দাদ এর চিকিৎসা – দাদ ভাইরাসের আক্রমণে সংক্রমিত একটি রোগ। এটি একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ যা শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে। খুব সহজেই একজন থেকে অন্যজনের শরীরেও এটি ছড়িয়ে পড়ে।
তবে দাদ এর চিকিৎসা ঘরোয়া ভাবে করা যায়। ভিডিও তে দাদ রোগের ১০টি ঘরোয়া চিকিৎসা দেখতে এখানে ক্লিক করুন!
Table of Contents
দাদ এর চিকিৎসা; ১০টি ঘরোয়া উপায়
দাদ একটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন। এটি শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। দাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এটি ছোঁয়াচে। তাই দাদ হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। দাদ এর চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া উপায়গুলো বেশ কার্যকর।
১. নারকেল তেল
ত্বকের যত্নে নারিকেল তেল যেমন উপকারি তেমনি যেকোনো চর্মরোগের ক্ষেত্রেও এটি বেশ কার্যকর। নারিকেল তেলে প্রাকৃতিক এমন কিছু উপাদান আছে যা চর্মরোগ সারিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
রাতে শোবার আগে আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত নারকেল তেল লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন।
২. নিমপাতা
দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা তে নিমপাতা খুবই কার্যকারি। নিমপাতায় রয়েছে এন্টিসেপটিক ও এন্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপাটিজ যা দাদের মতো রোগ সারতে বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে নিমের তেল দাদের ওপর বারবার লাগাতে হবে। এতে ধীরে ধীরে দাদ সেরে যাবে।
৩. রসুন
রসুনে রয়েছে এ্যাজুইনা নামে এন্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা ফাঙ্গাস ইনফেকশনে দারুণ কার্যকরী। রসুনের কয়েকটি কোয়া কুঁচি কুঁচি করে কেটে অথবা পেষ্ট বানিয়ে দাদের ওপর লাগিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। এভাবে সারারাত রাখুন। দাদ আপনিই সেরে যাবে। রসুন এর উপকারিতা – ১১ টি গুণাগুণ জেনে নিন!
৪. তুলসীপাতা
এন্টিইনফ্লেমেটরি ও এন্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ তুলসীপাতা দাদের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করে। তুলসীপাতা বেটে দাদ এবং চুলকানিতে লাগিয়ে দিলে এ ধরনের চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তুলসী পাতার উপকারিতা এবং এর অবিশ্বাস্য ঔষধি গুণাগুণ!
৫. পেঁপে
দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা তে পেঁপে নিয়মিত ব্যবহারে বেশ উপকারে আসে। পেঁপেতে রয়েছে এন্টি-ফাঙ্গাল প্রোপাটিজ যা দাদ সারতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেঁপে পাতার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন!
এক টুকরো পেঁপে নিয়ে দাদের ওপর ১৫ মিনিট ঘষতে থাকুন। এরপরে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৬. হলুদ
দাদ চুলকানি দূর করার উপায় হিসেবে হলুদ অত্যন্ত উপকারি। হলুদে আছে এন্টিবায়োটিক উপাদান যা দাদ সারতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
কাঁচা হলুদ বেটে অথবা হলুদের গুড়ো পানি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে আলতোভাবে লাগিয়ে রাখুন। সারাদিনে তিন বার ব্যবহারে দাদ সেরে যেতে শুরু করবে।
৭. সরষে বীজ
দাদ এর প্রকোপ কমাতে সরষে বীজের বিকল্প নেই। দাদ এর চিকিৎসা করতে সরষে বীজ দারুণ উপকারে আসে।
প্রথমে, সরষে বীজ আধাঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর বীজগুলো বেটে পেস্ট তৈরী করুন। এরপর পেস্ট দাদের ওপর লাগিয়ে থাকুন। এভাবে কয়েক দিন লাগালেই দেখবেন দাদ সেরে গেছে।
৮. এলোভেরা
এলোভেরা শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই নয়, যেকোনো চর্মরোগের ক্ষেত্রেই যথেষ্ট কার্যকর। প্রতিদিন রাতে শোয়ার পূর্বে এলোভেরা পাতা থেকে পরিমান মতো জেল বের করে দাদের ওপর সরাসরি লাগিয়ে দিন। পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এই চিকিৎসাটি প্রতিদিন করলে দাদ থেকে মুক্তি পাবেন।
৯. মধু
দাদ চুলকানি দূর করার উপায় হিসেবে মধু বিশেষ ভুমিকা পালন করে। কারণ মধুতে রয়েছে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড যা ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করে।
এক টুকরো তুলোয় অল্প একটু মধু নিয়ে আক্রান্ত স্থানে দিন। নিয়মিত ব্যবহারে সহজেই দাদ থেকে মুক্তি পাবে। আসল মধু চেনার উপায়-কোনটি প্রসেসড মধু আর কোনটি খাঁটি মধু!
১০. ভিনেগার
দাদের মতো চর্মরোগের ক্ষেত্রে ভিনেগার অত্যন্ত উপকারী উপাদান। পরিমাণমতো ভিনেগার নিয়ে এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ লবন দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি দাদের ওপর লাগিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ পদ্ধতিটি এক সপ্তাহ ব্যবহারে দেখবেন দাদ সেরে গেছে।
দাদ হওয়ার কারণ
দাদ একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ। এটি সাধারণত ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়, বিশেষ করে যেসব জায়গায় আলো বাতাস যায় না সে সমস্ত স্থানে ছত্রাক জন্ম নেয়।
অপরিষ্কার কাপড়, আটসাট অন্তর্বাস, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির পোষাক, গামছা ব্যবহার করলে দাদ হতে পারে। এছাড়াও শরীরের যে সমস্ত জায়গায় বেশি ঘাম হয় এবং ঘাম শুকায় না সেসব জায়গায় দাদের জন্ম হয়।
যারা বেশি ঘামেন, এবং যাদের ত্বকে ক্ষত আছে ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এমনকি মাথার চিরুনি এবং পুরনো পায়ের মোজা থেকেও দাদ সংক্রমিত হতে পারে।
দাদ এর লক্ষণ
শরীরের কোনো স্থানে দাদ হলে সেখানে ছোট ছোট গুটি দেখা যায়। এরপর ধীরে ধীরে স্থানে চুলকানি হয়।
ধীরে ধীরে গুটিগুলো বৃত্তাকারে বড় হতে থাকে এবং বৃত্তটি চাকার মতো দেখায়। যতই দিন যায় চাকাটি বড় হতে থাকে এবং কিনারাগুলো সামান্য উঁচু হয়।
আক্রান্ত স্থানে বাদামি বর্ণের আঁইশ হয় এবং ক্ষত থেকে খুশকির মতো চামড়া ওঠে। ক্ষত স্থান অত্যন্ত চুলকায় এবং কখনো কখনো পানি বা পুঁজ ভর্তি দানা হয়। এই লক্ষণগুলিই মূলত দাদের লক্ষণ। দ্রুত দাদ এর চিকিৎসা নিলে তা দ্রুতই সেরে যায়।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায় গুলি দাদ এর চিকিৎসা করতে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবহার করলে দ্রুত সুফল মিলবে। তবুও যদি দাদ থেকে মুক্তি না মেলে তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ জানুন…