আজকাল মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ। বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ। বুকে চাপ ধরা বা বুকে ব্যথাও তেমনি একটি উপসর্গ মাত্র। এই উপসর্গ থেকে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক বিপদ। তাই বুকে চাপ হলে করণীয় কী সে বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত। এতে আপনি বড় কোনো বিপদ থেকে বেঁচে যেতে পারেন।
Table of Contents
বুকে চাপ হলে করণীয়
বিভিন্ন কারণে আপনার বুকে চাপ ধরতে পারে তবে তা দীর্ঘস্থায়ী ও স্বল্পস্থায়ী হতে পারে। বুকে ব্যথা বা বুকে পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কী সে বিষয়ে জেনে রাখা ভালো। সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী এসব ব্যথা একজন মানুষের জীবনে নিয়ে আসতে পারে বিপর্যয়। তাই এ ক্ষেত্রে সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেই বুকে চাপ হলে করণীয় বিষয়সমূহ-
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
বুকে ব্যথা বিভিন্ন কারণের হতে পারে। অনেক সময় বুকে অস্বস্তি লাগা বা বুকে চিন চিন ব্যথা হয়ে থাকে। ব্যথা বা চাপ যে ধরণেরই হোক না কেনো বুকে চাপ হলে করণীয় সঠিক কাজটি হলো একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। ঠিক কি কারণে আপনার বুকে ব্যথা হচ্ছে বা চাপ ধরে তা একজন চিকিৎসকই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারবেন।
জরুরিভাবে হাসপাতালে যাওয়া
হঠাৎ করে যদি বুকে ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে এটি। অনেক সময় রোগীর এই ব্যথা তীব্র হতে পারে। বুকের মাঝখানে ব্যথা হলে করণীয় কাজটি হলো রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। এমন জরুরি অবস্থায় রোগীকে বাড়িতে রাখা মোটেও নিরাপদ হয়।
হাসপাতালে যাওয়ার আগে করণীয়
কোনো কারণে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে বা চাপ ধরলে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে নেবার আগের সময়টাতে জরুরি এ্যাম্বুলেন্স বা যানবাহন যোগাড় করতে হবে। এ সময় আপনাকে অবশ্যই শান্ত থাকতে হবে। উদ্বিগ্ন হওয়া এক্ষেত্রে একদমই উচিত নয়। রোগীকে বসে পড়তে হবে; সম্ভব হলে শুয়ে পড়তে হবে। সাথে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যাওয়া জরুরি।
ধূমপান পরিত্যাগ করুন
কখনও বুকে চাপ ধরলে বা ব্যথা হলে আপনার সতর্ক হওয়া জরুরি। আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করুন। তাই সবার আগে ধূমপান পরিত্যাগ করা আপনার জন্য মূল করণীয় বিষয়। ধূমপান রক্তনালিতে চর্বি জমার প্রক্রিয়াটিকে আরও দ্রুত করে তোলে। সাথে করোনারি ধমনীকে সংকুচিত করে হার্ট অ্যাটাকের সৃষ্টি করে।
মদ্যপান পরিত্যাগ করুন
বুকে চাপ হলে করণীয় বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো মদ্যপান পরিত্যাগ করা। আজকাল যুব সমাজের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মদ্যপান হার্টের জন্য খুবই খারাপ। যাদের হার্টের সমস্যা আছে বা বুকে চাপ ধরা বা ব্যথা অনুভূত হয় তাদের জন্য অবশ্যই মদ্যপান নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত মদ্যপান বহু রোগের কারণও বটে।
কায়িক পরিশ্রম
শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বর্তমান যুগের একটা সমস্যা। আর এই ওজন নানা ব্যাধির কারণও। প্রতিনিয়ত আমাদের কায়িক পরিশ্রমের অভ্যাস কমে যাচ্ছে। নানা রোগ কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা উচিত।
খাদ্যাভ্যাস
বর্তমান সময়ে মানুষ ফাস্টফুডের দিকে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। তেল-মশলাযুক্ত খাবার, সল্টি খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার আজকাল মানুষ বেশি পছন্দ করে। কিন্তু এসব খাবার হৃদরোগের কারণ। এছাড়া এগুলো খেলে শরীরে কোলেস্টেরল বাসা বাঁধে, তৈরি হয় গ্যাস৷ তাই আমাদের শাক-সবজি, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। যা শরীরকে ভালো রাখে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
বুকে চাপ ধরলে বা বুকে ব্যথা হলে অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপের দিকে নজর দিন। উচ্চ রক্তচাপ বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত চিন্তা বাদ দিন
অতিরিক্ত চিন্তা, মানসিক উদ্বেগ থেকে অনেক সময় বুকে চাপ ধরতে পারে। তাই অতিরিক্ত চিন্তা করা, স্ট্রেস নেওয়া বাদ দিন। অতিরিক্ত দুঃচিন্তা মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও স্ট্রেস মুক্ত জীবন-যাপন করতে সবসময় হাসিখুশি ও প্রাণোচ্ছ্বল থাকুন।
মেডিটেশন করুন
শরীরের যত্ন যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্রয়োজন মনের যত্নের। কারণ মনের যত্নের সাথে শরীর সম্পৃক্ত। মানসিক অসুখ ধীরে ধীরে শরীরের অসুখ তৈরি করে যেমন- অনেক সময় বুকে চাপ ধরা। কায়িক শ্রমের সাথে আপনাকে অবশ্যই মেডিটেশন করতে হবে। মেডিটেশন মনের প্রশান্তি আনার একটি ভালো পন্থা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ডায়াবেটিস খুবই ভয়াবহ একটি রোগ। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি খুব বেশি থাকে৷ এছাড়া বুক ব্যথা ও চাপ অনুভব হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত নিয়মিত হার্টের পরীক্ষা করানো।
বুকে চাপ কেন হয়?
অনেক কারণেই বুকে চাপ হতে পারে। এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে কিছু কিছু কারণে বা রোগে সাধারণত বুকে চাপ অনুভূত হয়। বুকে চাপ হবার কারণগুলো হলো-
- বুকে চাপ অনুভূত হলে সাধারণত হার্টের সমস্যাকে ধরে নেওয়া হয়৷ হার্টের সমস্যা থাকলে বুকে চাপ ধরা বা ব্যথা হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে বুকে চাপ ধরে।
- অনেকের হাঁটলে বা সিঁড়ি ভাঙলে বুকের চাপ ধরা ভাব বেড়ে যায়।
- পূর্বে হার্ট অ্যাটাকের হিস্ট্রি থাকলে।
- হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে।
- বুকের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে।
- হঠাৎ ভয় পেয়ে আতঙ্কিত হলে বুকে চাপ ধরে।
- অতিরিক্ত দুঃচিন্তা করলে।
- অতিরিক্ত উদ্বেগ ও স্ট্রেস বুকে চাপ ধরার কারণ।
বুকের বা পাশে ব্যথা হলে করণীয়
বুকের বা পাশে ব্যথা হলে সাধারণত হার্টের ব্যথা হিসেবে এটিকে ধরা হয়। যদি বুকের বা পাশে মাঝেমধ্যে ব্যথা করে বা চিন চিন করে ব্যথা করে। তবে আপনাকে অবশ্যই একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷ তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা করে হার্টের সমস্যা বা ব্লক পেলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা ওষুধ দিবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ বন্ধ করা যাবে না৷ সেই সাথে খাবার নিয়ন্ত্রণও জরুরি।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমানোর উপায়
অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে বুকে ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফাপা প্রভৃতি নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ঘরোয়া কিছু উপায়ে গ্যাসের সমস্যা সমাধান করা যায়। পেট ফাপা বা বুকে জ্বালা করলে এক টুকরা আদা মুখে রাখলে এ সমস্যার সমাধান হয়। টক দই ভালো একটি প্রো-বায়োটিকের উৎস, যা হজমে সহায়তা করে। লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়া বা উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার বুকের ও পেটের গ্যাস কমানোর জন্য সহায়ক।
বুকে চাপ কী করোনার লক্ষণ?
কোভিড পরবর্তী কিছু লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়।
অনেক সময় কোভিড রোগী সেরে ওঠার পরও শুকনো কাশি হয় ফলে ফুসফুসের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়৷ প্রচন্ড কাশি হলে বুকের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং বুকের খাঁচায় ব্যথা করে। তাই করোনায় বুকে ব্যথা হলে করণীয় বিষয় জেনে রাখতে হবে। বুকে ব্যথা বেশি হলে বা কাশিতে বুকের উপর চাপ সৃষ্টি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে হবে।
উপসংহার
বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ ধরা বিষয়টি কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। তাই বুকে চাপ হলে করণীয় কী এ বিষয়ে পূর্বেই জেনে রাখা উচিত। আপনার পরিবারে হার্টের অসুখ বা আপনার ৪০ বছর বয়স হলে এসব বিষয়ে সতর্ক হউন। সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ ও সতর্কতা পারে আপনাকে রক্ষা করতে।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!