আগামী ২২ নভেম্বর মারাকানা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ভোর ৬:৩০ টায় দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের ম্যাচে স্বাগতিক ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা।
দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল ফেডারেশনের (কনমেবল) অধীনে ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ৫টি করে ম্যাচ সম্পন্ন করেছে উভয় দল।
৫ ম্যাচ শেষে ৪ জয় ও ১ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ১০ দলীয় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত ইকুয়েডর, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও পেরুর বিপক্ষে জয় পেলেও শেষ ম্যাচেই উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলের হারে হোঁচট খেয়েছে আলবিসেলেস্তেরা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাদের বিরুদ্ধে জয় চিনিয়ে আনতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন কোচ লিওনেল স্কালোনি।
অন্যদিকে, ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অন্যান্য যেকোনো বারের মতো এবার নিজেদের চিরচেনা পার্ফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ স্বাগতিকরা।
২০২২ বিশ্বকাপ ভরাডুবিতে কোচ তিতের পদত্যাগের পর রামোন মেনেজেসকে ভারপ্রাপ্ত করা হলেও সমর্থকদের ভালো খেলা উপহার দিতে পারেনি হলুদ জার্সিধারীরা।
তাই, বাছাইপর্ব শুরুর আগেই মেনেজেসকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় সাবেক ফ্লুমিনেস কোচ ফের্নান্দো দিনিজকে।
নতুন কোচে আশার আলো দেখলেও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ৫ ম্যাচে ২ জয়, ১ ড্র ও ২ হার নিয়ে ৭ পয়েন্টে টেবিলের পঞ্চমে স্থানে সাবেক পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিনয়নরা।
শেষ ২ ম্যাচে উরুগুয়ে ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে হার, দলের বাজে ফর্ম ও নেইমারের অনুপস্থিতিতে লিওনেল মেসির দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে জয় পেতে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে ব্রাজিলের।
Table of Contents
বিগ ম্যাচকে সামনে রেখে দুই দলের স্কোয়াড (Brazil and Argentina Squad)
আর্জেন্টিনা: উরুগুয়ের বিপক্ষে হারের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ শিরোপা জয়সহ টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির অধীনে পূর্নশক্তির দল নিয়ে মারাকানায় মাঠে নামবে।
উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে ২৮ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন আর্জেন্টাইন বস। দলের ডিফেন্ডার কোটায় ডাক পেয়েছেন নতুন দুই মুখ পাবলো মাফফেও এবং ফ্রান্সিসকো ওর্তেগা। দেখে নিন ক্লাবসহ ২৮ জন খেলোয়াড়ের তালিকা:
খেলোয়াড় | ক্লাব | খেলোয়াড় | ক্লাব |
লিওনেল মেসি (অধিনায়ক) | ইন্টার মিয়ামি | ফ্রান্সিসকো ওর্তেগা | অলিম্পিয়াকোস |
লুকাস ওকাম্পোস | সেভিয়া | পাবলো মাফফেও | মায়োর্কা |
হুলিয়ান আলভারেজ | ম্যানচেস্টার সিটি | নিকোলাস ওটামেন্ডি | বেনফিকা |
পাউলো দিবালা | রোমা | মার্কোস এ্যাকুনা | সেভিয়া |
লাউতারো মার্টিনেজ | ইন্টার মিলান | ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো | টটেনহাম হটস্পার |
নিকোলাস গঞ্জালেজ | ফিওরেন্টিনা | লুকাস মার্টিনেজ কোয়ার্তা | ফিওরেন্টিনা |
অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া | বেনফিকা | জেরমান পেজেল্লা | রিয়াল বেটিস |
অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার | লিভারপুল | নাহুয়েল মলিনা | অ্যা. মাদ্রিদ |
গুইদো রদ্রিগেজ | রিয়াল বেটিস | নিকোলাস তাগ্লিয়াফিকো | লিওঁ |
এঞ্জো ফার্নান্দেজ | চেলসি | গঞ্জালো মন্টিয়েল | নটিংহ্যাম ফরেস্ট |
এক্সেকুয়েল পালাসিয়স | বায়ার লেভারকুসেন | এমিলিয়ানো মার্টিনেজ | অ্যাস্টন ভিলা |
জিওভান্নি লো সেলসো | টটেনহাম হটস্পার | হুয়ান মুসো | আটলান্টা |
রদ্রিগো ডি পল | অ্যা. মাদ্রিদ | ফ্রাঙ্কো আর্মানি | রিভার প্লেট |
লিয়ন্দ্রো পেরেদেস | রোমা | ওয়াল্টার বেনিতেজ | পিএসভি |
ব্রাজিল: নেইমার, থিয়াগো সিলভা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, এডারসন ও রিচার্লিসনের মতো তারকা খেলোয়াড় ছাড়াই তুলনামূলক তরুণ শক্তির দল নিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩ পয়েন্টের খোঁজে ব্রাজিলিয়ানরা।
ফের্নান্দো দিনিজের দেওয়া ২৪ সদস্যের দলে রয়েছে নতুন প্লেয়ারদের আধিক্য। যেখানে, ব্রাজিল জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন ১৭ বছর বয়সী ভবিষ্যৎ রিয়াল মাদ্রিদ ও বর্তমান পালমেইরাস তারকা এন্ড্রিক। দেখে নিন ক্লাবসহ ২৪ জন খেলোয়াড়ের তালিকা:
খেলোয়াড় | ক্লাব | খেলোয়াড় | ক্লাব |
অ্যালিসন বেকার | লিভারপুল | দৌগলাস লুইজ | অ্যাস্টন ভিলা |
লুকাস পেরি | বোটাফোগো | হোয়েলিন্টন | নিউক্যাসেল ইউনাইটেড |
বেন্টো | অ্যা. পারানাইস | রাফায়েল ভেইগা | পালমেইরাস |
এমারসন রয়্যাল | টটেনহাম হটস্পার | ভিনিসিয়াস জুনিয়র | রিয়াল মাদ্রিদ |
মার্কুইনোস | পিএসজি | হোয়াও পেদ্রো | ব্রাইটন হোব এন্ড অ্যালভিয়ন |
রেনান লোদি | অলিম্পিক মার্শেই | রদ্রিগো | রিয়াল মাদ্রিদ |
গ্যাব্রিয়েল মাগালহাইস | আর্সেনাল | রাফিনহা | বার্সেলোনা |
নিনো | ফ্লুমিনেস | এন্ড্রিক | পালমেইরাস |
ব্রেমার | জুভেন্টাস | পেপে | পোর্তো |
কার্লোস অগাস্টো | ইন্টার মিলান | পাউলিনহো | অ্যা. মিনেইরো |
আন্দ্রে | ফ্লুমিনেস | গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি | আর্সেনাল |
ব্রুনো গুইমারেস | নিউক্যাসেল ইউনাইটেড | গ্যাব্রিয়েল জেসুস | আর্সেনাল |
পরিসংখ্যানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ! (Head to head statistics)
১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সর্বপ্রথম মুখোমুখি হয় দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা।
১৯১৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১০৯ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। তন্মধ্যে ব্রাজিলের জয় ৪৩ বার, আর্জেন্টিনা জিতেছে ৪০ বার এবং ড্র হয়েছে ২৬টি ম্যাচ।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার।
১৯৪০ সালের ৫ মার্চ “রোকা কাপের” প্রথম ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাঠ বুয়েন্স আয়ার্সে ৬-১ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে ম্যাচ জেতার রেকর্ড করে আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা।
দুই দলের মুখোমুখি দেখায় সর্বোচ্চ ৮ গোল করে গোল স্কোরারের তালিকায় শীর্ষে আছেন প্রয়াত ব্রাজিলিয়ান তারকা পেলে। যেখানে, ব্রাজিলের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা জাভিয়ের জানেত্তি।
আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের শেষ পাঁচ ম্যাচের রেকর্ড (Result of the last 5 matches)
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ বা কোপা আমেরিকা বা বিশ্বকাপ, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ যেভাবেই অনুষ্ঠিত হোক না কেনো তা বরাবরই রোমাঞ্চকর।
বাংলাদেশের সমর্থকরা তো বটেই সাথে পুরো বিশ্বের ফুটবল সমর্থকরাও এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকেন অধীর আগ্রহে। অতীত ইতিহাসে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলেও শেষ ৫ মুখোমুখি দেখায় সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেছে উভয় দল।
১৭ অক্টোবর২০১৮ : প্রীতি ম্যাচ | আর্জেন্টিনা | ০-১ | ব্রাজিল |
৩ জুলাই২০১৯ : কোপা আমেরিকা | আর্জেন্টিনা | ০-২ | ব্রাজিল |
১৫ নভেম্বর২০১৯ : প্রীতি ম্যাচ | আর্জেন্টিনা | ১-০ | ব্রাজিল |
১১ জুলাই২০২১ : কোপা আমেরিকা(ফাইনাল) | আর্জেন্টিনা | ১-০ | ব্রাজিল |
১৭ নভেম্বর২০২১ : বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব | আর্জেন্টিনা | ০-০ | ব্রাজিল |
শিরোপা বিচারে এগিয়ে কোন দল? (Comparison by trophies)
ফুটবল বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল হলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ এবং ২০০২ সালে শিরোপা জয়সহ মোট পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড নিজেদের করে রেখেছে সেলেসাওরা।
অপরদিকে, বিশ্বকাপ জয়ের দিক দিয়ে ব্রাজিল থেকে খানিকটা পিছিয়ে আছে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮, ১৯৮৬ এবং ২০২২ সালে হওয়া সদ্য কাতার বিশ্বকাপ জয় করে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে নেয় আলবিসেলেস্তেরা।
এছাড়াও, আর্জেন্টিনার রয়েছে ১৫টি কোপা আমেরিকা শিরোপা, ১টি প্যান-আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ, ২টি কনমেবল শিরোপা এবং ১টি ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ।
সে তুলনায় ব্রাজিলের ঝুলিতে রয়েছে ৯টি কোপা আমেরিকা, ২টি প্যান-আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ ও ৪টি ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ।