প্লেগ রোগ

প্লেগ রোগ কী? এই রোগ ছড়ানোর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা!

প্লেগ রোগ কী : প্লেগ একটি ভয়ংকর ছোঁয়াচে রোগের নাম। এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রমক ব্যাধি যার অস্তিত্ব ধরা পড়ে প্রায় ৩০০০ বছর পূর্বে। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক মহামারি রোগ হলো প্লেগ। Yersinia Pestis নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এই রোগের উৎপত্তি। 

প্লেগ রোগ সম্পর্কে আরো কিছু অজানা তথ্য জানতে লেখাটি পড়ে ফেলুন ঝটপট। 

প্লেগ রোগ কী? 

প্লেগ একধরনের ছোঁয়াচে রোগ যা শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আক্রমণ করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অস্বাভাবিক প্রদাহে ভুগতে থাকে। মূলত ইঁদুরের দেহের একধরনে ভাইরাস থেকে এর উৎপত্তি হয়। 

তবে প্লেগ রোগের উৎপত্তি আসলে ইঁদুর থেকে নয়। এটি মূলত এসেছে এক জাতের মাছি থেকে যার নাম ওরিয়েন্টাল র‍্যাট ফ্লি। মূলত চতুর্দশ শতকে ইউরোপে এই মাছি পাওয়া যেত। ভয়ংকর এই মাছি তখন ইঁদুরকে কামড়ানোর মাধ্যমে ইঁদুরের গায়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। এবং এভাবেই যুগ যুগ ধরে ইঁদুর এই রোগ বহন করে আসে। 

ইনসুলিন কিভাবে কাজ করে ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

প্লেগ রোগের প্রকারভেদ

প্লেগ এমন একটি মরণব্যাধি যার প্রকারভেদ রয়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার দূরবর্তী দেশগুলোতে প্লেগ রোগ উল্লেখযোগ্যভাবে ধরা পড়ছে।  

প্লেগ রোগ মূলত ৩ প্রকার। যথা- 

  • বিউবোনিক প্লেগ।
  • সেপ্টিসেমিক প্লেগ। 
  • নিউমোনিক প্লেগ।

বিউবোনিক প্লেগ 

বিউবোনিক প্লেগ হলে তীব্র প্রদাহ, টনসিল এবং মেজাজ খারাপ হয়। তাছাড়া জ্বরের সাথে শরীরের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, ফোলা ক্ষত থেকে ফাটল সৃষ্টি হয়। 

সেপ্টিসেমিক প্লেগ

সেপ্টিসেমিক প্লেগ রোগীকে দূর্বল করে ফেলে। সেইসাথে জ্বর, ঠান্ডা লাগা, পেটে ব্যথা ও রোগীর পায়ের রঙ কালো হয়ে যায়। 

নিউমোনিক প্লেগ

এই প্লেগে নিউমোনিয়া হয় বলে একে নিউমোনিক প্লেগ বলে। সেইসাথে কাশি, বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অসুবিধা হয়। 

প্লেগ রোগ ছড়ানোর কারণ

মূলত গ্রামীণ এলাকা, ঘন বসতিপূর্ণ নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে স্থান কিংবা যেসব ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় অধিক ইঁদুরের সাথে মানুষের বসবাস সেসব এলাকায়, veterinarians এবং তাদের সহায়কের কারণে প্লেগ রোগ বেশি ছড়ায়। পাখাবিহীন ইঁদুর মাছি নামক ছোট প্রাণী থেকে ইঁদুর সংক্রমিত হবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সংক্রমিত ইঁদুর মারা যায় ও বেঁচে থাকা ইঁদুরদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। 

প্লেগ একটি সংক্রমক রোগ। এটি দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। সাধারণত ইঁদুরের মাধ্যমে প্লেগ ছড়ালেও সংক্রমিত যেকোনো প্রাণীর যেমন- কাঠবেড়ালী, মাছির কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়া সংক্রমক ড্রপার থেকে এ রোগ ছড়ায়।

প্লেগ রোগের লক্ষণ

অতিমাত্রায় জ্বর প্লেগ রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। এছাড়াও বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন: 

  • উচ্চমাত্রায় কাপুনি। 
  • আক্রান্ত রোগীর চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে যাওয়া। 
  • হাঁচি-কাশির সাথে রক্ত মিশ্রিত শ্লেষ্মা আসা। 
  • প্রচণ্ড মাথাব্যাথা হওয়া।
  • রোগীর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
  • সমস্ত শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।
  • এ রোগে বমি বমি ভাব থাকা বা বমি হতে পারে।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির কুঁচকি ও কানের কাছের লাসিকা গ্রন্থি হঠাৎ ফুলে ব্যথা শুরু হওয়া।
  • এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যায়।
  • রোগীর রক্তচাপ কমে যায়।
  • অনেক সময় আক্রান্ত রোগীর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে শরীর ফুলে যায়।
  • হাঁচি-কাশি, থুঁতু, কফের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটে।
  • শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • দেহ নীল হয়ে যেতে পারে।
  • মাংস-পেশির সংকোচন হতে পারে।
  • খিঁচুনি হতে পারে।

প্লেগ রোগ নির্ণয়ের টেস্ট

প্লেগ রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত রক্তের একটি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হয়। এই টেস্টের নাম হলো  Wayson Stain Test। তাছাড়া রক্ত এবং সংক্রামিত টিস্যুর নমুনা জড়িত একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্লেগের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য করা যায়। 

আপনার রক্তের নমুনায় ইয়ার সিনিয়া কীটপতঙ্গের উপস্থিতি আছে কিনা তা শনাক্তকরণের মাধ্যমে প্লেগ নির্ণয় করা হয়। আবার Buboes পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে। তাছাড়া নিউমোনিক প্লেগ শনাক্তকরণের জন্য ফুসফুসের পরীক্ষা করা হয়। 

এই ব্যাধি নির্ণয় হলে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দ্রুত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। 

প্লেগ রোগের চিকিৎসা

প্লেগ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া জরুরি। প্লেগ রোগে চিকিৎসা পাবার পরও মৃত্যুর হার ১-১৫% আর চিকিৎসাহীন অবস্থায় তার সংখ্যা প্রায় ৪০-৬০% হতে পারে। সাধারণত প্রথম লক্ষণ প্রকাশের পর চিকিৎসকরা রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। এটি সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে ওষুধ পরিবর্তন করা হতে পারে। 

রোগীর অবনতি হলে অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয় যার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন ও শিরাভ্যন্তরীণ তরল প্রয়োগ করা, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে। কোনো ব্যক্তি নিউমোনিক প্লেগ রোগীর সংস্পর্শে এলে তাদেরকে প্রতিষেধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রেপটোমাইসিন ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসা গ্রহণের ১-৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

প্লেগ রোগ প্রতিরোধের উপায়

প্লেগ রোগ একটি ছোঁয়াচে রোগ বিধায় এ রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। যেমন:

  • প্লেগ রোগরে উৎস ও কারণ খুঁজে বের করা জরুরি।  
  • স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং প্রশিক্ষণের আওতায় আনা।
  • সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ।
  • স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলা।
  • প্লেগে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির নিরাপদ সমাধি নিশ্চিত করা। 

দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সহ বিস্তারিত!

শেষ কথা

প্লেগ রোগ কী তা নিশ্চয় এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। পরিশেষে এটুকুই বলা যায়, প্লেগ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারীর নাম। আগুনের মতো প্লেগ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্লেগ রোগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি যেন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত না হয়।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top