ময়দার উপকারিতা

ময়দার উপকারিতা (অজানা তথ্য) জেনে নিন!

ময়দার উপকারিতা – ময়দা শব্দটি শুনলেই প্রথমেই মনে আসে রুটি-পরোটা, বিভিন্ন টেস্টি পিঠা ইত্যাদি। আর যেহেতু এগুলো পুষ্টিকর খাবার তাই ময়দাও উপকারি- ময়দা সম্পর্কে আমার ধারণা এমনই ছিল। ময়দার উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই আমার মতো এতটুকুই জানেন। 

সকল ধরনের অর্গানিক ফুড কিনুন আমাদের শপ থেকে!

তবে ময়দার স্বাস্থ্য উপকারিতা, ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার ও দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে বেশ অবাক হয়েছি। আমার ধারণা আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। কিছুটা সময় নিয়ে পড়তে থাকুন। 

ময়দা কি?

গমের উপরিভাগের আবরণ উঠিয়ে আলাদা করার পরে পরিশোধিত গমকে পিষে সাধারণত ময়দা প্রস্তুত করা হয়। এক কথায় ময়দা হচ্ছে আটার পরিশোধিত অংশ। এটি সাদা এবং আটা থেকে অনেক বেশি মিহি হয়। 

ময়দার উপকারিতা

ময়দা আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে উপকার পেতে পারি। ময়দার রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুন, যা আমাদের শরীরের উপকার করে, তাছাড়া রূপচর্চায় ময়দা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ময়দা ব্যবহার করা যায়। ময়দার উপকারিতা সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করছি। 

স্বাস্থ্য উপকারিতা: 

ময়দায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এতে থাকা শর্করা, আমিষ, সুগার, ফাইবার, চর্বি উপাদান আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। এতে আরো আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস যা শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 

ময়দায় থাকা বিভিন্ন প্রকার মিনারেলস যেমন সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস আমাদের শরীরের জন্য দরকারি উপাদান এবং এগুলোর অভাবে শরীরে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ময়দা থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে আমরা সহজেই এই উপাদানগুলোর ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে সুস্থ্য থাকতে পারি। 

এতে থাকা সলুয়েবল ফাইবার গুলো পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার পরিমান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যে কারণে হজমে সমস্যা ও কোষ্ঠ্যকাঠিণ্য এর মতো সমস্যা গুলো সমাধানে ময়দা সহায়ক। ক্ষুদ্রান্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকেও রক্ষা করে ময়দা। 

ময়দার উপকারিতা

ওজন হ্রাস, ফুসকুড়ি, পেটফাঁপা, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এবং ক্লান্তি এর মত সমস্যাগুলোকে ময়দা দূর করতে পারে। পরিমিত পরিমান ময়দার তৈরি খাবার খেলে এই সমস্যা গুলো দূর হয়। তাছাড়া সিজোফ্রেনিয়া বা মৃগিরোগের মতো মস্তিস্কের সমস্যা সমাধানে অবদান রাখে ময়দা। 

প্রোটিনের একটি বড় উৎস হলো ময়দা। এতে থাকা প্রচুর পরিমান প্রোটিন আমাদের মাংশপেশী গঠন এবং শরীরে শক্তি যোগাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া পিঠা খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। অনেক ধরণের মজাদার পিঠা যেগুলো তৈরিতে ময়দার কোন বিকল্প নেই। 

এগুলো ছাড়াও ময়দার রয়েছে আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারীতা। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ময়দা বেশি খেলে তাদের শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করা কিছুটা কঠিন হতে পারে। তাই তাদের ক্ষেত্রে ময়দা খেতে হলে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। 

রূপচর্চায় ময়দা: 

অনেক আগে থেকেই রূপচর্চায় ময়দা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রূপচর্চায় ময়দার উপকারিতাও অনেক বেশি। যেমন-

চোখের ডার্ক সার্কেল দূর করতে:

চোখের চারপাশের ডার্ক সার্কেলগুলো দূর করতে ময়দা অন্যতম সেরা একটি প্রাকৃতিক উপায়। এই ক্ষেত্রে ময়দা, কলা এবং ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে চোখের চারপাশের অঞ্চলগুলোতে একটি প্রলেপ দিয়ে রাখুন। চোখের চারপাশের সূক্ষ ত্বককে উজ্জ্বল করার জন্য এটি দারুন। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি চেহারার ক্লান্তিভাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং আপনাকে আরো বেশি তরুন দেখাবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ময়দার উপকারিতা:

ময়দা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে অসম্ভব ভাল কাজ করে। ময়দাতে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং অ্যামাইনো এসিডগুলো ক্লিয়ারিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ময়দার সঙ্গে মধু এবং দই ব্যবহার করে একটি ফেসপ্যাক তৈর করুন। মুখ এবং ঘাড়ের সমস্ত জায়গায় এটি প্রয়োগ করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। পরে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে পরিস্কার করে ফেলুন। এটি আপনার ত্বককে আরো বেশি নরম এবং উজ্জ্বল করবে। 

ত্বকের দাগ ও বয়সের ছাপ দূর করতে:

মুখের রিংকেল, ব্রণ এবং বয়সের ছাঁপ দূর করতে ময়দার উপকারিতা বিস্ময়কর রকমের। তাছাড়া এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ়তা ধরে রাখার মাধ্যেমে আপনাকে আরো তরুন এবং সতেজ দেখাতে ভূমিকা রাখে। এই ক্ষেত্রে এক চা চামচ ময়দার সাথে কিছু শসার রস এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। সমস্ত মুখে এটি প্রয়োগ করুন এবং শুকিয়ে গেলে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে ত্বকের দাগ, ব্রণ এবং বয়সের ছাঁপ দূর হয়ে যাবে।

ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে:

তৈলাক্ত ত্বক সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। ময়দা ব্যবহার করে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কিছু পরিমান ময়দার সাথে এক চামচ বেসন, এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ গোলাপজল, এক চামচ চন্দন গুড়ো মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। সমস্ত মুখে এটি ব্যবহার করুন এবং শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব থাকবে না।

রোদে পোড়া দাগ সারাতে ময়দার উপকারিতা:

রোদে গেলে আমাদের ত্বক পুড়ে কিছুটা কলচে ভাব চলে আসে, যাকে মুখের ট্যান বলে। এটি দূর করতে ময়দা কার্যকর। দুই চামচ ময়দার সাথে এক চামচ বেসন, দুই চামচ পাকা পেপের প্লাপ এবং এক চামচ কমলালেবুর রস দিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিন। এটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, মুখের ট্যান উঠে যাবে।

চুলের যত্নে ময়দার উপকারিতা:

চালের আটা দানাদার এবাং স্টার্চি হওয়ায় চুলকে শক্ত, সোজা এবং ঝলমলে করতে দুর্দান্ত কাজ করে। সমান পরিমান ময়দা এবং মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি চুলে লাগিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঘরে তৈরি এই প্যাকটি ব্যবহার করে আপনার চুলকে সোজা, সুন্দর ও ঝলমলে করে তুলতে পারবেন।

দৈনন্দিন জীবনে ময়দার উপকারিতা: 

ফ্লোর বা সিঙ্কের তেলতেলে ভাব দূর করতে ময়দা ব্যবহার করুন। এর তেল শোষক করার ক্ষমতা রয়েছে। তেলতেলে স্থানে ময়দা ছড়িয়ে নিন। কিছু সময় অপেক্ষা করুন, এটি সমস্ত তেল শুষে নিবে। এবার একটি ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেললেই তেলতেলে সমস্যার সমাধান।

গাছকে ছোট ছোট পোকার হাত থেকে বাঁচাতে ময়দা খুব ভাল কাজ করে। পানিতে কিছু পরিমান ময়দার সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে ভালমতো ঝাকিয়ে নিয়ে এটি গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে দিন। এতে সাধারণত সব পোকা বের হয়ে আসে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

শেষ কথা

শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবারই নয়, ময়দার উপকারিতা অনেক। তবে সবকিছুরই সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে। তাই ময়দা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কিছু সমস্যা হতে পারে। তাই নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমান ব্যবহারের মাধ্যমে এর প্রকৃত উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top