সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম

সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম । সয়াবিন বীজ কি শরীরের জন্য উপকারী?

সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম – সয়াবিন বীজ যে শরীরের জন্য খুবই উপকারী এটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, যেমন- সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম কি? এটা ঠিক কি কি উপকার করে? সবাই কি খেতে পারবে? ইত্যাদি। আশা করি এই বিষয়ে আপনি সকল উত্তর এখান থেকেই পেয়ে যাবেন। 

সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম

সয়াবিন বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমান প্রোটিন ও অনেকগুলো ভিটামিন। তাছাড়াও রয়েছে গুরুত্তপূর্ণ কিছু মিনারেলস্ যেমন আয়রন, জিংক, কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রচুর ডায়েট্রি ফাইবার (Dietary fiber)। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সয়াবিন বীজ খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারি। চলুন, তাহলে দেখে নিই সয়াবিন বীজ কীভাবে খেতে হয়। 

  • প্রথমে সয়াবিন বীজ আট(8) থেকে বারো(12) ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। 
  • এরপর চুলায় মিডিয়াম আঁচে সিদ্ধ করতে থাকুন। 
  • পরিপূর্ণ সিদ্ধ হয়ে গেলে সাধারণত এর খোসাগুলো আলাদা হয়ে যায়। সিদ্ধ হলে এগুলো অল্প তেলে রান্না করে খেতে পারেন। 
  • অথবা সামান্য লবন মিশিয়ে যে কোন সালাদের সাথেও খেতে পারেন। অবশ্যই ভালমত সিদ্ধ করার পরই সয়াবিন খাবেন। 
  • সপ্তাহে সাধারণত তিন দিন সয়াবিন বীজ খেতে পারবেন। 
  • একদিনে সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম খাওয়া যাবে, কোনভাবেই এরচেয়ে বেশি খাবেন ন।  নইলে পেট ব্যথা, বা এসিডিটি হতে পারে। 

সয়াবিন বীজের উপকারিতা

সয়াবিন বীজ প্রচুর পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এবং আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। যেমন-

১. মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং ছেলেদের প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রোতিরোধ করতে সাহায্য করে সয়াবিন বীজ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি-র‌্যাডিক্যালকে নিস্ক্রিয় করার মাধ্যমে শরীরের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয় না। তাছাড়া এতে থাকা আইসোফ্লাভোন, ল্যাকটিন এবং লুনাসিন ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক কাজ করে। 

২. হার্ট ভাল রাখে সয়াবিন বীজ। এটি রক্তের এল.ডি.এল এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তাছাড়া এতে লিনোলিক অ্যাসিড ও লিনোলেনিক অ্যাসিড নামক দুইটি ফ্যাটি অ্যাসিড উল্লেখযোগ্যমাত্রায় উপস্থিত থাকে। যা উপযুক্ত রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

৩. রক্তস্বল্পতার মত বিপদজনক পরিস্তিতি এড়াতে সহায়তা করে সয়াবিন বীজ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন এবং কপার, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন পৌছে দেয়।

৪. সয়াবিন বীজ হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য মিনারেলস্ হাড়কে রাখে শক্ত ও মজবুত এবং অস্টিওপরোসিসের মত রোগের ঝুঁকি কমায়।

৫. যারা মনে করে তাদের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম তারা সয়াবিন খেতে পারেন। এতে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন স্বাস্থ্যকরভাবেই ওজন বাড়ায়। পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমান ফাইবার থাকার ফলে এটি অতিরিক্ত স্থুলতা কমাতেও সহায়তা করে। 

সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম

৬. সয়াবিন বীজে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহায়াতা করে। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার মাধ্যমে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের মতো মারাত্মক অসুখের ঝুঁকি কমায়। 

৭. যেহেতু এটি শরীরের ইনসুলিন রিসেপ্টর বাড়াতে সক্ষম তাই টাইপ 2 ডায়াবেটিস হ্রাস করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করে নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে পারেন।

৮. ত্বকচুলের জন্য উপকারি সয়াবিন বীজ। এতে থাকা ভিটামিন-ই ত্বকের পুরাতন কোষকে রিপ্লেস করে নতুন কোষ জন্মাতে সহায়তা করে, যে কারণে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ হয়, ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও টনটনে। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল বের করে দেয়, যে কারণ অয়েলি স্কিনের জন্য এটি উপকারি। পাশাপাশি ড্রাই স্কিনের জন্য উপকারী। তাছাড়া সয়াবিন বীজ চুলকে রাখে নরম, চকচকে ও মজবুত। 

যে সমস্যা থাকলে সয়াবিন বীজ খাবেন না

যাদের থাইরয়েডে কোন সমস্যা রয়েছে বা থাইরয়েড হরমোন জনিত কোন সমস্যায় ভুগছেন তারা একেবারেই সয়াবিন বীজ খাবেন না। তাছড়াও সয়াবিনে যাদের অ্যালার্জি আছে তারাও খাবেন না। 

যারা কিডনিরোগে ভুগছেন তাদেরও এটি না খাওয়াই ভাল। কারণ এতে থাকা ফাইটোস্ট্রোজেন (phytoestrogens) এর মাত্রা শরীরে বেশি হয়ে গেলে কিডনি সমস্যা আরো বাড়তে পারে। 

>> কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা |লক্ষণ,ঝুঁকি,প্রয়োজনীয় টেস্ট, ঔষধ সহ বিস্তারিত!

তাছাড়া সয়াবিনে থাকা অক্সালেট (oxalates) কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ায়। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনের জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তারাও সয়াবিন খাবেন না, এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা একেবারে কমিয়ে দিতে পারে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

পরিশেষে

সয়াবিন বীজ সম্পর্কে বলা হয় যদি আপনি সপ্তাহে তিন দিন এটি খান তাহলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের কোন অভাবই হবে না। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার, তবে মাত্রাতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উপযুক্ত ফলাফল পাওয়ার জন্য সয়াবিন বীজ খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করে খেতে হবে। সুতরাং নিয়ম মেনে সয়াবিন বীজ খান। সুস্থ থাকুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top