বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ মাঠে নেমেছে ইন্ডিয়া। প্রথম ম্যাচে জয় পেয়ে ১-০ তে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তাই বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই আজ মাঠে নেমেছে টাইগাররা।
মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় অধিনায়ক লিটন দাস। বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিংয়ে নামে এনামুল হক বিজয় ও লিটন দাস। ওপেনিং জুটিতে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ সিরাজের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ৯ বলে ১১ রানের সংগ্রহ নিয়ে সাজঘরে ফিরে এনামুল হক বিজয়।
এরপর আস্তে ধীরে দলকে টানতে থাকে লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে আবারও সিরাজ উইকেট তুলে নেয়। দশম ওভারে ২৩ বলে ৭ রানের স্লো ইনিংস খেলে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। লিটনের পরে শান্তও বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৩৫ বলে ২১ রানের সংগ্রহ নিয়ে উমরান মালিকের বলে বোল্ড হয় শান্ত।
এরপর সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম কিছুটা আশার আলো দেখালেও জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন দুজনেই। ২০ বলে ৮ এবং ২৪ বলে ১২ রান করে আউট হয় সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। আফিফ হোসেনও নেমেই ডাক খেয়ে সাজঘরে ফেরে সাথে সাথেই!
এরপর দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। রিয়াদ আস্তে ধীরে খেললেও দলকে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছিলেন মিরাজ। শীঘ্রই হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলে মিরাজ। এরপর রিয়াদও খেলতে শুরু করে।
রিয়াদ হাফ সেঞ্চুরি করে। তাদের পার্টনারশিপ কোনভাবেই ভাঙতে পারছিল না ইন্ডিয়ার বোলার। যেকোন উইকেটে ইন্ডিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ করে রিয়াদ ও মিরাজ।
অবশেষে ৪৭তম ওভারে তাদের পার্টনারশিপ ভাঙতে সক্ষম হয় উমরান মালিক। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ১৪৮ রানের পার্টনারশিপ করেছে রিয়াদ ও মিরাজ। ব্যক্তিগতভাবে ৯৬ বলে ৭৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে বিদায় নেয় রিয়াদ।
এরপর মাঠে এসেই মারতে শুরু করে নাসুম আহমেদ। অপরদিকে মিরাজও সেঞ্চুরি থেকে ছিল অল্প কিছু দূরে। শেষে অসাধারণ বাউন্ডারি দিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ন করে মিরাজ।
এতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৭১ রান। ৮৩ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিল মেহেদী হাসান মিরাজ অপর প্রান্তে ১১ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিল নাসুম আহমেদ। ইন্ডিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন ওয়াশিঙ্গটন সুন্দার। দুটি করে উইকেট নিয়েছে মোহাম্মদ সিরাজ ও উমরান মালিক।
ইন্ডিয়ার পক্ষে ওপেনিংয়ে মাঠে নামে বিরাট কোহলি ও শেখর ধাওয়ান। তবে ওপেনিং বদলিয়েও সুবিধা করতে পারেনি ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় ওভারে বিরাট কোহলিকে তুলে নেয় এবাদত। ৬ বলে ৫ রান করে বিরাট আউট হলে বেশ চাপে পড়ে যায় ইন্ডিয়া। পরের ওভারেই ধাওয়ানকেও তুলে নেয় মুস্তাফিজুর রহমান।
এরপর শ্রেয়াস ও ওয়াসিঙ্গটন সুন্দার দলের হাল ধরে। তবে সুন্দারও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। এক প্রান্তে শ্রেয়াস দলকে টানতে থাকলেও অপর প্রান্ত থেকে সাপোর্ট পাননি। রাহুলও ২৮ বলে ১৪ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নিলে দলকে টানতে শুরু করেন শ্রেয়াস ও আক্সার পাটেল।
ষষ্ঠ উইকেটে তারা দুজন ইন্ডিয়াকে অনেকদূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। অবশেষে তাদের জুটি ভাঙতে সক্ষম হয় মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০২ বলে ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে বিদায় নেয় শ্রেয়াস।
এরপর পাটেলও শীঘ্রই আউট হয়। এবাদতের বলে সাকিবের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে পাটেল। ৫৬ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে দলকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায় পাটেল। এরপর রোহিত শর্মা ও চাহাল নেমে দ্রুত রান এগোতে থাকে।
চাহাল আউট হলে মোহাম্মদ সিরাজ নেমে রোহিত শর্মাকে সঙ্গ দিতে থাকে। রোহিত শর্মার মারকুটে ব্যাটিংয়ে শেষের দিকে দিশেহারা হয়ে যায় টাইগার বোলাররা। ৪৯তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০ রান দিলে শেষ ওভারে ইন্ডিয়ার প্রয়োজন ছিল ২০ রান।
ডেথ ওভারে বোলিংয়ে আসে মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বল ডট দিয়ে পর পর দুই বলে চার মারে রোহিত। তারপর আবারও একটা ডটের পর ছক্কা মারে রোহিত। তখন শেষ বলে ইন্ডিয়ার প্রয়োজন ছিল ছয় রান। সেটায় মুস্তাফিজ ডট দিয়ে জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে।
নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ইন্ডিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬৬ রান। এতে ৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। ২৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত ছিল রোহিত শর্মা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেয় এবাদত হোসেন। দুটি করে উইকেট নিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ – ২৭১/৭ (২০)
মেহেদী হাসান মিরাজ ১০০
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭৭
নাজমুল হোসেন শান্ত ২১
ওয়াশিঙ্গটন সুন্দার ৩/৩৭
উমরান মালিক ২/৫৮
মোহাম্মদ সিরাজ ২/৭৩
ইন্ডিয়া – ২৬৬ /৯ (৫০)
শ্রেয়াস ইয়ের ৮২
আক্সেল পাটেল ৫৬
রোহিত শর্মা ৫১
এবাদত হোসেন ৩/৪৫
সাকিব আল হাসান ২/৩৯
মেহেদী হাসান মিরাজ ২/৪৬
ম্যান অব দ্য ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ।