মধুর ৭টি উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সমূহ জেনে নিন!

মধুর উপকারিতা – মধু খুবই মিষ্টি এবং টেষ্টি একটি খাবার, যার তুলনা কোন কিছুর সাথেই করা যায় না। মধুর উপকারিতা বিষয়ে আমরা সবাই একমত যে এটি খুবই উপকারি। কিন্তু কি ধরণের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় তা হয়তো জানি না। তাই এই বিষয়ে আজ আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। 

ভিডিও তে মধুর ৭টি উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক দেখতে এখানে ক্লিক করুন!

মধুতে ঋতুভেদে রং এর তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এই রং এর কারণে অনেকসময় আমরা খাঁটি মধু চেনার ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে থাকি। তবে এখনকার সময়ে অনেক খামারিরা মধু উৎপাদন করে এবং তাদের কাছ থেকে খাঁটি মধু পাওয়া সম্ভব।

এটি বিভিন্ন সিজনাল অ্যালার্জি, এবং ঠান্ডা-কাশির মত সমস্যাগুলো সহজেই প্রতিরোধ করতে পারে বলে গবেষণায় প্রমানিত। তাছাড়া ক্ষত সারাতে প্রচিনকাল থেকেই মধু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর আরো উল্লেখ্যযোগ্য উপকারিতা নীচে বর্ণণা করা হলো। 

মধুর উপকারিতা

পরিমিত পরিমাণ মধু খাওয়া স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারি এবং এটি থেকে আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে পারি, যেমন-

১) রোগ-প্রতিরোধ:

মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমা বৃদ্ধি করে এবং সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়া রোধ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আমাদের শরীরে তৈরি হওয়া ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। যার ফলে শরীরের কোষগুলো অতিরিক্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়।

গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে কোন মানুষ নিয়মিত অন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত যৌবন অটুট থাকে। তাছাড়া এটি ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিকাশও রোধ করে। সরাসরি খাঁটি মধু কিনুন আমাদের শপ থেকে।

২) অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য:

গবেষণায় দেখা গেছে মধুতে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া এবং ছত্রাক ধ্বংস করার মতো উপাদান রয়েছে। মধু প্রাকৃতিকভাবে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ধারণ করে যেটি একটি উন্নতমানের এন্টিসেপটিক।

তবে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসাবে এর কার্যকারিতা মধুর উপর নির্ভর করে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।

৩) ক্ষত নিরাময়:

ক্ষত নিরাময়ে মধুর উপকারিতা অপরিসীম। মধুতে রয়েছে জীবাণু ধ্বংস করার উপাদান এবং এটি শরীরের কোষকে পুনর্জন্মের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। মধু ক্ষত নিরাময়ের সময়কালকে অবিশ্বাস্যভাবে কমিয়ে দেয়। অনেক হাসপাতালে ক্ষত নিরাময়ে সহযোগী হিসাবে মধু ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এই মধুগুলো সাধারণত জীবাণুমুক্ত এবং উন্নত গ্রেডের হয়ে থাকে। তাই বলে দোকান থেকে মধু কিনে ক্ষততে মাখানো কোন ভাল আইডিয়া নয়।

>> সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা জানুন…

৪) ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের উৎস:

এটি একটি বিশেষ ধরণের জৈব যৌগ যা বিভিন্ন উদ্ভিদে পাওয়া যায়। মধুতে থাকা এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্টের পাশাপাশি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট হিসাবেও আমাদের শীরে কাজ করে। যা রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। 

৫) পরিপাক ত্বন্ত্রের সহায়তা:

ডায়রিয়ার মতো শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়ক হিসাবে কিছু ক্ষেত্রে মধু ব্যবহার করা হয়, যদিও এর উপর কোন গবেষণা নেই। মধু পেটে ক্ষত (আলসার) সৃষ্টিকারী জীনাণু যেমন হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরির চিকিৎসায়ও কার্যকর বলে প্রমাণিত।

তাছাড়া মধুর উপকারিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচেছ, এটি প্রোবায়োটিক হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি অন্ত্রের মধ্যে থাকা ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে পুষ্ট করে। যা যা কেবল হজমের জন্য নয় বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৬) ঠান্ডালাগা বা গলাব্যথা প্রশমণ:

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ঠাণ্ডালাগা বা গলা ব্যথার মতো সমস্যাগুলো প্রায়শই দেখা যায়। বিশেষকরে বাচ্চারা খুব ঘনঘন এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই সর্দি বা গলা ব্যথা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর মধু। চায়ের সাথে সামান্য লেবুর রস এবং মধু যুক্ত করে খেলে এটি সহজেই সমাধান হয়ে যাবে।

তাছাড়া কশি সারাতেও মধু কার্যকর। গবেষণায় বলা হয় মধু কাশির ঔষধ ডেক্সট্রোমেথারফ্যানের মতোই কার্যকর। তাই কাশি থামাতে এক বা দুই চামচ মধু খান, উপকার পাবেন।

৭) বুকজ্বালাপোড়া রোধ:

মধু অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বুক জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতিকে নির্মুল করতে পারে, যদিও এটি গবেষণায় প্রমাণিত নয়। তবে ২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনা থেকে জানা যায় মধু খাদ্যনালী এবং পাকস্থিলী এর অপরিপকিত খাদ্যের উর্ধ্বমূখি প্রবাহকে হ্রাস করতে সক্ষম। তাই যাদের বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা আছে তারা নিয়মিত মধু খেলে উপকার পাবেন।

রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বক নরম রাখে এবং বলিরেখা ও কালচেভাব দূর করে। ব্রণের জীবাণূ ধ্বংস করতে মধু বেশ কার্যকর। মধুর সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে রূপচর্চার কালচার আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই আছে। রূপচর্চায় মধুর উপকারিতা অনেক, যেমন

এক চা চামচ মধুর সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করার পর বিশ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে নিমিষেই ত্বক উজ্জল হয়ে যায়। 

এক টেবিল চামচ মধুর সাথে একই পরিমাণ টকদই মিশিয়ে মুখে লাগানোর ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে মুখের তেলতেলে ভাব একদম চলে যায়। ব্রণ দূর করতেও এই প্যাক ব্যবহার করা হয়।

ছোট দুই টুকরা পেঁপে চটকে এর সাথে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন প্যাক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য যেমন উপকারি, পাশাপাশি বয়সের ছাঁপ দূর করতে এটি ভাল উপায়।  

এগুলো ছাড়াও আরও অনেকভাবে রূপচর্চায় মধু ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

মধুর ক্ষতিকর দিক

সাধারণত মধু সরাসরি মৌচাক থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়,তাই এতে কিছু ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া যেমন ক্লোস্টিডিয়াম বটুলিনাস এবং ছত্রাক থাকার সম্ভাবনা থাকে। যে কারণে এটি এক বছরের কম বয়সী শিশুদের কখনই দেওয়া উঁচিত নয়। শিশুরা অতিরিক্ত মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অলসতা, দুর্বল কান্না, বা খাওয়ার রুচি নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যাগুলো হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মধু খেলে প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়া বা বমির ভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কিছু গুরুতর উপসর্গ যেমন ঝাপসা দৃষ্টি, পেশী দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত মধু শরীরের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, ওজন বাড়তে পারে, পেটের সমস্যা হতে পারে, দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

>> আসল মধু চেনার উপায় জেনে নিন!

শেষ কথা

মধু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারি খাবার। মধুর উপকারিতা সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য পরিমিত পরিমাণ মধু খাওয়া প্রয়োজন। কারন এটি একদিকে যেমন খুবই উপকারি, পাশাপাশি অতিরিক্ত মধু খাওয়ার মধ্যমে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রাম মধুই যথেষ্ট, এর চেয়ে বেশি খাওয়া ঠিক হবে না।

পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে আরও পড়ুন…

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top