প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি? জানুন প্রশ্নোত্তর সহ!

একজন নারীর জীবনে সবথেকে সুন্দর মুহূর্ত হলো প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড। কিন্ত প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি সেই সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। একজন নারীকে গর্ভবতী হবার আগেই প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো জেনে রাখতে হবে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবহিত হতে পারলে আপনি নিরাপদ ও সুস্থ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে পারবেন।

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি

গর্ভবতী হবার আগে একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসবে। যা দেখে সে নিশ্চিত হতে পারে। তবে একজন নারী প্রেগন্যান্ট কি না তা জানতে সর্বপ্রথম প্রেগন্যান্সি টেস্ট জরুরি। কিন্তু অনেকেই লক্ষণ ছাড়া গর্ভবতী হয়ে থাকেন। তবে অধিকাংশ নারীদের মধ্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক ভাবে প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি থাকে সে বিষয়ে চলুন জেনে নেই- 

ক্র্যাম্পিং

ক্র্যাম্পিং বা পেট কামড়ানো প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক একটি লক্ষণ। আবার এটা পিরিয়ডের লক্ষণ বলেও অনেকে ভুল করেন। এ ধরণের উপসর্গে হালকা ব্যথা থাকতে পারে। সাধারণত তলপেটের ডান দিকে এ ব্যথা হতে পারে। ক্র্যাম্পিং গর্ভধারণের কয়েকমাস পর্যন্ত থাকতে পারে।

ইমপ্ল্যানটেশন

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি এ বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে। কারণ এর মধ্যে অন্যতম লক্ষণ হলো ইমপ্ল্যানটেশন। গর্ভধারণ করলে অনেক সময় কালচে বা হালকা ব্লিডিং হয়, যা মূলত ইমপ্ল্যানটেশন। তাই অযথা ভয়ের কারণ নেই। আপনি চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

ক্লান্তি অনুভব

প্রেগন্যান্সির অন্যতম একটি প্রাথমিক লক্ষণ এটি। তবে পিরিয়ড হবার আগেও ক্লান্তি অনুভব করেন অনেক নারীরা। এটি মূলত হয়ে থাকে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে। এটি সুস্থ প্রেগন্যান্সির লক্ষণ। প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা শরীরে বেশি থাকার কারণে ক্লান্তি অনুভূত হয়। 

ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ

প্রেগন্যান্সির লক্ষণের মধ্যে ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ অন্যতম। এ সময় ঘন ঘন মূত্র বেগ আসে। ফলে শরীরে অস্বস্তি দেখা দেয়। হরমোনের প্রভাব পুরো শরীরে বিস্তার করে। এজন্যই এ সমস্যা হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রতিবার গর্ভধারণের লক্ষণ ও উপসর্গ কিন্তু ভিন্ন হতে পারে। যেমন- প্রেগন্যান্সিতে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণদ্বিতীয়বার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ একই রকম হবে এমন নয়৷ আবার কিছু লক্ষণ এক হতেও পারে। এ সময়ের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেক গর্ভবতী নারী প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মারাত্মক কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন। 

শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকা

প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকে গর্ভবতী নারীর শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে। এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ। তবে আবহাওয়া বা ব্যায়াম করলে তা আরও বাড়ে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

মর্নিং সিকনেস 

প্রেগন্যান্সির খুবই কমন লক্ষণ হলো মর্নিং সিকনেস। সাধারণত সকালের দিকে বমি বমি ভাব হয়ে থাকে। অনেকের সম্পূর্ণ প্রেগন্যান্সিতে আবার অনেকের প্রথম তিন মাসে এ সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমি বমি ভাব দেখা দিলে প্রাথমিক ভাবে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী। এ লক্ষণ থাকলে বেশি পানি পান করতে হবে।

খাবারে গন্ধ লাগা

প্রেগন্যান্সির আরও একটি সাধারণ লক্ষণ হলো খাবারে গন্ধ লাগা। বিভিন্ন খাবারে এসময় গন্ধ লাগতে পারে। যেমন- বিভিন্ন মাছ, মাছের ঝোলে, ডিমে, মাংসে আবার ভাতেও অনেকে গন্ধ পেয়ে থাকেন। খাবারে এমন গন্ধ থেকে খাবারের প্রতি অনীহা জন্মে৷ সাধারণ গর্ভাবস্থার প্রথম ৩-৫ মাস এমন লক্ষণ থাকে।

মুড সুইং 

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি এ বিষয়ে আপনার প্রাথমিক ধারণা রাখতেই হবে। কারণ এ সময় শুধু শারীরিক পরিবর্তন হয় না। সাথে আসে মানসিক পরিবর্তন। মুড সুইং তার মধ্যে অন্যতম। গর্ভাবস্থার পুরোটা সময় জু্ড়েই মুড সুইং হয়ে থাকে। হরমোনের অসামঞ্জস্যতার জন্যই গর্ভবতী মায়ের মুড সুইং হয়।

দুর্বল লাগা 

প্রেগন্যান্সির আরও একটি লক্ষণ হলো দুর্বল লাগা। শুরুর দিকে রক্তচাপ কমে যাবার কারণে দুর্বল লাগে ও মাথা ঘোরে। অনেকের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে। যা গর্ভাবস্থায় আরও কমে যায়। তাই শরীর দুর্বল লাগলে আপনি প্রাথমিক ভাবে প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়?

মেয়েদের মাসিক চক্র সাধারণত ৩০ দিনের তবে অনেকের ৩৫ দিনের। এই চক্রকে সাধারণ মাসিক চক্র বলে। এই চক্রে মেয়েদের ১২-১৫ তম দিনে সাধারণত ওভুলেশন হয়। নিয়মিত এই মাসিক চক্রে গর্ভধারণ করলে ৩০/৩৫ দিনের পর পিরিয়ড না হলে গর্ভবতী হবার সম্ভবনা খুব বেশি থাকে। এমন লক্ষণ থাকলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হবে।

তবে অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যাদের পিরিয়ড ইরেগুলার তাদের ঠিক কবে ওভুলেশন হবে তা বলা কঠিন। যদি সন্তান নেবার পরিকল্পনা করেন তবে পিরিয়ডের ডেট পার হবার ৫-৭ দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে তাহলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করে টেস্ট করে দেখতে হবে। অনিয়মিত পিরিয়ডের ক্ষেত্রে অনেকসময় পিরিয়ডের ডেট মিস হবার ১৫-২০ দিন বা ৩৫-৪০ দিন পরও নারীরা প্রেগন্যান্সি পরীক্ষায় পজেটিভ ফলাফল পেয়ে থাকেন।

সাদা স্রাব কী প্রেগন্যান্সির লক্ষণ? 

সাদা স্রাব অনেক সময় প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হয়ে থাকে। তবে পিরিয়ডের আগেও ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ দেখা যায়। এজন্য সাদা স্রাব প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি না তা নিয়ে অনেক নারীই সংশয়ে পড়ে যায়। গর্ভবতী হলে আগের চেয়ে বেশি সাদা স্রাব নির্গত হয়। অনেক নারীর প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত সাদা স্রাব হয়ে থাকে। যা মূলত স্বাভাবিক। কিন্তু সাদা স্রাবে যদি গন্ধ থাকে তবে আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এটি মূলত ইনফেকশনের কারণ। 

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বুঝা যায়?

যারা সন্তান নেবার চেষ্টা করেন সেসব নারীদের জন্য শেষ পিরিয়ডের বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ।  যাদের পিরিয়ড নিয়মিত তাদের সাধারণত পিরিয়ড মিস হবার ৪/৫ দিন পর টেস্ট করলেই জানা যায়। অর্থাৎ সাধারণ গর্ভধারণের ১মাস পর থেকেই নারীদের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। নারীরা অস্বস্তি অনুভব করেন। এসময় অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের স্তর বৃদ্ধি পাবার কারণে বমি বমি ভাব হয়। 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি:

প্রশ্ন: প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন করবো? 

উত্তর: পিরিয়ড মিস হওয়া মানেই গর্ভবতী হওয়া; এমনটা মনে করার কারণ নেই। আরও অনেক কারণেই পিরিয়ড মিস হতে পারে। নিয়মিত পিরিয়ডে ৫-৭ দিন ও অনিয়মিত পিরিয়ডে ৩৫-৪০ দিন অপেক্ষা করে পিরিয়ড টেস্ট করুন। সকালের ইউরিন দিয়ে বাসায় প্রেগন্যান্সি কীট টেস্ট করে দেখতে পারেন। কীট টেস্ট রেজাল্ট পজেটিভ হলে হাসপাতালে গিয়ে বিটা এইচসিজি টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে হবে। 

গর্ভবতী হওয়ার পর কী মাসিক হয়?

উত্তর: না, গর্ভবতী হবার পর মাসিক হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে রক্তপাত হতে পারে। ইমপ্ল্যান্টেশনের কারণে প্রথম দিকে হালকা রক্তপাত হতে পারে। প্রথম তিন মাসে মিসক্যারেজ, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি, প্লাসেন্টার সমস্যা, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, যেকোনো ইনফেকশনের কারণে ব্লিডিং হতে পারে। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত দেখলে বা থেমে গেলেও ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। 

প্রশ্ন: কোমর ব্যথা কী প্রেগন্যান্সির লক্ষণ? 

উত্তর: প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হিসেবে কোমর ব্যথা একটি সাধারণ উপস্বর্গ। তবে পিরিয়ডের আগেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। তবে গর্ভধারণের শেষের তিন মাস বা তার আগেই কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। এ সময় ভারী কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে এ সময় কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

সমাপ্তি

একজন নারীর জন্য গর্ভাবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে নারীরা সন্তান নিতে ইচ্ছুক তাদের প্রাথমিক ভাবে প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। কারণ এতে সহজেই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত রোধ করা যায়। প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস আপনাকে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এসময় যেকোনো সমস্যা হলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও আপনার মনে যদি আরো কিছু প্রশ্ন থাকে তবে নির্দ্বিধায় আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়ে আপনার কাছে হাজির হবো। 

লিখেছেনঃ Tanny Das 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top