ডিমের উপকারিতা – ডিম আমাদের অতি পরিচিত খাবারগুলোর মধ্যে একটি। তবে এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। কেউ বলেন এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় তো কেউ বলেন এটি পুষ্টি জোগায়। আজকে আমরা এই সকল বিতর্কের উত্তর জানবো।
আজকের আর্টিকেলটি থেকে আপনি ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
Table of Contents
ডিম খেলে কী হয়?
অনেকেই বলে থাকেন ডিম মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। আবার কেউ কেউ বলেন ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটি খাওয়া উচিত। বস্তুত এ নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দে জড়িত।
সাধারণত ডিম ও দুধকে আদর্শ পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ধরা হয়। ডিম শরীরের জন্য ক্ষতিকর এই মতবাদটি এখন পাল্টেছে।
চীনের একদল বিজ্ঞানী ডিমের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছেন যে, ডিম শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও হৃদযন্ত্রে কোনো বাঁধার সৃষ্টি করে না, বরং এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারি। এবং তারা প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বয়সভেদে ডিমের ১১টি উপকারিতা ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন
ডিমের উপকারিতা
ভিটামিন এ, বি, ডি এবং বি-টুয়েলভ, ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হলো ডিম। এছাড়াও এতে রয়েছে লুটেইন ও যিয়াস্যানথিন নামক উপাদান যা আপনার চোখের জ্যোতি তীক্ষ্ণ রাখে বুড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এছাড়াও ডিমের উপকারিতা অনেক। নীচে ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হলো।
ওজন কমায়:
এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সিদ্ধ ডিম ও অল্প একটু সবজি ২৭৪ ক্যালরি সরবরাহ করে। যা আপনার ওজন না বাড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার শক্তির যোগান দেয়। এটি প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস, যা শরীরের ওজন না বাড়িয়ে অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
বিপাকে সহায়তা:
উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে তাপমাত্রা দৃঢ় থাকায় সেগুলো বিপাকে সহায়তা করে। এবং ডিম নিশ্চিতভাবে প্রোটিনের একটি বড় উৎস। খাবার হজম করতে যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার হয় তা ডিম থেকে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়।
>> হাঁসের ডিমের উপকারিতা | পুষ্টিগুণ | ত্বকের যত্নে হাঁসের ডিম!
হাড় মজবুত করে:
ডিমের কুসুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। এটি শিশুর দাঁত ও হাড় মজবুত করে এবং স্বাভাবিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চুল, চোখ এবং নখের যত্নে উপকারী:
ডিমে বিদ্যমান লুটেইন ও জ্যাক্সেন্থিন চোখের ম্যাক্যুলার ক্ষতি রোধ করে। যা ছানি পড়ার সম্ভাবনা কমায়। প্রতিদিন একটি করে সিদ্ধ ডিম তাই চোখের যত্নে খুবই উপকারি।
এছাড়াও এতে উচ্চ মাত্রায় সালফার থাকায় তা নখ ও চুল ভালো রাখতে সহায়ক।
কোলিনের উৎস:
কোলিন এমন একটি উপাদান যা মস্তিষ্ক, স্নায়ু ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে ভূমিকা রাখে। এটি মস্তিষ্কের ঝিল্লি গঠন করে এবং স্নায়ু থেকে শরীরে সংবেদন পৌঁছাতে সাহায্য করে। এবং ডিমের কুসুমে বিদ্যমান রয়েছে এই কোলিন।
বয়সভেদে ডিমের উপকারিতা
ডিমের বেশকিছু উপকারিতা থাকলেও বয়সভেদে সেগুলোর কার্যকারিতা রয়েছে। কোন বয়সের মানুষের কী পরিমাণ ডিম খাওয়া উচিত তা নিচে আলোচনা করা হলো।
শিশু:
শিশুর শারীরিক বিকাশে ডিমের গুরুত্ব অপরীসিম। তবে একটি শিশুকে ১ বছর বয়সের পর থেকে ডিম খাওয়ানো উচিত।
ডিমে বিদ্যমান আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন, কোলিন, একটি শিশুর বেড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এক বছরের পর থেকে একটি শিশুকে প্রতিদিন ১টি করে ডিম খাওয়ানো যেতে পারে। এবং বয়স ৩ বছর পার হলে তাকে ২টি ডিম খাওয়ানো যায়।
কিশোর:
কিশোর কিশোরীদের পুষ্টির চাহিদা থাকে বেশি। এ সময় হরমোন ও এনজাইমের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। ফলে তাদের পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়।
ডিম সেই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। একজন টিনএজার এর খাদ্য তালিকায় দুটি করে ডিম রাখা শ্রেয়।
প্রাপ্তবয়স্ক:
এই সময়টা প্রতিটা মানুষের জীবনেই সবচেয়ে কঠিন। এ সময় বিভিন্ন কাজের চাপে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া হয় না। ফলে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়।
এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হরমোনের ইমব্যালেন্স এর সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় এনজাইমের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে ডিম খুবই কার্যকর।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে দুইটি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও আরো একটি ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।
পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি:
পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের শরীর ক্ষয় হতে শুরু করে। তাই এ সময় পুষ্টি চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ডিম চমৎকারভাবে এই ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম।
একজন বয়স্ক মানুষের কুসুমসহ একটি ডিম এবং কুসুম ছাড়া আরো দুটি ডিম খাওয়া আবশ্যক। ডিমে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান তাদের হাঁড় ক্ষয় এবং চোখের পানি পড়া রোধ করে ও ভিটামিন ডি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গর্ভবতী নারী:
ভ্রূণের সঠিক বিকাশের জন্য একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় অধিক পুষ্টি প্রয়োজন। গর্ভবস্থায় রক্তস্বল্পতা, ভ্রূণের গঠন ও মায়ের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ডিম যথেষ্ট সক্ষম।
তাই একজন গর্ভবতী মা যদি দিনে দুটি করে ডিম খান তাহলে তিনি তার পুষ্টি চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করতে পারবেন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!
পরিসমাপ্তি
অতএব প্রতিটি মানুষের জন্যই ডিমের উপকারিতা কার্যকর। তাই বয়সভেদে ডিমের কুসুমের অংশ এড়িয়ে খেলে দেহের ঘাটতি পূরণ করা যায়।
তাই ডিম সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা না রেখে খাদ্যতালিকায় এটি যোগ করুন। আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডিমে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে।