অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও ব্যবহারের কিছু সতর্কতা!  

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা জানা মানুষের সংখ্যা বেশ কমই। তবে ঔষুধিগুণ সম্পন্ন এই গাছের ছাল প্রাচীনকাল থেকেই নানান কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। কীভাবে এবং কোথায় এটি ব্যবহার করবেন তা বিস্তারিত আলোচনা হলো আজকের প্রবন্ধে। 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা; ১৫টি ঔষুধি গুণ

অর্জুন একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের ছালে রয়েছে নানান গুণ। অর্জুন গাছের ছাল আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ওষুধে ব্যবহার হয়ে আসছে। ডিকোসন, স্কুর এবং পাউডার হিসেবে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার হয়। 

আরো বেশকিছু অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা নিম্নে বর্ণিত হলো। 

১. লিভারের সমস্যা দূর করে 

লিভারের সমস্যা থাকলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তবে লিভার সুস্থ রাখতে অর্জুন গাছের ছাল খুব উপকারি। এটি লিভারসিরোসিসের টনিক হিসেবে কাজ করে। 

প্রতিদিন যদি অর্জুন গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সকালে সেই পানি খেতে পারেন তাহলে যাবতীয় লিভারের সমস্যা দূর হবে। 

২. হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে 

অর্জুন গাছের ছাল হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও বেশ উপকারী। হজমে সমস্যা থাকলে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। 

প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে অর্জুন গাছের ছালের গুড়ো কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত খেতে থাকুন। এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। 

৩. ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে 

অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে গ্যালিক এসিড ও লুটেনোনিন নামক দুটি উপাদান যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমায়। তাই নিয়মিত এ গাছের ছাল ব্যবহারে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর পূর্বে দুধের সঙ্গে অর্জুন গাছের ছালের গুড়ো মিশিয়ে খেতে হবে। 

৪. ক্ষত নিরাময়ে

ক্ষত নিরাময়ে অর্জুন গাছের ছাল অনেক উপকারী। অনেক সময় আমাদের শরীরে খোস পাঁচড়া এবং ক্ষত দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করুন। 

অর্জুন গাছের ছাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন সেই পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে ফেলুন। এরপর ছালের গুড়ো পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে ক্ষতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ক্ষত অনেকাংশে সেরে উঠবে। 

৫. কাশি উপশম করে 

কাশি দূর করতে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা অনেক। কাশি হলে অর্জুন গাছের ছাল বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন তা শুকিয়ে গুড়ো করে রেখে দিন। এরপর সেই গুড়ো মধু বা মিছরির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন খুব সহজেই কাশি দূর হয়ে যাবে। 

৬. বুক ধড়ফড় করলে 

অনেক সময় দুশ্চিন্তার কারণে অথবা শারীরিক পরিশ্রম হলে আমাদের বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে। এক্ষেত্রে অর্জুন গাছের ছালের গুড়ো ছাগলের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে রোজ বিকেলে খান। এতে বুকের ধড়ফড় কমে যাবে। 

৭. রোগের ক্ষেত্রে

অ্যাজমা রোগের ক্ষেত্রে অর্জুন গাছের ছালের কার্যকারিতা রয়েছে। অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগী যদি নিয়মিত অর্জুন গাছের ছালের গুড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খান তবে অ্যাজমা কমে যাবে। 

৮. হার্ট সুস্থ রাখতে 

হার্ট সুস্থ রাখতে অর্জুন গাছের ছাল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর ছাল ব্যবহারে হার্টে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং কার্ডিয়াক মাসল শক্তিশালী করে।

হার্ট সুস্থ রাখতে অর্জুন গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে পরের দিন বেটে দুধের সাথে মিশিয়ে খান। অথবা ছালের গুড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে হার্টের যেকোনো রোগের উপশম হবে এবং হার্ট সুস্থ থাকবে। 

৯. ত্বকের যত্নে 

ত্বকের যত্নে অর্জুন গাছের ছাল অত্যন্ত কার্যকর। অর্জুন গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে তার সাথে বাদম ও কাঁচা হলুদ সমপরিমাণ নিয়ে বেটে মুখে লাগালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে। ত্বকের বলিরেখা, ব্রনের দাগ, ও মেছতা ইত্যাদি দূর করতে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা অনেক। 

১০. মাড়ির ইনফেকশন দূর করে 

অনেক সময় মাড়িতে ইনফেকশনের কারণে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে এবং মাড়ি ফুলে লাল যায়। অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে ট্যানিন যা মাড়ির ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অর্জুন গাছের ছালের গুড়ো মাজনের মতো ব্যবহার করতে হবে।  

১১. যৌন উদ্দীপনা বাড়ায় 

বিবাহিত জীবনে দম্পতিদের ক্ষেত্রে যৌন উদ্দীপনার অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করুন। কারণ অর্জুন গাছের ছালে বিদ্যমান স্যাপোনিন যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়। 

১২. মেদ কমায়

অর্জুন গাছের ছাল মেদ কমাতে সাহায্য করে। যারা অতিরিক্ত মেদের সমস্যায় ভুগছেন তারা দৈনিক সকাল ও সন্ধায় এ গাছের ছালের মিশ্রণ খেতে পারেন। দ্রুত মেদ কমাতে এটি নিয়মিত খেলে এক মাসের মধ্যেই ফল পাবেন। 

১৩. চুলের উন্নতি করে 

অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের উন্নতি হয়। এ গাছের ছাল ও হেনার মিশ্রণ মাথায় লাগালে চুল ঘন কালো হয়, চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।

১৪. প্রসাবের সমস্যা দূর করে

মূলত অর্জুন গাছের ছালের তৈরি পানীয় প্রসাবের সমস্যা দূর করে। এক্ষেত্রে অর্জুন গাছের ছাল বেটে দুই কাপ পানিতে ফুটান। ফুটানো পানি অর্ধেক হয়ে আসলে ঠান্ডা করে পান করুন। প্রসাবের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারে কিছু সতর্কতা  

অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নতুবা হীতে বিপরীত হতে পারে। 

  • গর্ভবতী মহিলাদের অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার না করাই উত্তম। কেননা এটি প্রসূতি মহিলাদের কোনো উপকারে আসে না। বরং ক্ষতি করে। 
  • ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা কাজে আসে না। তাই ডায়বেটিস রোগীদের এটি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হলো। 
  • এটি ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এতে এর ক্ষতি বা উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। 

ভিডিওঃ মধুর ৭টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা || 7 Health benefits of Honey

শেষ কথা 

পরিশেষে বলা যায়, অর্জুন এমন একটি ভেষজ গাছ যা যুগ যুগ ধরে মানুষের বিভিন্ন উপকারে আসছে। বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি পেতে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা এবং এর ঔষুধি গুণ অনেক। বর্তমানে হোমিওপ্যাথি, এ্যালাপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে অর্জুন গাছের ছাল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top