টি টুয়েন্টি সিরিজে হারের পর আজ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। হারারে স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ ভালো চাপে পড়ে দুই অপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।
রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর এনিউচির অসাধারণ বোলিং উপেক্ষা করে অভিজ্ঞ হাতে রান তুলতে থাকে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দশম ওভারে দলীয় ৫০ রানের সাথে সাথে জুটির হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে তামিম-লিটন। যদিও অধিকাংশ রানই এসেছে তামিম ইকবালের ব্যাট হতে।
লিটন আস্তে ধীরে খেলা শুরু করলেও প্রথম থেকে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তামিম ইকবাল। প্রথম থেকে আগ্রাসী ব্যাটিং করলেও হাফ সেঞ্চুরির আগে গতি মন্থর হয়ে যায় তামিমের। শেষ পর্যন্ত ৭৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি করেন তামিম ইকবাল। এর মাধ্যমে মোট ৫৪ টি হাফ সেঞ্চুরি যুক্ত হয় তার নামে। হাফ সেঞ্চুরির পরে ৫৭ রান পূর্ণ করে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে ৮ হাজার রানের ক্লাবে ঢুকে তামিম। এই প্রথম কোন বাংলাদেশী প্লেয়ার এই মাইলফলক স্পর্শ করতে পারল।
হাফ সেঞ্চুরি করার সময় অনেক বেশী ডট বলে রান আগানোর চাপে পড়ে যায় তামিম। সিকান্দার রাজার বলে বাউডারি হাঁকাতে গিয়ে কায়ার হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে তামিম ইকবাল। আউট হওয়ার আগে ৯ টি চারে ৮৮ বলে ৬২ রান সংগ্রহ করেছিলেন তামিম।
আস্তে ধীরে শুরু করলেও আস্তে আস্তে খোলস থেকে বের হতে শুরু করে লিটন দাস। ক্যারিয়ারের ৭ম হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেয় লিটন দাস। হাফ সেঞ্চুরির পরেই এক ওভারে চারটি চার হাঁকান লিটন। অসাধারণ খেলতে থাকা লিটন ৩৪তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে এক রান নিতে গিয়ে হ্যামস্টিংয়ের চোটে মাটিতে শুয়ে পড়েন। এরপর স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় লিটনকে। গুরুতর চোট হবে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
তামিম ইকবালেরর পর মাঠে নেমেছিলেন এনামুল হক বিজয়। তামিম ও লিটনের পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয় এনামুল হক বিজয়ও। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেল বিজয়। তার সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরিও ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অর্ধশত করেই ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করে বিজয়। তবে ৭৩ রান পর্যন্ত গিয়েই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। ৬২ বলে ৭৩ রান করে নাওচির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে বিজয়।
বিজয়ের পর আর কোন উইকেট নিয়ে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৫০তম ওভারে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিম। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ৪৯ বলে ৫২ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। অপর প্রান্তে ১২ বলে ২০ রান করে অপরাজিত ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জিম্বাবুয়ের পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছে নাওচি এবং সিকান্দার রাজা।
৩০৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে জিম্বাবুয়ে। তবে শুরুটা ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। প্রথম ওভারের শেষ বলেই মুস্তাফিজের বলে বোল্ড আউট হন রেজিস চাকাভা। ছয় বলে মাত্র দুই রান নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় জিম্বাবুয়ে অধিনায়ককে। রেজিসের পরে তারিসাই মুসাকান্দাও সাজঘরে ফিরে। ৫ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফিরে মুসাকান্দা।
তৃতীয় উইকেটে দলের হাল ধরে ওয়েসলে মাধেভেরে এবং ইনোসেন্ট কাইয়া। তাদের জুটি অর্ধশত পেরোলে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় মাধেভেরেকে। তাদের জুটির সমাপ্তি এখানেই হয়। ২৭ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফিরে মাধেভেরে।
মাধেভেরে ফেরার পর ৬৬ বলে অর্ধশতকের দেখা পায় কাইয়া। সিকান্দার রাজার সাথে অসাধারণ জুটি গড়ে কাইয়া। জুটির মধ্যেই ৫৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয় সিকান্দার রাজা। এরপর ৩৩তম ওভারে চোট পেয়ে মাঠ স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ে শরিফুল।
ম্যাচ জেতার জন্য ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কোন বিকল্প ছিল না জিম্বাবুয়ের। সেটায় বেশ ভালোভাবেই সফল হয়েছে ইনোসেন্ট কাইয়া এবং সিকান্দার রাজা। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেয় ইনোসেন্ট কাইয়া। ১১৫ বলে শতক পূর্ন করে কাইয়া। কাইয়ার পরে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে রাজাও। মাত্র ৮১ বলে সেঞ্চুরির দেখা মিলেছে রাজার। তাদের সেঞ্চুরির পর খুব বেশীক্ষণ টিকেনি কাঔয়ার ইনিংস। মোসাদ্দেকের বলে শরিফুলের হাত বন্দি হয়ে ১২২ বলে ১১০ রান করে সাজঘরে ফিরে কাইয়া।
কাইয়া ফিরলেও দলকে জয় পর্যন্ত নিয়ে যায় রাজা। জেতার জন্য যখন প্রয়োজন আর মাত্র ৩ রান তখন ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করে রাজা। এতে ৫ উইকেট হারিয়ে ১০ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। ১০৯ বলে ১৩৫ রান করে অপরাজিত ছিল সিকান্দার রাজা। বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছে মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মেহোদি হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ – ৩০৩/২ (৫০)
লিটন দাস ৮১ (৮৯)
এনামুল হক বিজয় ৭৩ (৬২)
তামিম ইকবাল ৬২ (৮৮)
মুশফিকুর রহিম ৫২ (৪৯)
ভিক্টর নিওচি ১/৬৫
সিকান্দার রাজা ১/৪৮
জিম্বাবুয়ে – ৩০৭/৫ (৪৮.২)
সিকান্দার রাজা ১৩৫ (১০৯)
ইনোসেন্ট কাইয়া ১১০ (১২২)
মাধেভেরে ১৯ (২৭)
মুস্তাফিজুর রহমান ১/৫৭
শরিফুল ইসলাম ১/৫৭
ফলাফল – জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে জয়ী।
প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ সিকান্দার রাজা।