পায়খানা না হলে করণীয়

পায়খানা না হলে করণীয় কী? জানুন প্রয়োজনীয় কিছু টিপস!

পায়খানা না হয় একটি বিরক্তিকর ও অস্বস্তিদায়ক সমস্যা। অনেকের টয়লেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয়। কিন্তু পায়খানা হয় না। অনেকেই এই সময়টা অস্বস্তিতে সময় পার করতে হয়। আপনার এই অস্বস্তিকর সময়কে স্বস্তিদায়ক করতে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল পায়খানা না হলে করণীয়। 

আমাদের প্রায় সময়ই একটা সমস্যা দেখা দেয় সেটা হল পায়খানা ঠিকমতো না হওয়া। এজন্য অনেকেই কাজকর্মে সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারেন না। পায়খানা না হওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে।

পায়খানা না হলে করণীয় 

আমাদের প্রায় সময়ই দেখা যায় হঠাৎ করে পায়খানা খুব কষা হয়ে যায়। মলত্যাগের জন্য অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয় । তারপর ও মনে হয় পায়খানা ঠিক মত ক্লিয়ার হয়নি। আসুন জেনে নিই এসব সমস্যায় পায়খানা না হলে করণীয় 

১. প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ পানি পেটে থাকা খাবারের সাথে মিশে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে তোলে। এর ফলে পরিপাকতন্ত্রের ভেতরে পায়খানা নরম এবং চলাচল সহজ হয়।

২. নিয়ম করে নিয়মিত যথেষ্ট আঁশযুক্ত বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার। ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় এবং জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে। এজন্য ফাইবার যুক্ত খাবার যেমনঃ গোটা শস্য, শাকসবজি, ফলমূল যেমনঃ পেঁপে, বেল, কলা ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া উচিত।

৩. প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস হাল্কা গরম দুধের পান করা। এছাড়াও ইসবগুলের ভুসি, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর  মতো শরবত ঘরোয়া টোটকা পায়খানা ক্লিয়ার করতে বেশ কাজে আসে।

৪. নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। কারণ ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র এবং শরীরের কোষ সচল হয়। এতে সহজে পায়খানা ক্লিয়ার হয়ে যায়। তাই যারা সারাদিন বসে কাজ করেন তাদের উচিত নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তোলা।

৫.কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও  ভাজাপোড়া, গরু- খাসি মাংস সহ অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে। এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চকলেট, চিপস, চিনিযুক্ত বেকারি খাদ্য যেমন কেক, পেস্ট্রি কেক ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো।

৬. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করতে হবে। কারণ মানসিক সমস্যা থাকলে শরীর নিস্তেজ থাকে এবং শরীরের কোষ গুলো দুর্বল হয়ে যায় ফলে পায়খানা ঠিকমতো হয় না। তাই মানসিক ভাবে সবসময় নিজেকে খুশি রাখুন। 

৭. কখনো কখনো কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে পায়খানা হয় না। নতুন কোন ঔষধ শুরু করার পরে যদি মনে হয় পায়খানার সমস্যা দেখা দিয়েছে তাহলে আপনি ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করুন। 

৮. যাদের পায়খানা হয় না তাদের মলত্যাগের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্যান বা লো কমোডে পায়খানা করা। যদি হাই কমোড ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে পায়ের নিচে ছোট টুল বা উঁচু কোন কিছু দিয়ে বসতে হবে যেন পা উঁচু করে বসতে পারেন। এভাবে বসলে হাঁটু দুটি কোমরের উপরে থাকে এতে মলত্যাগ করতে সহজ হবে।

বাচ্চার পায়খানা না হলে করণীয়

বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদেরও পায়াখানা হতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাদের পায়খানা সঠিকভাবে না হলে সেটি ধীরে ধীরে বড় সমস্যার দিকে ধাবিত হয়। তাই আসুন জেনে নিই বাচ্চার পায়খানা না হলে করণীয় 

১. মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা

বাচ্চার নিয়মিত মলত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বাচ্চাকে বকাঝকা না করে প্রতিদিন মলত্যাগের পর পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। অনেক বাচ্চার মলত্যাগ করার সময় একটু প্রাইভেসি পছন্দ করে। টয়লেট ব্যবহার করতে শেখেনি এমন বাচ্চাকে একা এক ঘরে পটিতে বসিয়ে দিন যাতে সে প্রাইভেসি ফিল করে।

২. পছন্দের বাথরুমের ব্যবস্থা করা

অনেক বাচ্চা তার নির্দিষ্ট পছন্দের বাথরুম ছাড়া অন্য কোথাও বাথরুম করতে বা যেতে পছন্দ করে না। তাই আপনার বাচ্চাকে তার পছন্দের বাথরুম ব্যবহার করতে দিন।

৩.দুধের উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে আনা

অনেক বাচ্চা দুধ খেতে পছন্দ করে। দুধ থাওয়ার কারনে দেখা যায় বাচ্চারা অন্য খাবার খেতে চায় না, বিশেষ করে আঁশ জাতীয় খাবার। এক বছরের বেশী বয়সের শিশুকে দৈনিক আধা লিটার  থেকে পৌনে এক লিটার এর বেশি দুধ খেতে দেয়া ঠিক না। বাচ্চাকে পরিমিত পরিমাণ দুধের সাথে অন্য খাবার বিশেষ করে আশঁ জাতীয় খাবার খাওয়াতে উৎসাহিত করতে হবে।

৪.আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া

বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় আঁশ জাতীয় খাবার রাখুন।আঁশ হলো খাবারের সেই অংশ, যা পরিপাক হয় না। এবং খাদ্য গ্রহণের পর অবশেষ হিসেবে জমা হয়ে মল তৈরি করে। শাক-কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমিশাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউয়ের ও মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর আঁশ রয়েছে।

৫.বেশি পরিমানে পানি পান

পানি খাবার হজমে সহায়তা করে। পানি বেশি খেলে মলাশয় পরিষ্কার হয় এবং শরীর নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। বাচ্চা পানি খেতে না চাইলে শরবত, তাজা ফলের জুস এবং স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে। পায়খানা না হলে করণীয় মধ্যে অন্যতম করণীয় এটি।

কোষ্ঠকাঠিন্য লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্যের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। তন্মধ্যে যেটা কে সবাই আসল লক্ষণ বলে সেটা হল সপ্তাহে ৩ বারের কম পায়খানা হওয়া। এছাড়াও আরো বেশ কিছু কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ রয়েছে তা  হলো—

*স্বাভাবিকের চেয়ে কম মলত্যাগ করা। 

*মল শক্ত এবং শুকনো হয়, যা বের হওয়ার সময় ব্যাথা হতে পারে ।

*মলত্যাগ করার সময় প্রচুর পরিমাণে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হয় ।

*অনেকক্ষণ যাবত টয়লেটে বসে থাকা ।

*মলত্যাগের পরে পেট পরিষ্কার হয় নি এমন মনে হওয়া ।

*দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম উপসর্গ হল পেটে খিঁচুনি বা পেটে ব্যথা।

*মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব হওয়া।

*মলদ্বারে চাপের অনুভূতি হওয়া।

*পেট ফুলে থাকা ও ব্যথা অনুভব করা। 

*মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।

পায়াখানা যদি ঠিকমতো না হয় তাহলে অবহেলা না করে পায়খানা না হলে করণীয় নিময় সঠিকভাবে ফলো করতে হবে। যদি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ফলো করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে কোষ্ঠকাঠিন্য দিকে ধাবিত হবে।

পায়খানা না হওয়ার কারণ

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পায়খানা না হওয়ার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অন্য কিছু কারণগুলো হচ্ছে


সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

নিয়মিত ও অধিক ফাস্ট ফুড খাওয়া:

আমরা সকলেই জানি ফাস্ট ফুড আমাদের শরিরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। ফাস্ট ফুড একটি শক্তিশালি আমিষ। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্র ঠিক মত পরিপাক হতে পারে নাহ। যার জন্য আমাদের পায়খানা অনেক শক্ত হয়। যা পায়খানা না হবার অন্যতম কারণ। 

সময়মতো মলত্যাগ না করে চেপে রাখার:

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর্মজীবী মহিলাদের এই অভ্যাসটা থাকে। কর্মস্থলের টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত প্রাইভেসি না থাকায় তারা সাধারণত কর্মস্থলে টয়লেট ব্যবহার করেন না। এছাড়াও অনেকে পায়খানার বেগ আসলে তা আটকে রাখে। পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে, ফলে পায়খানা হয় না।

অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা:

অনেক সময় মানসিক চাপ বা দুঃচিন্তা ফলে শরীরের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতিতে বাধা প্রাপ্ত হয তখন শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে।

এছাড়াও শরীর নিস্তেজ থাকে এবং শরীরের কোষ গুলো দুর্বল হয়ে যায়। এতে খাবার ঠিক মত পরিপাক হতে পারে নাহ। ফলে পায়খানা হয় না।

তরল খাবার কম খাওয়া:

তরল খাবার কম খাওয়ার কারনে পায়খানা ঠিক মতো হয় না। তরল খাবারের মধ্যে পানি অন্যতম। পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পায়খানা সহজেই ক্লিয়ার হয়। এজন্য পরিমাণ মতো পানি খাওয়া জরুরি। এছাড়াও শরবত, তাজা ফলের জুস এবং স্যুপ খেতে পারেন।

আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া:

পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের মধ্যে থাকা ফাইবার পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে। যা পায়খানা নরম ও ভারী করতে সাহায্য করে।  ফলে সহজেই মল ত্যাগ করা যায় ।

উপসংহার 

পায়খানা হয় না কিংবা পায়খানা করার সময় কষ্ট হয়, ব্যথা হয় এমন সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষ খুবই কম আছেন। এসময় অনেকেই  অস্থিরতায় ভোগেন। এসময় অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা না ভোগে পায়খানা না হলে করণীয় সে ব্যাপার গুলোর দিকে নজর রাখুন। যদি অবস্থা উন্নতি না হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top