ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন বি বা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স মূলত জল-দ্রবনীয় ভিটামিন, যা খাদ্য বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বি ভিটামিনগুলোর ৮ টি ভিটামিন রয়েছে যাদের একত্রে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলা হয়ে থাকে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাবে শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের বিভিন্ন মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই সুস্থ সবল থাকতে প্রাত্যহিক জীবনে ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই।
ভিটামিন বি এর অভাবে কি রোগ হয় ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
Table of Contents
ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার –
শারীরিক এবং মানসিক সুস্বাস্থ্যের এবং সুস্থতার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন ধরণের কার্য সম্পাদন করে থাকে। এমনকি বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ভিন্ন খাদ্য উৎস থেকে পাওয়া যায়। তবে কিছু খাদ্য রয়েছে যাদের মধ্যে কমবেশি আটটি ভিটামিনই বিদ্যমান থাকে। যেমন গরুর কলিজা ও মাংস, দেশী ও টার্কি মুরগী, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ, শীম ও মটরশুঁটি, সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, কলা ইত্যাদি।
শক্তিবর্ধক (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) মেডিসিন কিনুন আমাদের শপ থেকে!
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স –
পূর্বেই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সম্পর্কে কিছুটা ধারণা প্রদান করা হয়েছে।এবার আসুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স মূলত একত্রিত আটটি ভিটামিনের যৌগ। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভিটামিনগুলো যথাক্রমে- থায়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২), নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি৬), বায়োটিন (ভিটামিন বি৭), ফলিক
এসিড (ভিটামিন বি৯), এবং কোবালামিন (ভিটামিন বি১২) । ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শক্তির উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে থাকে। ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং কোষ বিপাকের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম –
শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি এর অভাবে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। তাই ভিটামিন বি এর অভাবজনিত রোগের চিকিৎসায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন বি শরীরে আবার নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিয়ম মেনে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত।
অনেক ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট বাজারে রয়েছে। যেমন এনপ্লেক্স বি ট্যাবলেট, কমভিট বি ট্যাবলেট, ভিলেট বি ট্যাবলেট, র্যানভিট বি ট্যাবলেট, এবং ফ্ল্যাবিট ট্যাবলেট ইত্যাদি। এই ট্যাবলেট প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণের পর ২-৪ চামচ পরিমাণ খেতে হবে। তবে উত্তম হবে শরীরের ঘাটতি অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা। এবং সকলের উচিত প্রতিদিন ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যেনো শরীরে ভিটামিন বি এর ঘাটতি দেখা না দেয়।
আরো পড়ুনঃ
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার এবং এর উপকারিতা জেনে নিন –
ভিটামিন বি১২ ইনজেকশন –
ভিটামিন বি১২ ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের আটটি ভিটামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। ভিটামিন বি১২ শরীরে অনেক ধরণের কাজ করে থাকে। ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্তকণিকা তৈরীতে ভূমিকা পালন করে বিধায় এর অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এমনকি ভিটামিন বি১২ অভাবে ক্লান্তি, হতাশা, বিরক্তিবোধ এবং মানসিক চাপ ইত্যাদি সমস্যা বৃদ্ধি পায়। শরীরে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি দেখা দিলে তাই ভিটামিন বি১২ ইনজেকশন প্রদান করা হয়ে থাকে যা শরীরে ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ করে শরীরকে সুস্থ সবল রাখে।
এই ভিটামিন বি১২ ইনজেকশনে Cyanocobalamin and Phenol নামক সক্রিয় উপাদান রয়েছে। ভিটামিন বি১২ ইনজেকশন গ্রহণে বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এই ইনজেকশন সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তবে উত্তম হচ্ছে প্রতিদিন প্রাকৃতিক খাদ্য সম্পদ থেকে ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা যেনো শরীরে ভিটামিন বি এর চাহিদা পূরণ হয়।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
ভিটামিন বি অভাবজনিত রোগ – ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন বি এর অভাবজনিত কারণে শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্য মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেহেতু ভিটামিন বি কোনো একক ভিটামিন নয়, এটি একটি গ্রুপ ভিটামিন যাতে রয়েছে আটটি উপাদান। সুতরাং এই আটটি ভিন্ন উপাদানের কারণে বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক কোন ভিটামিন বি এর অভাবে কি ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
*ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন এর অভাবজনিত রোগ –
১. বেরিবেরি রোগ সৃষ্টি হয়
২. ওজন কমে যায়
৩. কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগ হতে পারে
৪. কখনো কখনো শর্ট মেমোরি লস হয়ে যায় ইত্যাদি
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!
ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিন এর অভাবজনিত রোগ –
১. ঠোঁট লাল হয়ে যায়
২. ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে
৩. মুখের আলসার হতে পারে
৪. চুল চুলকানি সহ চোখে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন এর অভাবজনিত রোগ –
১. চুল পড়ে যায়
২. বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দেয়
৩. অনিদ্রায় ভুগতে হয়
৪. সিদ্ধান্তহীনতার সৃষ্টি হয়, এমনকি স্মৃতিশক্তি লোপ পায়
ভিটামিন বি৫ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড এর অভাবজনিত রোগ –
১. মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে
২. বমিবমি ভাব হয়
৩. পা জ্বালা পড়া করে
৪. অল্পতেই অবসাদ ঘিরে রাখে এবং বিষন্নতা কাজ করে
ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন এর অভাবজনিত রোগ –
১. ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, লালচে বর্ণ ধারণ করে
২. অবসাদ দেখা দেয়
৩. জিহবায় ঘা হয় বা জিহ্বা ফুলে যায়
৪. যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে সহজেই
ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন এর অভাবজনিত রোগ –
১. হাত পা অসার হয়ে যায়
২. মুখের রুচি হারিয়ে যায়
৩. অকালে চুল পড়ে
৪. চোখের ভেতর শুকিয়ে যায়
ভিটামিন বি৯ বা ফলিক এসিড এর অভাবজনিত রোগ –
১. চুল ধূসর হয়ে পড়ে
২. ত্বক ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে
৩. নিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায়
৪. মেজাজ খিটখিটে থাকার পাশাপাশি অবসাদ ঘিরে রাখে
ভিটামিন বি১২ বা কোবালামিন এর অভাবজনিত রোগ –
১. জিহবার মসৃণতা থাকে নাহ এবং মুখে ঘা হয়
২. মাথা ঘোরার সমস্যা লেগে থাকে
৩. দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়
৪. অবসাদে ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি হঠাৎ হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
বাংলাদেশে মোটামুটি সব ধরনের ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু মানুষ এই ভিটামিনের অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ জনগণ রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে যার প্রধান কারণের মধ্যে ভিটামিন বি এর অভাব অন্যতম।
যার ফলে গর্ভবতী মায়েরা প্রতিনিয়ত ত্রুটিযুক্ত সন্তান জন্মদান করছে।ভিটামিন বি এর অভাবজনিত রোগ দমাতে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান প্রদান করার পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার রাখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
Writer: Rubi Manjuman Mou