প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা; জানুন ইউরিন ইনফেকশন দূর করার কার্যকরী ১১ টি ঘরোয়া উপায়!

নারী পুরুষ উভয়েই ইউরিন ইনফেকশন বা প্রসাবে জ্বালাপোড়া  সমস্যায় ভুগে থাকেন। প্রায় প্রতিটি ঘরেই এ সমস্যা দেখা যায়। পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। তবে উভয়কেই এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। 

বিভিন্ন কারণে প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইনফেকশন হয়ে থাকে। তাই চলুন জেনে নিই প্রসাবে জ্বালাপোড়া  হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। 

প্রসাবে জ্বালাপোড়া র কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা; জানুন ১১ টি কার্যকরী উপায়

প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইনফেকশন কোন রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ মাত্র। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ এবং ছত্রাক বা ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

তবে দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগলে এর থেকে নানা জটিল অসুখ জন্ম নিতে পারে। এমনকি এই সমস্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে জীবাণু দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়। 

তাই প্রাথমিক অবস্থায় প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইনফেকশন দূর করতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন

পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। বিশেষ করে প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন দূর করার ক্ষেত্রে পানির বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে প্রসাবের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে দেহের ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাস প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। 

এছাড়াও পানি দেহের দূষিত পদার্থ প্রসাবের মধ্যে দিয়ে বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই দেহকে সুস্থ রাখতে এবং প্রসাবের জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন দূর করতে দৈনিক চার থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করুন। 

২. আখের রস বা সরবত পান করুন 

প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে আখের রস পান করতে পারেন। এতে বেশ উপকার পাবেন। এবং আখের তৈরি গুড় দিয়ে নিয়মিত সরবত বানিয়ে খান। এতে প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর হবে।  

৩. লেবু পানি পান করুন

প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে লেবু পানি অত্যন্ত কার্যকর। কারণ লেবু এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা সব ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। 

তাই প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। কয়েক দিন নিয়মিত পান করলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইনফেকশন ধীরে ধীরে কমে আসবে।  

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

৪. ডাবের পানি পান করুন 

শরীর সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করুন। ডাবের পানি আমাদের শরীরে নানা ভাবে উপকার করে থাকে। প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা যন্ত্রণা দূর করার পাশাপাশি এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট প্রবেশ করে ফলে শরীর সুস্থ থাকে। 

৫. ভেষজ উদ্ভিদ 

প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ যেমন চিরতা ভেজানো পানি বা নিমপাতার রস পান করুন। এছাড়াও বিভিন্ন মসলা যেমন আদার রস ও জিরার গুড়া হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এতে প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রণা দূর হয়ে যাবে। 

৬. শশার জুস বা শশা চিবিয়ে খান 

শশা শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসাগুলোর মধ্যে শশার জুস বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে শশার জুস বা শশার সালাদ খেতে পারেন। এমনকি শশা চিবিয়েও খেতে পারেন। 

এই সমস্যা দ্রুত দূর করতে শশার জুস তৈরি করে সেই সঙ্গে সামান্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে পান করুন। 

৭. মিষ্টি বা টক দই খান

মিষ্টি দই বা টক দই দুটোই প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ দইয়ে রয়েছে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া যা দেহের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে এবং জীবাণু বিনাশ করতে সাহায্য করে। 

তাছাড়াও প্রতিদিন দই খেলে দেহে পি এইচ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক থেকে দুই কাপ দই খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

৮. টাটকা শাক সবজি গ্রহণ করুন 

শাক সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ যা দেহে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি দেহে প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি পূরণ করে ফলে প্রসাবে ইনফেকশন দূর হয়। তাই দৈনন্দিন খাবার তালিকায় টাটকা শাক সবজি রাখুন। এতে দেহে শর্করার চাহিদা পূরণ হবে এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর হবে। 

৯. পানি জাতীয় ফল খান 

বিভিন্ন পানি জাতীয় ফল যেমন তরমুজ, পাকা পেঁপে, আঙ্গুর, আম, নাশপাতি, বেদানা, আপেল, আনারস ইত্যাদি পানি জাতীয় ফল খেলে শরীরে পানিশূন্যতা রোধ হয়। ফলে প্রসাবে ইনফেকশন দূর হয়। এছাড়াও ডাব বা নারকেলের পানি এবং খাবার স্যালাইন খেলেও প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইউরিন ইনফেকশন দূর হয়।

১০. ভাজা-পোড়া খাবার পরিহার করুন 

প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ভাজা পোড়া খাবার গ্রহণ করার ফলে প্রসাবে জ্বালা যন্ত্রণা বা ইনফেকশন দেখা দেয়। 

১১. গরম স্যাঁক বা গরম চাপ

ইউরিন ইনফেকশন বা তলপেটের ব্যথা দূর করতে গরম কাপড়ের স্যাঁক বা গরম চাপ বেশ উপকারী। কাপড় গরম করে বা হট ওয়াটার ব্যাগ তলপেটে লাগান। এতে ব্লাডারের অতিরিক্ত চাপ কমবে এবং ব্যথা ধীরে ধীরে কমে আসবে। 

এছাড়াও বর্তমানে বাজারে যে হিটিং প্যাড পাওয়া যায় তা ব্যবহারে মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা দূর হয় এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হয় না এবং ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।  

প্রসাবে জ্বালাপোড়ার কারণ

প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন-

১. প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার প্রধান কারণ হলো পানি শূন্যতা। কারণ পানি আমাদের দেহের নানা ধরনের রোগ নিরাময়ের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাব দেখা দিলেই প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইউরিন ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। আর তাই দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিৎ। 

২. নারীদের প্রতি মাসে মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার করেন। সেই ন্যাপকিন বা কাপড়ের সাথে জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়া মূত্রমালীতে প্রবেশ করে সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। 

৩. পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে প্রসাবে ইনফেকশন হওয়ার কারণ হলো নারীদের পায়ুপথের খুব কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। যার কারণে পায়ুপথের মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে সহজেই প্রবেশ করতে পারে ফলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা যন্ত্রণা শুরু হয়। 

এছাড়াও অতিরিক্ত ভাজা পোড়া খাবার গ্রহণ, কিডনির পাথর, যৌনবাহিত রোগ, কিডনির সংক্রমণ, ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন এবং  একাধিক যৌন মিলনের কারণেও প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা ইনফেকশন হতে পারে। 

প্রসাব বা ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ

ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার পেছনে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখা দিলেই বুঝতে হবে প্রসাবে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়েছে। 

১. প্রসাবের বেগ আসা সত্বেও ঠিক মতো প্রস্রাব না হওয়া। 

২. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া। 

৩. অনেক সময় প্রস্রাব অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত এবং প্রসাবের রং ঘোলাটে হয়।

৪. প্রসাবের সময় পেট বা পিঠে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া। 

৫. অনেক সময় প্রসাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। 

পরিশেষ

পরিশেষে বলা যায় প্রসাবের সময় অনেকেরই জ্বালাপোড়া  বা যন্ত্রণা হয় কিন্তু প্রথম অবস্থায় এ সমস্যাটিকে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে পরবর্তীতে এটি জটিল আকার ধারণ করে। তাই প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা যন্ত্রণা দেখা দিলে অবহেলা না করে উল্লেখিত প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। ঘরোয়া উপায়ে যদি প্রসাবে জ্বালাপোড়া  বা যন্ত্রণা দূর না হয় তবে যথাশীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top