটিস প্রধানত দায়ী।
ডায়াবেটিস এর শ্রেনিবিভাগ:
মেডিকেল সাইন্স এর ভাষায় ডায়বেটিস দুই প্রকার।
১) ডায়াবেটিস মেলিটাস
২) ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাস
ডায়াবেটিস মেলিটাস কে আবার চারভাগে ভাগ করা হয়েছে:
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলিটাস বা ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলিটাস
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাস বা ইনসুলিন ইনডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলিটাস
৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস মেলিটাস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস
৪. সেকেন্ডারি ডায়াবেটিস মেলিটাস
টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলিটাস বা ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস মেলিটাস কে আমরা সাধারণত ডায়াবেটিস হিসেবে জানি। বর্তমান বিশ্বে এটি সবচেয়ে কমন ডায়াবেটিস। এর পরে দ্বিতীয় কমন ডায়াবেটিস হচ্ছে টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাস।
টাইপ ১ ও টাইপ ২ এর পার্থক্য:
- মূলত টাইপ ১ ডায়াবেটিস এ ইনসুলিন তৈরি হয় না কিন্তু টাইপ ২ ডায়াবেটিস ইন্সুলিন তৈরি হয় তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম।
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত কম বয়সে হয় সাধারণত ৩৫ বয়সের আগে, অপরদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বেশি বয়সে হয় সাধারণত ৩৫ বছরের পর।
- *টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো যত সহজে বোঝা যায়, টাইপ ২ তে তত সহজে বোঝা যায়না।
- টাইপ ১ এ কিটোএসিডোসিস এর চান্স বেশি কিন্তু টাইপ ২ তে কম। টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি? প্রকৃতি, লক্ষণ ও নিরাময় জানুন!
- টাইপ ১ এর চিকিৎসায় অবশ্যই ইনসুলিন দিতে হবে, অপরদিকে টাইপ ২ তে শুধু মুখে খাওয়ার ঔষধ দিয়েও চিকিৎসা করা যায়,তবে মুখে খাবার ঔষধ ফেইল হলে ইনসুলিন অবশ্যই লাগবে।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ :
১) পলিইউরিয়া বা ঘন ঘন প্রসাব হওয়া
২) পলিফ্যাজিয়া বা অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
৩) অতিরিক্ত পানি পিপাসা লাগা
৪) ওজন কমে যাওয়া
৫) চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া
৬) শরীর দুর্বলতা অনুভব হতে পারে
৭) ঘন ঘন ইনফেকশন হতে পারে
৮) ঘা হলে দ্রুত শুকায় না।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো থাকলে আজই ডায়াবেটিস চেক করে নিন এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন। তবে ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে ।
যেভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে :
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো থাকলে, অন্য কোন রোগের সময় রক্তের সুগার চেক করে সুগার লেভেল বেশি পেলে বুঝে নিতে হবে আপনার ডায়াবেটিস রয়েছে।
কোন টেস্ট এ সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস বলা পজিটিভ বলা হবে? নিচের পরীক্ষা গুলো থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ডায়াবেটিস রয়েছে কিনা।
১)র্যান্ডম ব্লাড সুগার ১১ মিলিমোল/লিটার এর বেশি হলে ডায়াবেটিস পজিটিভ
২)ফাস্টিং ব্লাড সুগার ৭.১ মিলিমোল/লিটার এর বেশি হলে ডায়াবেটিস পজিটিভ
৩)এইচবিএ১সি – ৬.৫% এর বেশি হলে ডায়াবেটিস পজিটিভ।
৪। এছাড়াও বর্তমান বাজারে ডায়াবেটিস মাপার জন্য ডিজিটাল ডায়াবেটিস মেশিন পাওয়া যায়। এটি দিয়ে অল্প সময়ে ডায়াবেটিস এর মাত্রা নির্ধারণ করা যায়।
ডায়াবেটিস যদি চিকিৎসা না করেন, তাহলে কি হবে –
ডায়াবেটিস বলতে সাধারনত টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসকেই বুঝানো হয়, এ দুটো টাইপ আলাদা হলেও দুইটাই খারাপ ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিস কমানোর উপায় ও রয়েছে। তবে এগুলোর চিকিৎসা না করালে রোগী খুব দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে এবং নিচের রোগ গুলো হতে পারে…
- ডায়বেটিক কিটোএসিডোসি
- ডায়বেটিক ফুট আলসার এ সমস্যার জন্যে অনেক সময় ইদানিং অনেক ডায়বেটিস রোগীর পা কেটে ফেলতে হচ্ছে, প্রতিদিন শোয়ার পুর্বে পা চেক করবেন পায়ে কোন সমস্যা আছে কিনা।
- আরও ডায়বেটিক পলিনিউরোপ্যাথি এ সমস্যায় রোগীর হাত পা ঝিনঝিন, জ্বালাপোড়া করে,অনুভূতি কমে যায়।
- ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথি, এর কারনে চোখে ঝাপসা দেখবে রোগী।
- ডায়বেটিক নেপফ্রোপ্যাথি
- হার্ট এটাক
- স্ট্রোক ইত্যাদি হয়ে মৃত্যু ও হতে পারে।
ডায়াবেটিস হলে কি হয়:
টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস দুইটাতেই আপনার রক্তের গ্লূকোজের পরিমাণ বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তে ভেসে বেড়ায়, কিন্তু কোষে যেতে পারেনা, ইনসুলিন এর অভাবে। ডায়াবেটিস হলে গ্লূকোজ ও ইনসুলিনের এই ভারসাম্য লেভেল বজায় থাকে না।
কিছু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমান ইনসুলিন উৎপাদন হয় না বা উৎপাদিত হলেও ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা কিংবা কোন ইনসুলিন উৎপাদনই হয় না। ফলে ইনসুলিনের অভাবে গ্লূকোজ রক্ত থেকে কোষ ও টিস্যুতে প্রবেশ করতে পারে না। শরীরের টিস্যূগুলো গ্লুকোজ পায় না। ইনসুলিন কি? ইনসুলিনের পার্শপ্রতিক্রিয়া জেনে নিন!
কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে ?
আপনার ডায়াবেটিস হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হবে, অনেক বেশি পানির তৃষ্ণা লাগবে, শরীরে অল্পতেই খুব বেশি ক্লান্তি লাগবে, ইনফেকশন জনিত ক্ষত বা কাঁটাছিঁড়া, এবং ঘা ইত্যাদি সহজে ভাল হবে না। এছাড়া খুব সহজেই আপনার নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করলেই বুঝতে পারবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা।
সকালে খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপলে যদি ৫.৬ ( মিলি মোল প্রতি লিটারে) এর নিচে হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার ডায়াবেটিস নেই, আর যদি ৫.৬ – ৬.৯ এর মধ্যে হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার প্রিডায়াবেটিস আছে। আর খালি পেটে সুগার(গ্লুকোজ) যদি ৭.১ এর উপরে হয় এবং দুইটা আলাদা টেস্টেই ৭.১ বা এর উপর থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস রয়েছে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় :
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় যদি আপনি নে জেনে থাকেন তাহলে ভয়ের কিছু নেই। নিচের কয়েকটি রুলস ফলো করলে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেন।
১ । নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে (সপ্তাহে অন্তন্ত ৫ দিন) হাটতে হবে।
২। শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে ।
৩। পর্যাপ্ত পরিমান পানি খাবেন ।
৪। বিএমআই ও ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন ।
৫। ধূমপান ত্যাগ করুন ।
৬। অলসতা ত্যাগ করুন।
ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা :
১. ব্যায়াম করুন
২. খাদ্যভাস পরিবর্তন করুন, চিকিৎসক এর দেওয়া খাদ্যতালিকা মেনে চলুন
>> ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা এবং যে খাবার গুলো এড়ানো উচিত জেনে নিন!
৩. নিয়মিত ডায়াবেটিস এর ঔষধ সেবন করবেন
৪. ইন্সুলিন হল ডায়াবেটিস এর সবচেয়ে ভালো ঔষধ, ইঞ্জেকশন দিতে হয় বলে অনেকে এভয়েড করেন, তবে ডায়াবেটিস কমাতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে ইনসুলিন।
৫. চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিস এর ঔষধ বন্ধ করবেন না।
৬. প্রতি তিন মাস পর পর চেক আপ করুন।
>> ডায়াবেটিস নিয়ে রোজা রাখা যাবে কিনা এর প্রেক্টিকেল গাইড লাইন জেনে নিন
লেখাটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।
About writer:
*Dr Md Noman Islam Nirob*
MBBS, Rangpur Medical College.
Founder of Doctors Gang, Bangladesh.