আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও ২১টি উপকারিতা জেনে নিন !

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সকলেরই ধারণা থাকতে পারে। তবে সঠিক নিয়মে খেলে তবেই এর উপকারিতা পাওয়া যাবে। তাই আজকের আর্টিকেলটি থেকে জেনে নিন সবকিছু বিস্তারিত। 

আমলকি চিবিয়ে খাওয়া যায়। চিবিয়ে খেতে না পারলে জুস করেও খাওয়া যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকির রস ও স্বাদ মুখে দীর্ঘ সময় থাকে ফলে রুচি বৃদ্ধি পায়। 

এছাড়াও আমলকি আচার বানিয়েও খাওয়া যায়। নানা পুষ্টিগুনে ভরপুর এ ফলটি দেহকে সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। 

ভিডিওঃ প্রতিদিন আমলকী খাওয়ার ২০ টি কার্যকারি উপকারিতা জানুন | Bangla Health Tips

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা 

ভেষজ ফলগুলোর মধ্যে আমলকি অন্যতম এবং উপকারি একটি ফল। আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিচে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

১. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

আমলকি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে নিয়মিত আমলকি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে আমলকির গুড়ো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। 

২. ভিটামিনের অভাব পুরণে

আমলকি বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ যা দেহের ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। আমলকি খাওয়ার ফলে দেহে ভিটামিনের ঘাটতি পুরন হয়। তাই ভিটামিনের অভাব জনিত রোগ হতে মুক্তি পেতে নিয়মিত আমলকি খান। 

৩. রক্তশুন্যতা পুরণে

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে যা রক্ত তৈরি করে দেহে রক্ত শুন্যতা পুরনে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত আমলকি খাওয়ার ফলে লোহিত রক্ত কনিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

৪. ক্যান্সার প্রতিরোধে 

আমলকি ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানা থাকলে ক্যান্সারের মতো মরন ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত আমলকির জুস পান করুন। কারন আমলকিতে রয়েছে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষকে বাধা প্রদান করে। 

৫. হার্ট সুস্থ রাখতে 

হার্ট সুস্থ রাখতে আমলকি ছোট ছোট  টুকরো করে তার সাথে লঙ্কা মিশিয়ে খান। এতে হার্ট ব্লক হতে বাধা সৃষ্টি করে। নিয়মিত আমলকি খেলে হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি কমে যায়। আমলকি ব্যাড কোলেস্টেরল কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৬. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে 

আমলকি দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে। চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের চুলকানি, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের ফুসকুড়ি এবং চোখের ছানি দূর করতে সাহায্য করে  আমলকি। 

৭. ত্বকের যত্নে 

আমলকি ত্বকের যত্নে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। নিয়মিত আমলকি খাওয়ার ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, কালো দাগ, মেছতা ইত্যাদি দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে। এছাড়াও দৈনিক দুটি করে আমলকি খেলে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। 

৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য আমলকি  মহাঔষধ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আমলকির রস তেতো এবং টক। তাই আমলকির সাথে লবন মিশিয়ে খান। 

৯. সর্দি কাশি উপশম করতে 

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আমলকি খাওয়ার ফলে ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁপানি, এ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগ সারতে সাহায্য করে। তাই যারা এই সমস্ত রোগে ভুগছেন তারা দৈনিক দুটি করে আমলকি খাওয়া শুরু করুন উপকার পাবেন। 

এছাড়াও যারা আমলকি কাঁচা খেতে পারেন না, তারা আমলকির আচার বানিয়ে খেতে পারেন। 

এক্ষেত্রে প্রথমে আমলকি পরিস্কার করে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। এরপর বীচিগুলো ছাড়িয়ে বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে ভেজে নিন। এতে আচার সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হবে। 

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকিতে অসংখ্য ভিটামিন বিদ্যমান। তবে এসব ভিটামিন পেতে হলে আমলকি নিয়ম মেনে খেতে হবে। 

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে কাঁচা আমলকি ছোট ছোট টুকরো করে হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এই পানি সকালে খালি পেটে পান করুন, সেইসাথে আমলকির টুকরো গুলো খেয়ে নিন। 

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীর দূষণ মুক্ত হয় এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে। 

এছাড়াও ত্বকের ডার্ক সার্কেল, ব্লাক হেডস, ত্বকে ভাঁজ এবং মেছতার সমস্যা দূর হবে। নিয়মিত আমলকি খেলে চুল স্বাস্থ্য উজ্জ্বল, ঘন এবং ঝলমলে হবে, সেই সাথে খুশকি ও মাথার চুলকানিও দূর হবে। 

চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা 

চুলের যত্নে আমলকির যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কারন আমলকিতে রয়েছে এ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং এ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। নিয়মিত আমলকি খাওয়ার ফলে চুলের ফলিকন মজবুত হয়, চুল ঝরা বন্ধ হয়, নতুন চুল গজায়, মাথার চুলকানি এবং খুশকি দূর হয়।

এছাড়াও আমলকি দিয়ে তৈরি তেল অথবা আমলকির গুড়ো নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় ম্যাসাজ করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় ফলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়।

আমলকি চুলে দেওয়ার নিয়ম 

আমলকি, চুলের জন্য একটি পুষ্টিকর ঔষধ যা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে চুলকে ঘন ও মজবুত করে তোলে। 

কাঁচা আমলকি বেটে সরাসরি চুলে দেয়া যায় অথবা আমলকির গুড়ো নারকেল তেল বা পানির সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করা যায়। 

এছাড়াও কাঁচা আমলকির রস এক টেবিল চামচ ও তার সাথে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় ভালভাবে ম্যাসাজ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। 

এছাড়াও চুল ঘন, কালো এবং মজবুত করতে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করে নিন। তার সাথে ১ টেবিল চামচ আমলকির রস মিশিয়ে মাথায় ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। প্রায় ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। 

আমলকিতে কী কী উপাদান আছে 

আমলকি একটি সেরা ফল। এতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী আমলকিতে পুষ্টি উপাদান রয়েছে-

ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম 

ভিটামিন বি১ ১০.০২ মিলিগ্রাম 

ও ভিটামিন বি২ ২০.০৮ মিলিগ্রাম 

ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম 

লৌহ ৩.১ মিলিগ্রাম 

খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম 

জলীয় অংশ ৯১.৪ গ্রাম 

চর্বি  ০.২  মিলিগ্রাম 

প্রোটিন ০.৯ গ্রাম 

শর্করা ০.২ গ্রাম 

আঁশ ৩.৪ গ্রাম  

খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি

এছাড়াও আমলকিতে রয়েছে নানা রাসায়নিক উপাদান যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

গর্ভাবস্থায় আমলকির উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কারন আমলকি খেলে কোন প্বার্শপ্রতিক্রিয়া হয় না। আমলকি ফাইবার যুক্ত ফল। তাই গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। 

আমলকি খেলে গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারন আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি যা রক্তনালী গুলোকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় না। 

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভস্থ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা মূত্রনালির সংক্রমণ রোধ করে। 

গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হয় এবং হাত পা ফোলা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমলকিতে থাকা এ্যান্টি-বায়োটিক উপাদান গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় আমলকির জুস খেলে গর্ভস্থ শিশুর স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই ডাক্তাররা গর্ভবতী মায়েদের আমলকি খাওয়া পরামর্শ দেন।  

সমাপ্তি

শেষ কথায় বলা যায়, আমলকি একটি সেরা ফল। এতে উপস্থিত ভিটামিন এবং ঔষধি গুণ শারীরিক সুস্থতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকতে হলে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আজ থেকেই নিয়মিত আমলকি খাওয়া শুরু করুন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top