সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা!

সামুদ্রিক মাছ আমাদের অনেকেরই খুব প্রিয় খাবার। লোনা পানি বা মিঠা পানি, যে কোন পানির মাছই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের একটি বিশ্বস্ত উৎস। তবে সামুদ্রিক মাছ থেকে বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। যে কারণে স্বাস্থ্য উপকারিতার বিবেচনায় এই মাছগুলো কিছুটা এগিয়ে থাকে।

সামুদ্রিক মাছ

ভিডিওঃ উচ্চ প্রোটিন যুক্ত দেশীয় মাছের তালিকা ।। মাছের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

মূলত এই মাছ থেকে পাওয়া আয়োডিন, ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম সহ অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকার করে থাকে। তাবে এই মাছগুলো খাওয়ার ব্যাপারে কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয়। আমরা এখানে এই মাছগুলোর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং সমস্যা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

মোটকথা সামুদ্রিক মাছগুলোতে এমন অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় যা মিঠা পানির মাছে থাকে না। এই মাছগুলো যে সমস্ত স্বাস্থ্য উপকার করে তা নীচে বর্ণণা করা হলো। 

অপরিহার্য পুষ্টি সরবরাহ করে

সব মাছের পুষ্টি উপাদান সমান হয় না, তবে বেশিরভাগ সামুদ্রিক মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। যে কারণে এই মাছগুলো দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রজনন ব্যবহস্থার উন্নতিতে সহায়তা করে। তাছাড়া এই মাছ থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি সুস্থ হাড়ের বৃদ্ধি, ক্যালসিয়াম শোষণ এবং কোষের বৃদ্ধির পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমের দক্ষতা বাড়ায়।

হার্ট ভালো রাখে

ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড হার্ট ভালো রাখতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে যা সামুদ্রিক মাছ থেকে প্রচুর পরিমান পাওয়া যায়। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে, যেখানে দেখা যায় এটি অ্যারিদমিয়া, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক সাহ  বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার ইভেন্টের ঝুঁকি কমায়। 

যদিও ক্যাপসুল আকারেও ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই এই ব্যাপারে সামুদ্রিক মাছ খাওয়াকেই বেশি প্রধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ যে কোন ঔষধের থেকেই প্রাকৃতিক খাবার অনেক বেশি সুবিধাজনক।

শরীরের জয়েন্ট ভালো রাখে

নিয়মিতভাবে সামুদ্রিক মাছ খাওয়া আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনকে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড কোমল জয়েন্টগুলোকে সহজ করতে পারে এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে সকালের শক্ততা কমাতে সক্ষম।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

বয়স সংক্রান্ত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের কারণে অন্ধত্ব বিশ্বব্যাপি একটি বড় সমস্যা। ইনভেস্টিগেটিভ অপথালমোলজি এবং ভিজ্যুয়াল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত 2014 সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে সামুদ্রিক মাছে পাওয়া ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। এই উপাদান নাইট ভিশনকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া নিয়মিত তেল সমৃদ্ধ এই মাছ খাওয়া চোখ উজ্জ্বল এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ত্বক ভালো রাখে

সামুদ্রিক মাছ ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করতে সহায়তা করে। সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই মাছের তেল ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

মস্তিস্কের শক্তি বাড়ায়

সামুদ্রিক মাছ মস্তিস্কের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এই মাছগুলোতে পাওয়া ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের ডিএইচএ এবং ইপিএ শিশু-কিশোরদের সঠিক মস্তিষ্কের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় অনুমান করা হয় যে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার বৃদ্ধ মহিলাদের মধ্যে জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

>> কোন মাছে কত প্রোটিন | জেনে নিন প্রোটিন যুক্ত মাছের তালিকা!

বিষন্নতা দূর করে

এই মাছগুলো বিষন্নতা দূর করতে ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের কারণেই প্রকৃতপক্ষে এই সুবিধা পাওয়া যায়। তাছড়া এটি আপনাকে জীবনের প্রতি আরও ভালো, আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সহায়তা করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় উপকারি

সামুদ্রিক মাছের ভ্রুণের বৃদ্ধি এবং বিকাশকে উন্নত করে। সামুদ্রিক মাছ প্রিটার্ম ডেলিভারি কমাতেও সাহায্য করে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সামুদ্রিক মাছে বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ভিটামিন-এ অন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ সেলেনিয়াম, জিংক অবং অন্যান্য উপাদানগুলো বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদেরকে সুস্থ্য থাকতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোদ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অসুবিধা

মূলত সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ভালো, তবে ক্ষেত্র বিশেষ ঠিক বিপরীতও হতে পারে। সাগর দূষিত হওয়ার কারণে মাছেরা অনেক সময় দূষিত খাবার খায়। এর মাধ্যমে মাছের শরীরে দূষিত পদার্থ জমা থাকতে পারে। যেগুলো মানুষের শরীরে বিভিন্ন বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। 

সামুদ্রিক মাছে উচ্চ মাত্রায় পারদ থাকতে পারে। পারদ একটি ভারি পদার্থ এবং এটি আমাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এটি শিশুদের ব্রেনের বিকাশ বন্ধ করতে পারে। পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলাদের সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদিও অনেক গবেষণায় দেখা যায় এগুলো গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সত্যিই ভাল এবং এতে থাকা ওমেগা-3 সন্তানের মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য অন্যতম উপাদান। তারপরেও এইমাছ খাওয়ার ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

সামুদ্রিক মাছ চরম অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনার যদি এই খাবারে অ্যালার্জি থাকে তাহলে এটা থেকে নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রাখুন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

পরিশেষে

বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এই মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের ডিস যেমন আমাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেয়, পাশাপাশি এগুলো আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ এবং শরীর সুস্থ রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। কিছু অসুবিধা থাকলেও এই মাছগুলোর সুবিধা অনেক বেশি। তাই আপনি যদি এগুলো না খেয়ে থাকেন, কোন ভাবনা ছাড়াই পরিমিত মাত্রায় খাওয়া শুরু করুন।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top