২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে রাখাটা সকল মায়েদেরই কর্তব্য। কেননা, এসময় শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটতে শুরু করে। তাছাড়া এটি গর্ভাবস্থার প্রারম্ভিক সময়। তাই এখন থেকেই যত্নবান হবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানুন
আয়রন, প্রোটিন, ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ায় ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের প্রধান লক্ষ হওয়া উচিত। নীচে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অতিব জরুরি। কেননা এটি অনাগত শিশুকে নানারকম জন্মগত ক্রুটি থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে নিউরাল টিউবের ক্রুটি থেকে গর্ভজাত শিশুকে রক্ষা করতে একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
মূলত ভিটামিন বি৯ ফলিক এসিড নামে পরিচিত। তাই ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার যেমন; সবুজ শাকসবজি, ড্রাইফ্রুট, মাল্টা, পাকা কলা, ডিম, মসুর ডাল ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভাবস্থার শুরুতে যে মর্নিং সিকনেস ও অবসাদজনিত ক্লান্তি দেখা যায় তা রোধ করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ এছাড়াও আয়রন শরীরের রক্তপ্রবাহ দৃঢ় রাখে যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বিভিন্ন শাকসবজি যেমন, পালংশাক, মেথির শাক, শিম এছাড়াও বিভিন্ন ফলমূল, কাজুবাদাম ও মাছ এবং মুরগির মাংসে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায়। তাই ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় এই খাবার অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ক্যালসিয়াম
২ মাসের গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের শারিরীক গঠন তৈরি হতে শুরু করে। তাই এসময় একজন গর্ভবতী মায়ের ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণ অতি প্রয়োজন। বলা হয়, এসময় একজন মায়ের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এর চাহিদা থাকে।
দুধ, ডিম, মাখন, সবুজ শাকসবজি, চিংড়ি, কমলালেবু, ব্রোকলি, বেগুন ইত্যাদি খাবার খেলে ক্যালসিয়ামের এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন।
প্রোটিন
প্রোটিনের চাহিদা গর্ভবতী মায়ের জন্য সার্বজনীন। এসময় প্রায় ৭৫ গ্রাম প্রোটিনের দৈনিক চাহিদা থাকে। নির্দিষ্ট কিছু ডায়েট ফলো করার মাধ্যমে এই চাহিদা নিমিষেই পূরণ করা সম্ভব।।
দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ইত্যাদি খাবারে ভরপুর প্রোটিন রয়েছে। এছাড়াও মসুর, মটরশুঁটি, আলু, ফুলকপি, পেয়ারা, বাদাম, ওটস, ইত্যাদি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন থাকে। তাই ২ মাসের গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত এই খাবারগুলি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
জিংক
গর্ভবতী মায়ের বিপাক ক্রিয়ার উন্নতিতে জিংক সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। বিশেষ করে ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে৷ কেননা এসময় বদহজমসহ, বমি ভাব, ও নানারকম পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত খাবার, মাশরুম, কাজুবাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, আলু, পেয়াজ এবং সবুজ শিমে জিংক রয়েছে। গর্ভাবস্থার প্রথম দুমাসে তাই এসকল খাদ্য ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
ফ্যাট
মুলত ফ্যাট বলতে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড নয়, বরং দুগ্ধজাত খাবার ও অন্যান্য যেসকল বাড়ির খাবার থেকে ফ্যাট পাওয়া যায় তা ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন। কেননা, এই অতিরিক্ত ফ্যাট শিশুর দৈহিক বিকাশে উন্নতি করবে।
ফ্যাট জাতীয় খাবারের সঠিক উৎস জানলে তবেই আপনি লাভবান হবেন। কুমড়া ও তেলের বীজ, জলপাই, চীনা ও কাজু বাদাম, আখরোট, ও মাংসে ফ্যাট রয়েছে। গর্ভবতী মায়ের জন্য এসকল খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন।
তন্ত
হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য আরেকটি যে উপাদান ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজন তা হলো তন্ত। এটি গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে থাকে।
শিম জাতীয় খাবার যেমন মটর, শিম, ডাল এবং ফলমূলের মধ্যে আপেল, গাজর, কমলা ইত্যাদিতে যথেষ্ট পরিমাণে তন্ত রয়েছে। এগুলো খেলে গর্ভবতী মায়ের তন্তর চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে।
ভিটামিন সি
শিশুর ত্বক, হাঁড়ের বিকাশ ও দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখতে গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি এর প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে প্রথম ২ মাসে, যেসময় শিশুর শারীরিক বিকাশ শুরু হয়, গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
বিভিন্ন ফলমূল যেমন কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, পেপে, আনারস, জাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও সবুজ শাকপাতা, পুদিনা পাতা ও কাঁচামরিচ ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। ২ মাসের গর্ভাবস্থায় তাই এই খাবারগুলি নিশ্চিত করুন। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা ও প্রয়োজনীয় সব তথ্য!
স্টার্চ জাতীয় খাবার
স্টার্চ জাতীয় খাবারে আছে কার্বোহাইড্রেট যা গর্ভাবস্থার শুরুতে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। প্রতিদিন চাহিদামতো শক্তি যোগাতে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে তাই ২ মাসের গর্ভবতী মাকে স্টার্চ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
লাল আটার রুটি, ভাত, আলু ইত্যাদি স্টার্চ জাতীয় খাবার। এই খাবারগুলি নিশ্চিত করতে পারলে একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা নিমিষেই পূরণ হবে।
ভিডিওঃ গর্ভবতী মায়েদের ১১টি নিষিদ্ধ খাবার ।। এই খাবারগুলো খাবেন না।
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
কিছু খাবার আছে যা অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার সামান্য অসাবধানতায় বড় কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো গর্ভবস্থায় এড়িয়ে চলতে হবে।
লিস্টেরিয়াযুক্ত স্প্রেড মাংস
লিস্টেরিয়াযুক্ত স্প্রেড মাংস আপনার শিশুর শারীরিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় এই মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
সফট চীজ
যেকোনো ধরনের চীজে থাকে E কোলি ব্যাক্টেরিয়া। এটি নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় চীজ জাতীয় খাবার না খাওয়ায় ভালো।
কাঁচা ডিম
ডিম (কাঁচা) খেলে শরীরে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার হতে পারে। এটি শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাঁধার সৃষ্টি করে। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডিম অবশ্যই সেদ্ধ করে অথবা পোচ করে খাওয়া যেতে পারে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
কাঁচা মাছ
কাঁচা মাছে থাকে মার্কারি নামক উপাদান যা অনেকসময় গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে এই উপাদানটি বেশি থাকে। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন এসকল খাবার এড়িয়ে চলতে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ৫ টি কার্যকারি উপায়!
পরিশেষ
২ মাসের গর্ভাবস্থা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এসময় মনে অনেকরকম চিন্তা ডানা বাঁধে। তবে সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। উপরে উল্লিখিত ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা থেকে আপনি নিশ্চয় উপকৃত হবেন এবং নিজের ও অনাগত শিশুর সঠিক খেয়াল রাখতে পারবেন।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!
শিশুদের সুন্দর অর্থপূর্ন রাখুন এখান থেকে – নামের তথ্য!