থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন!

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা না জানলেও এই ভেষজ উদ্ভিদটি আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত। আমাদের বাসা বাড়ির ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠা এই পাতার রয়েছে এমন কিছু ঔষুধি গুণ যা শুনলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। তাহলে চলুন থানকুনি পাতা সম্পর্কে জেনে নিই ঝটপট। 

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

মূলত থানকুনি এক ধরনের বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে প্রাচীনকাল থেকেই এই পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে রয়েছে নানা ভেষজ গুণ যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে অপরিহার্য। 

এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হলো। 

১. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে

থানকুনি পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকর। প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পেটের অন্যান্য সমস্যা দূরীকরণে থানকুনি পাতা খেতে পারেন।  

২. সর্দি কাশি ও জ্বর সারতে 

সর্দি, কাশি দূর করতে থানকুনি পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পুরনো কাশি অথবা শুকনো কাশি সারতে প্রতিদিন দুই চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক সপ্তাহ ধরে খেলে কাশি সেরে যায়। 

জ্বর হলে এক চা চামচ থানকুনি পাতার রস ও এক চা চামচ শিউলি পাতার রস সকালে খালি পেটে খেলে শরীরের দূর্বলতা দূর হয় এবং জ্বর সারে। 

৩. এসিডিটি দূর করে 

বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এসিডিটিতে ভুগছেন। এই সমস্যা ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এসিডিটির সমস্যা হতে মুক্তি পেতে প্রতিদিন নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করুন। 

৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতা খুবই কার্যকর। কোনো কেমিক্যালের পরিবর্তে থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রন, কালো দাগ, মেছতা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।  

৫. যৌবন ধরে রাখতে 

যৌবন ধরে রাখতে এবং তারুণ্য বজায় রাখতে থানকুনি পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত থানকুনি পাতা রাখলে দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন আপনিও। 

৬. ক্ষত নিরাময়ে

শরীরের যেকোনো ক্ষত নিরাময়ে থানকুনি পাতা বেশ উপকারী। কারণ এ পাতায় রয়েছে সাপোনিন্স নামক এক প্রকার উপাদান যা ক্ষত স্থানে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করে দেয় ফলে দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়। 

তাই যেকোনো ক্ষত সারতে ক্ষতস্থানে থানকুনি পাতা থেঁতো করে লাগিয়ে দিন। দ্রুত সুফল পাবেন। 

৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে 

থানকুনি পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভুমিকা রাখে। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন রক্তে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

৮. পেটের সমস্যা সমাধানে 

যেকোনো অসুখ পেট থেকে শুরু হয়। পেটের সমস্যা থাকলে সুষ্ঠু জীবনযাপনে বাধার সৃষ্টি হয়। তবে থানকুনি পাতা খেলে পেটের সকল সমস্যা দূর হয়। তাই পেটের সমস্যা দ্রুত নির্মূল করতে নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করুন। 

৯. চুল ঝরা রোধ করে

বর্তমানে চুল ঝরা একটি বিশেষ রোগ।  থানকুনি পাতায় রয়েছে চুল ঝরা রোধ করার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি থানকুনি পাতা খেলে চুলের স্ক্যাল্পে পুষ্টি জমে। ফলে চুল ঝরা বন্ধ হয়। 

১০. শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে 

আমরা প্রতিদিন যে সমস্ত খাবার গ্রহণ করি তাতে কিছু না কিছু ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা দেহের ক্ষতি করে। প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে সেসব ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। এবং রক্ত পরিষ্কার হয়। ফলে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। 

ভিডিওঃ হার্টের রোগীর খাবার তালিকা । যেসব খাবার এড়ানো উচিত

থানকুনি পাতার অপকারিতা 

কোন খাবারই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া উচিৎ নয়। পরিমাণের বেশি খেলে উপকারের পরিবর্তে অপকার বেশি হয়। থানকুনি পাতার ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমনই। 

অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের এ পাতা খাওয়া উচিৎ নয়। এতে সমস্যা আরো তীব্র হতে পারে। 

অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে শরীরে খোস পাচরাসহ, মাথা ঘুরা এবং এলার্জি জনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যাদের অপারেশন করা আছে তাদের থানকুনি পাতা থেকে দূরে থাকায় উত্তম।  

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়

আমাদের চারপাশে জঙ্গলের মধ্যে, বিস্তীর্ন মাঠ এবং ঝোপঝাড়ে ও বাড়ির আঙ্গিনায় গোল আকৃতির ছোট ছোট খাঁজ খাঁজ কিছু পাতা দেখা যায়। মূলত ঝোপঝাড়েই দেখা মেলে এই পাতাগুলো। এই উদ্ভিদটিই হলো থানকুনি পাতা। এটি আমাদের সকলের কাছেই বেশ পরিচিত। 

থানকুনি পাতা গ্রাম অঞ্চলে দেখা গেলেও শহরে নাই বললেই চলে। এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন গ্রাম অঞ্চলে থানকুনি পাতাকে আদমকুনি বলা হয়। 

আবার কোন কোন অঞ্চলে এটি মানামানি, ধুলাবেগুন, আাদামনি, তিতুরা, আদাগুনানি, থুলকুড়ি ইত্যাদি অদ্ভুত সব নামে পরিচিত। তবে বেশির ভাগ মানুষের কাছেই এটি থানকুনি নামে পরিচিত। থানকুনি পাতা বা আদামনির ঔষধি গুণাগুণ ও এর কার্যক্ষমতা জেনে নিন।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম 

থানকুনি পাতা খাওয়ার বিশেষ কোন নিয়ম নেই। বিভিন্নভাবে এটি খাওয়া যায়। যেমন অনেকে থানকুনি পাতার রস খান। আবার অনেকে এই পাতার ভর্তা, ও বড়ি বানিয়েও খান।

মূলত থানকুনি পাতা পেটের বিভিন্ন রোগ সারতে বেশ কার্যকর। তাই অনেকে থানকুনি পাতা শুকিয়ে পাউডার তৈরি করে খান। গ্রাম অঞ্চলে বেশির ভাগ মানুষ থানকুনি পাতার ভর্তা খেয়ে থাকেন। এছাড়াও থানকুনি পাতা দিয়ে পেঁয়াজু তৈরি করে খেতে পারেন। আবার এটি কুঁচি কুঁচি করে কেটে পানির সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। 

শেষ কথা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে দুটোই জানা হলো। তবে থানকুনি পাতার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই বেশি। কারণ আমাদের দেহের যেকোন রোগ প্রতিরোধে থানকুনি পাতার জুড়ি নেই। তাই সুযোগ হলস আজ থেকেই থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করুন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top