পারকিনসন রোগ কি

পারকিনসন রোগ কি? এটি কেন হয়,এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ জানুন!

বয়স এর সাথে সাথে মানবদেহে রোগব্যাধি ও বাড়তে থাকে। বর্তমান সময়ে মরণব্যাধি রোগ গুলার মধ্যে পারকিনসন রোগ অন্যতম। পারকিনসন রোগ কি এবং কেন হয় তা আমাদের অনেকের কাছে অজানা।

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, পারকিনসন সম্পর্কে আজান কিছু তথ্য। 

পারকিনসন রোগ কি

পারকিনসন রোগ কি এই নিয়ে অনেকে মানুষ অনেক মতামত পোষণ করে থাকেন। আসলে এটি হলো মস্তিষ্কের এক বিশেষ রোগ। এই রোগ এক প্রকার নিউরো ডিজেনারেটিভ কিংবা স্নায়ুর অধঃপতনজনিত রোগ। নিউরন হলো মস্তিষ্কের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি। 

ভিডিওঃ পারকিনসন রোগ প্রতিরোধে করণীয়?

যখন মস্তিস্কের সাবস্টেন্সিয়া নাইগ্রায় নিউরনের মৃত্যু ঘটে তখন এই রোগের উৎপত্তি হয়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে এই রোগ। ৫০ থেকে ৬০ বছরের উর্ধ্ববয়সী মানুষের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা দেয়। নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এই রোগে অধিকতর আক্রান্ত হয়ে থাকে।

পারকিনসন রোগ কেন হয়?

পারকিনসন রোগ মূলত মস্তিষ্কের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এটা তখনই হয় যখন মস্তিষ্কের একটি অংশ ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এবং সময়ের সাথে সাথে এসব স্নায়ু কোষের মৃত্যু হতে থাকে। 

মস্তিষ্কের সাদা অংশের মধ্যে অবস্থিত ভৌমিক গ্রন্থির আঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি এই রোগের মূল কারণ। তাছাড়াও গুরু মস্তিষ্কের টিউমার, ম্যাঙ্গানিজের কারণেও এই রোগ হয়ে থাকে।

মানুষের মস্তিষ্কে আছে অগণিত বহু স্নায়ু-কোষ। এই সব স্নায়ু-কোষ এর মাধ্যমে তৈরি হয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক রাসায়নিক উপাদান যার নাম হলো ডোপামিন। হাঁটাচলায় সহায়তা করতে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে পরিচালনার কাজে এই ডোপামিনকে ব্যবহার করে মানবদেহের মস্তিষ্ক।

কিন্তু এই ডোপামিনের উৎপাদন যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন তা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। যার ফলে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাঁপতে থাকে বিশেষ করে হাত ও পা । এর ফলে হাঁটাচলাতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।

পারকিনসন রোগের লক্ষণ

মানুষ কী কারণে এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তা এখনও অজানা। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা জেনেটিক কিংবা পরিবেশগত উপাদানের জন্য এই রোগের সৃষ্টি হয় থাকে।

এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোন সঠিক উপায় নেই। তবে ঔষধ এবং অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।

চলুন দেখে নেওয়া যাক,এই রোগের লক্ষণ সমূহ:

  1. অনেক সময় হাত,পা,মাথা এবং মুখের থুতনি ও চোয়াল কেঁপে ওঠা।
  1. ধীরে ধীরে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
  1. হাত পা ও শরীরের মাংস পেশি শক্ত হয়ে যায়। ফলে শরীরের যেকোনও অংশ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়।
  1. হাঁটা চলায় ধীরগতি ও জড়তা দেখা দেয়।
  1. গলার স্বরের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
  1. নিজের মধ্যে অসম্ভব উদ্বেগ ও অবসাদ এর জন্ম নেয়।
  1. ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
  1. কোষ্ঠকাঠিন্য ও নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
  1. ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যায়।
  1.  কখনও ঘুম বেশি হওয়া বা একেবারে ঘুম না হওয়ার লক্ষণ ও দেখা দেয়।
  1.  যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়।
  1.  খাবার গিলতে সমস্যা হয় এবং অনিয়ন্ত্রিত মূত্র ত্যাগ হয়ে থাকে।

পারকিনসন রোগের চিকিৎসা

পারকিনসন রোগের  সম্পূর্ণ কোনো নিরাময় এখনও সঠিক প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়নি। তবে, ডাবলিনের United neuroscience নামের একটি সংস্থা এই রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে কিছু রোগীর উপর এই ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয় এবং তা সফল হয়।

এই ভ্যাক্সিন ছাড়াও আরো অনেক  ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে ও বিভিন্ন ঔষধের সাহায্যে কিছুটা সুস্থ থাকা যায়। তবে, রোগটি নিয়ন্ত্রণ এর বাইরে চলে গেলে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে সাময়িক ভালো থাকা যায়। এছাড়াও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে  এই রোগ কিছুটা ভালো করা সম্ভব।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

পারকিনসন রোগীর খাবার 

যেহেতু এই রোগের রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি সমস্যা  রয়েছে। এই জন্য ফল, শাকসবজী ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। অনেকের চিবানো এবং গিলতে সমস্যা হয়ে থাকে এর জন্য খাবারটি সেদ্ধ, বাষ্পযুক্ত করা ভালোভাবে খাওয়ানো যেতে পারে।

এছাড়াও রোগীকে যেসব খাবার খাওয়ানো উচিত তা হলো: 

পারকিনসন রোগ প্রতিরোধ 

পারকিনসন রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় না হলেও কিছু উপায়ের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক, পারকিনসন এর প্রতিরোধ :

  • নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
  • সাঁতার কিংবা সাইক্লিং করতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও ভিটামিন যুক্ত সুষম খাদ্য খেতে হবে।
  • একই জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ রাখা যাবে না। নিজে কে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।
  • ভিটামিন ডি ও সি যুক্ত খাবার এবং নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন। কারণ, ভিটামিন যুক্ত খাবার পারকিনসন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ভিডিওঃ পারকিনসন রোগ কি? এটি কেন হয়,এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ জানুন।

শেষকথা

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে আশাকরি জানতে পেরেছেন, পারকিনসন রোগ কি ও এর প্রতিরোধ। এই সমস্যার কোন নির্দিষ্ট নিরাময় নেই। কিন্তু এই রোগের রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হওয়া উচিত মানসিক সুস্থতা ও শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখা।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top