বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে আজ মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। প্রথম দুই যাচেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। আজ বাংলাদেশ মাঠে নামে হোয়াইটওয়াশ ঠেকাতে।
মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিংয়ে মাঠে নামে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি।
গত দিনের মতো আজকেও ব্যর্থ হয় লিটন দাস। প্রথম ওভারেই স্যাম কুরানের বলে শূন্য রানে নিয়ে সাজঘরে ফিরে লিটন দাস। তৃতীয় ওভারে আবারও বোলিংয়ে এসে আরেক ওপেনার তামিম ইকবালকে সাজঘরে ফেরান স্যাম। ৬ বলে ১১ রানের সংগ্রহ নিয়ে সাজঘরে ফিরে তামিম।
এরপর দলের হাল ধরে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে দুজনে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দলকে এগিয়েও নিতে থাকে আস্তে ধীরে। তাদের দুজনের পার্টনারশিপে বেশ অনেকদূর এগিয়ে যায় বাংলাদেশের স্কোর। হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলে শান্ত। কিন্তু তারপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি।
ভুল রান নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হয় নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর মুশফিককে সঙ্গ দিতে মাঠে আসে সাকিব আল হাসান। সাকিবকে সাথে নিয়ে মুশফিকও হাফ সেঞ্চুরি পূর্ন করে। শেষ পর্যন্ত তাদের জুটি ভাঙে আদিল রশিদ। ৯৩ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে মুশফিক।
এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নামে সাকিবকে সঙ্গ দিতে। তবে তার ইনিংসও দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। ৯ বলে ৮ রানের ইনিংস খেলে রশিদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে রিয়াদ। এরপর আফিফ হোসেন সাকিবকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দিলেও রান তেমন এগোয়নি। আফিফকে সঙ্গে নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ন করে সাকিব। সাকিব একটাই দলকে টানছিল। আফিফকে সাজঘরে ফেরায় ক্রিস ওয়াকস। ২৪ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরে আফিফ।
এরপর আর কেউ দাঁড়াতে বাংলাদেশের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ৬ বলে ৫ রান করে আউট হয় মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র ২ রান করে আউট হয় তাইজুল ইসলাম। অপর প্রান্তে ক্রমাগত উইকেট পড়লেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সাকিব। ৪৯তম ওভারে সাকিবকে থামাতে সক্ষম হয় জফরা আর্চার। ৭১ বলে ৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে সাকিব। পরের বলেই আউট হয় মুস্তাফিজুর রহমান।
এতে ৪৮.৫ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৪৬ রান। ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করে জফরা আর্চার। দুটি করে উইকেট নেয় স্যাম কুরান ও আদিল রশিদ।
২৪৬ রানের লক্ষ্যে তাড়া করতে ইংল্যান্ডের পক্ষে ওপেনিংয়ে নামে জ্যাসন রয় ও ফিলিপ সল্ট। শুরুটা অসাধারণ হয় ইংল্যান্ডের। নবম ওভারে ওপেনিং জুটি ভাঙে সাকিব আল হাসান। ২৫ বলে ৩৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে ওপেনার ফিলিপ সল্ট। পরের ওভারেই শূন্য রানে দাউদ মালানকে সাজঘরে ফেরায় ইবাদত হোসেন। এবার আবারও বোলিংয়ে এসে অপর ওপেনারকেও তুলে নেয় সাকিব।
অল্প সময়ের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। চতুর্থ উইকেটে আবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলে ইংল্যান্ড। তবে রানের গতি বেশ ধীর হয়ে যায়। স্যাম কুরান ও জেমস ভিন্সের জুটি ভাঙে মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৯ বলে ২৩ রানের ধীর ইনিংস খেলে মিরাজের বলে লিটনের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে স্যাম।
এরপর জেমসকে সঙ্গ দিতে মাঠে আসে জস বাটলার। অবশেষে জেমসকেও তুলে নেয় সাকিব। ২৭তম ওভারে ৪৪ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে সাকিবের বলে উইকেট রক্ষক মুশফিকের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে জেমস ভিন্স।
এরপর মঈন আলীও বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ৫ বলে ২ রান করে ইবাদতের বলে বোল্ড হয় মঈন আলী। জস বাটলার কিছুটা আশার আলো দেখালেও ২৪ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে। এরপর ক্রিস ওয়াকস দলের হাল ধরলেও অপর প্রান্ত থেকে কোন সঙ্গ পায়নি।
৮ রান করে আদিল রশিদ ও ২ রানের ইনিংস খেলে রিহান আহমেদ সাজঘরে ফিরে। এরপর ৪৬ বলে ৩৪ রান করা ক্রিসকেও সাজঘরে ফেরায় মুস্তাফিজুর রহমান।
এতে ৪৩.১ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯৬ রান। ৫০ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। ২-১ এ সিরিজ জয়লাভ করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট শিকার করে সাকিব আল হাসান। দু’টি করে উইকেট শিকার করে তাইজুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ – ২৪৬/১০ (৪৮.৫)
সাকিব আল হাসান ৭৫ (৭১)
মুশফিকুর রহিম ৭০ (৯৩)
নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৩ (৭১)
জফরা আর্চার ৩ – ৩৫ – ৮.৫
আদিল রশিদ ২ – ২১ – ৫
স্যাম কুরান ২ – ৫১ – ৮
ইংল্যান্ড – ১৯৬/১০ (৪৩.১)
জেমস ভিন্স ৩৮ (৪৪)
ফিল সল্ট ৩৫ (২৫)
ক্রিস ওয়াকস ৩৪ (৪৬)
সাকিব আল হাসান ৪ – ৩৫ – ১০
ইবাদত হোসেন ২ – ৩৮ – ৯
তাইজুল ইসলাম ২ – ৫২ – ১০
ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছে সাকিব আল হাসান।
ম্যান অব দ্য সিরিজ আদিল রশিদ।