বুকের বাম পাশে ব্যথা

বুকের বাম পাশের ব্যথা দূর করার ২২ টি উপায়!

মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ নানা কারণে ব্যথা হতে পারে । তবে বুকের বাম পাশে ব্যথা হলেই আমরা সচরাচর সেটিকে হার্টের ব্যথা বলেই মনে করে থাকি। 

বুকের বাম পাশে ব্যথা হার্টের ব্যথা বা হার্টের সমস্যার একটি লক্ষণ। তবে হার্টের সমস্যা ছাড়াও অন্য কোন কারণেও বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। 

আজ আমরা জানবো বুকের বাম পাশে ব্যথার কারণ এবং এর করণীয় সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক। 

বুকের বাম পাশে ব্যথা কেন হয়

বুকের বাম পাশে ব্যথা হওয়াটাকে সাধরনত হার্ট এট্যাকের লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। কারণ বুকের বাম পাশে ব্যথাটা সাধারণত হৃদরোগের সাথে জড়িত থাকে।

তবে, শুধু যে হৃদপিন্ডের বা হার্টের সমস্যার কারনে বুকের বাম পাশে ব্যথা হয় তা নয়, বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথার পেছনে বহু কারন রয়েছে। 

অনেক সময় খাদ্যনালীর সমস্যার কারনে এবং কন্ঠনালী বা শ্বসনতন্ত্রের সমস্যার কারনেও বুকের বাম পাশে ব্যথা হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় হৃদরোগের সমস্যার কারনেও বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে।

তবে হৃদরোগের কারণে বুকের বাম বা ডান পাশে তীব্র  ব্যথার পাশাপাশি আরও কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন পিঠ, ঘাড়, কাঁধ ও চোয়াল ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, অস্বাভাবিক ঘাম ইত্যাদি। এমনকি হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পেতে পারে। 

নারী বা পুরুষ সব বয়সের মানুষেরই হৃদরোগ ছাড়াও বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হলে তা অবহেলা করা ঠিক নয়।

কারণ আপনি হৃদরোগে আক্রান্ত নাও হতে পারেন কিন্তু এ ব্যাপারে সকলেরই সতর্ক থাকা উচিৎ এবং  এমন অবস্থায় আমাদের উচিৎ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। 

বুকের বাম পাশে ব্যথার কারণ

বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা যে শুধু হার্ট বা হৃদপিণ্ডের সমস্যার কারনে হয় তা নয়। বুকের বাম পাশে ব্যথা হওয়ার পিছনে আরও কিছু কারন রয়েছে। তা হলো –

১. প্যানিক এ্যাটাক

অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ভয় ভীতি থেকে প্যানিক এ্যাটাক রোগের সৃষ্টি হয়। প্যানিক এ্যাটাকের কারণে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় ফলে বুকে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য স্থানেও এ ব্যথা দেখা দেয়। 

প্যানিক এ্যাটাকের ব্যথা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় তাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ভেবে রোগী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারনে এমনটি হয়ে থাকে। তবে যদি ঘন ঘন এই ব্যথা হতে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। 

২. হার্ট বা হৃদপিণ্ডের সমস্যা 

বুকের বাম পাশে ব্যথার একটি প্রধান এবং কমন সমস্যা হচ্ছে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের সমস্যা। কারণ হৃদপিণ্ডে যখন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম হয় তখন হার্ট ব্লক হয়ে যায়। হৃদপিণ্ডে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হলেই বুকে ব্যথা দেখা দেয়। 

৩. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা 

অনেক সময় খাবারে অনিয়ম হলে, ঝাল, অ্যাসিডিক, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে খাদ্যনালীতে গ্যাস্ট্রিক বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মনে হয় খাবার গলার কাছে উঠে আসছে, টক টক ঢেকুর আসে, বমি বমি ভাব হয়, বুক জ্বালা পোড়া করে এমনকি বুকেও ব্যথা হয়।

৪. শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা 

অনেক সময় শ্বাস নিতে বা ছাড়তে, কাশি দিতে বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা অনুভব হয়। আমদের শ্বাসক্রিয়া বা শ্বাসযন্ত্রে সমস্যার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুস যখন ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন শ্বাসক্রিয়ায় ইনফেকশন সৃষ্টি হয় ফলে ব্যথার অনুভূত হয়।

৫. বিষন্নতায় ভোগা

অনেক সময় বিষন্নতার কারনে হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পায় ফলে রক্ত দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হয়। তাই কেউ যখন বিষন্নতায় ভোগেন তখন বুকে ব্যথা শুরু হয়।  

৬. পাঁজরের সমস্যা 

অনেক সময় পাঁজরের হাড় বা মাংসপেশিতে আঘাত পাবার জন্য বা অন্য কোন সমস্যার কারণেও বুকের বাম পাশে ব্যথা হয়ে থাকে।

৭. ভারি জিনিস বহন করা 

দীর্ধক্ষণ ভারী কাজ করলে কিংবা হাঁটাহাঁটি করলে বা ভারী কোন কাজ করলে এবং ভারী কোন জিনিস বহন করার ফলে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে বুকে ব্যথা হয়।

৮. খাদ্যনালীর সমস্যা 

অনেক সময় খাদ্যনালীর সমস্যার কারণেও বুকের ডান বা বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এ ব্যথাটা দেখা দেয়। আবার অনেক সময় খাদ্যনালীর পেশিতে খিঁচুনি হলে বুকে ব্যথা অনুভব হয়। 

৯. পেরিকার্ডাইটিস

হার্ট বা হৃদপিণ্ডকে ঘিরে রাখা দুটি পাতলা পর্দাকে পেরিকার্ডিয়াম বলে। এই পেরিকার্ডিয়ামে প্রদাহ হলে তাকে পেরিকার্ডাইটিস বলে। পেরিকার্ডাইটিসের কারণে বুকের বাম পাশে বা বুকের মাঝ খানে ব্যথা অনুভুত হয়।

১০. পালমোনারী হাইপারটেনশন

ফুসফুসের উচ্চ রক্তচাপ হলো পালমোনারী হাইপারটেনশন। পালমোনারী হাইপারটেনশনের কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।  

বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে করনীয় কি? 

বুকের বাম পাশে ব্যথা হলে যা করতে হবে তা হলো-

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা 

বুকের বাম পাশে ব্যথা দেখা দিলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তারের দেয়া নির্দেশ মোতাবেক বুকের কিছু মেডিকেল টেস্ট করাতে হবে যাতে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন আপনার সমস্যাটা কোথায়। আপনার সমস্যা অনুযায়ী ডাক্তার যে টেস্ট গুলো করতে দিবেন তা হলো-

১. বুকে  X-ray পরীক্ষা 

২. রক্ত পরীক্ষা করা

৩. ECG পরীক্ষা 

৪. Computerised Tomography 

CT scan পরীক্ষা 

৫. Echocardiogram পরীক্ষা 

৬. Coronary catheterization পরীক্ষা ইত্যাদি। 

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যা বুকের বাম পাশে ব্যথা থেকে সাময়িক ভাবে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো জেনে নিন। 

বুকের বাম পাশে ব্যথা উপশমের খাবার

আদা

খাদ্যনালীর সমস্যার কারণে যদি বুকে ব্যথা হয় তবে আদা হতে পারে উত্তম সমাধান। আদা খাদ্যনালীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে থাকে। আদা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। 

কাজুবাদাম 

কাজুবাদাম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। বুকের বাম পাশে ব্যথা বা পেটের ব্যথা থেকে সাময়িক ভাবে মুক্তি পেতে কাজুবাদাম বা কাজুবাদামের জুস পান করুন। কার কাজুবাদাম পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। তবে  কাজুবাদাম যেহেতু উচ্চ মাত্রার ফ্যাট সমৃদ্ধ তাই পরিমান মতো খেতে হবে। 

আপেল সিডার ভিনেগার

গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যার কারণে যদি বুকে ব্যথা হয় তবে সে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপেল সিডার ভিনেগার বিশেষ ভুমিকা রাখে। আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

উপসংহার 

পরিশেেষে বলা যায় প্রতিটি মানুষের উচিৎ নিজেকে সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখার চেষ্টা করা। তাই বুকের ডান বা বুকের বাম পাশে ব্যথা দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে হার্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা কার্ডিওলজিস্ট দেখাতে হবে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং রক্তের চর্বির পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেক চলতে হবে।

যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সেবন করতে হবে এবং কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। সেই সাথে রক্ত চলাচল সচল রাখার জন্য এবং হার্টের ওপর কাজের চাপ কমানোর জন্য ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন মতেই ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না।

এছাড়াও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এবং চর্বি জাতীয় খাবার ও লবণ পরিহার করতে হবে। ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কোমল পানীয়, অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top