মেছতা দূর করার উপায় – বয়স যেটাই হোক, দাগহীন সুন্দর চকচকে ত্বক কে না চায়। কিন্তু বয়স ৩০ পেরোলেই সৌন্দর্যসচেতনদের মনের ভেতর মেছতা যেন এক আতংকের নাম। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, মেছতা একটি সাধারণ চর্মরোগ হলেও মেছতা দূর করার উপায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নাক, মুখ ও গলার সমস্যায় কার্যকরী (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) মেডিসিন কিনুন আমাদের শপ থেকে!
কারণ, মেছতা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসা না নিলে মেছতা পুরোপুরি দূর করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তাই আসুন জেনে নিই এর কারণ ও প্রতিকার।
মুখের মেছতা দূর করার উপায় সমূহ ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন
Table of Contents
মেছতা কি?
মেছতাকে চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় মেলাজমা বা কোলাজমা বলা হয়। মেছতা বা মেলাজমা হলো একটি সাধারণ পিগমেন্টেশন ডিসঅর্ডার যা মূলত মুখের ত্বকে কালো, বাদামী বা ধুসর ছোপ ছোপ দাগ সৃষ্টি করে। মেছতার দাগ দেখা মাত্রই অনেকের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ লেগে যায় এবং আতংকিত হয়ে মেছতা দূর করার উপায় খুজতে থাকেন।
আসলে এটি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবার মত কোন সমস্যা নয়। মেছতা যেমন কোন এলার্জি না তেমনি ত্বকের ক্যান্সার বা অন্য কোন ভয়ানক চর্মরোগ নয়। মেছতা ত্বকের সৌন্দর্যহানী ছাড়া আর কোন ক্ষতি করেনা এবং প্রাথমিক অবস্থায় পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব।
মেছতা সাধারণত দু’গালে, নাকের ওপরে, থুঁতনি এবং উপরের ঠোঁটের অংশে দেখা যায়। এছাড়াও, মেছতা কপাল, গলা এবং কাঁধে হতে পারে।
মেছতা সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে-
- এপিডার্মাল মেলাজমা: এটি ত্বকের ওপরের স্তরে হয়ে থাকে এবং নিয়মিত যত্ন ও চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব।
- ডার্মাল মেলাজমা: এটি ত্বকের নিচে ভেতরের স্তরে হয়ে থাকে এবং এটিও চিকিৎসায় পুরোপুরি দূর করা সম্ভব।
- মিশ্র মেলাজমা: এটি এপিডার্মাল এবং ডার্মালের সম্মিলিত বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে এবং প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্ব না দিলে এ ধরনের মেছতা দূর করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
>> দ্রুত ব্রণের দাগ দূর করার সেরা উপায় জেনে নিন!
মেছতা কেন হয়?
যাদের মুখে ইতিমধ্যেই মেছতার দাগ পড়ে গেছে তারা সব সময় মেছতা দূর করার উপায় নিয়ে ভাবতে থাকেন। আর যাদের মুখে এখন পর্যন্ত মেছতার দাগ পড়েনি তারা মেছতা থেকে রেহাই পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেন মেছতা কেন হয় এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা জানতে।
অনেকেই মেছতার দাগ মুখে নিয়েই মেছতা পড়ার কারন খুঁজে বেড়ান কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মেছতার সুস্পষ্ট কারন খুজে পাননা। তবে মেছতার দাগ অনেকগুলো কারনে হয়ে থাকে।
- সরাসরি সূর্যের আলো: মেছতার প্রধান কারন হলো সূর্যের আলো যা বহন করে অতিবেগুনী রশ্মি। কোন প্রতিরক্ষা যেমন সানস্ক্রিন, ছাতা ইত্যাদি ছাড়া সরাসরি অতিরিক্ত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকলে মেছতা হবার সম্ভবনা বাড়ে।
- হরমোনজনিত কারন: গর্ভকালীন অবস্থায় হরমোনের প্রচুর পরিবর্তন আসে। তাই এই সময়ে হরমোনের তারতম্যের কারনে মেছতা হতে পারে। আবার থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা মেছতার জন্য দায়ী।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ: জন্মনিরোধক ওষুধ ত্বকে মেছতার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে তোলে।
- অপরিচ্ছন্ন ত্বক এবং নিম্নমানের প্রসাধনী: ত্বকের অযত্ন অবহেলা ত্বককে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। অপরিচ্ছন্ন ত্বক এবং নিম্ন মানের প্রসাধনী মুখে মেছতার অন্যতম কারণ। এছাড়াও, অতিরিক্ত মেকআপ মেছতার ঝুঁকি বাড়ায়।
- বংশগত কারণ: অনেকের মুখে খুব অল্প বয়সে মেছতার দাগ লেগে যায়। জীনগত বা বংশগত কারনেও মুখে মেছতার দাগ হয়।
এছাড়াও, কম ঘুম, অতিরিক্ত মানুষিক চাপ, কম পানি পান, পুষ্টিকর খাবারের অভাব, অতিরিক্ত চা-কফি পান, বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ ইত্যাদি কারনে মেছতা হয়ে থাকে। তাই আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে কেন আপনার মুখে মেছতা হয়েছে। এতে করে মেছতার দাগের কোন কারন খুঁজে পাওয়া গেলে মেছতা দূর করার উপায় সহজ হবে।
>> ব্লাড ক্যান্সার কেন হয়? ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জেনে নিন!
মেছতা দূর করার উপায়
প্রাথমিক অবস্থায় মুখের মেছতার দাগ ঘরোয়া উপায়ে দূর করা যায়। আমরা আজ এমন কিছু কার্যকরী মেছতার দাগ দূর উপায় জানাবো যা থেকে আশা করি আপনারা মেছতার বিড়ম্বনা থেকে স্বস্তি পাবেন খুব সহজেই।
- এক টেবিল চামচ এ্যালোভেরা জেল সাথে এক টেবিল চামচ মধু এবং এক চামচ লেবু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেস প্যাকটি লাগিয়ে ১৫মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের মেছতার দাগসহ যেকোন দাগ কমতে শুরু করবে।
- ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে, ত্বকের হারানো রং ফিরিয়ে আনতে এবং মেছতার দাগ দূর করতে হলুদ খুব কার্যকরী। ১০ চা চামচ গরুর দুধে ৫চা চামচ হলুদ এবং ১চা চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর পুরো মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- দুধের সরে দারুচিনি গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে মেছতার দাগের ওপর লাগান। এরপর শুকানো অব্দি অপেক্ষা করুন। পুরোপুরি শুলিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে আলতোভাবে কিছুক্ষন ঘষুন।এরপর ধুয়ে ফেলুন।
- এক চা চামচ মধুতে এক চা চামচ জয়ফল গুড়া এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে মেছতার দাগে লাগিয়ে ৩০মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- এক চা চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ভালভাবে মিশিয়ে মেছতার দাগে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। পুরো মুখে লাগাতে চাইলে একদিন পর পর ব্যবহার করুন।
- কলা খাবার পর খোসা ডাস্টবিনে না ফেলে খোসাটি মেছতার জায়গায় ৩-৪মিনিট ঘষুন। এরপর ১০মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার মেছতার দাগ কমে যাবে।
- রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর কয়েক ফোটা আমন্ড ওয়েল হালকা গরম করে মেছতার জায়গায় ৫মিনিট আলতো করে মালিশ করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- রোদে অর্জুন গাছের ছাল শুকিয়ে গুড়ো করে নিন।এরপর এক চা চামচ অর্জুনের ছাল গুড়ো মধুতে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। প্রতিদিন মেছতা দাগে লাগিয়ে ৩০মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
আরও কিছু কার্যকারি উপায়
ঘরোয়া পদ্ধতির পাশাপাশি অনেকেই মেছতার চিকিৎসায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। মেছতার দূর করার জন্য চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সাধারণত ত্বকে ব্যবহারের কিছু ওষুধ পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যেমন-
- মেছতা চিকিৎসায় ডাক্তারদের প্রথম পছন্দ হাইড্রোকুইনোন (Hydroquinone) যা মেলানিন তৈরীকারী টাইরোসিনেজ নামক এনজাইমকে বাঁধা দেয়। এর ফলে ত্বকের যে স্থানে মেছতার দাগ পড়ে সেখানে মেলানিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় এবং ত্বকের কালচে দাগ হালকা হতে শুরু করে। হাইড্রোকুইনোন এর সাথে স্টেরয়েড মিশিয়ে ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। হাইড্রোকুইনিন লোশন, জেল এবং ক্রীম হিসেবে পাওয়া যায়।
- কর্টিকস্টেরয়েড ও ট্রেটিনোইন (Corticosteroids and Tretinoid) হলো আরেকটি কার্যকরী ওষুধ। এটিও লোশন, ক্রীম বা জেল হিসেবে পাওয়া যায়।
- বর্তমানে কজিক এসিড (Kojic Acid) ও অ্যাজেইলিক এসিড (Azelic Acid) এর ব্যবহার মেছতা চিকিৎসায় বেশ কার্যকর এবং সফল।
মুখের মেছতা দাগ দূর করতে কতজন কত চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার কিছু কর্মব্যস্ত মানুষ ত্বকের অযত্ন অবহেলায় মেছতার দাগ আরো বাড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু একটুখানি যত্ন আর সচেতনতা এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
সেই সাথে মেছতা দূর করার উপায় মেনে চলে দ্রুতই মেছতা মুছে ফেলা সম্ভব। তাই আজ থেকেই নিজের প্রতি যত্নশীল হোন, নিজেকে পরিচর্যা করুন আর মেছতামুক্ত দাগহীন ত্বকের অধিকারী হোন।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!