ইউরোপা লিগ

টাইব্রেকারে এ.এস রোমাকে হারিয়ে সেভিয়ার সপ্তমবারের মতো ইউরোপা লিগ জয়!

হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বাংলাদেশ সময় রাত ১:০০ টায় বর্তমান কনফারেন্স লিগ চ্যাম্পিয়ন এ.এস রোমা এবং সেভিয়া। লা-লিগায় সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না ইউরোপের নামকরা শীর্ষ এই ক্লাবের। 

লিগে একের পর এক ম্যাচ ড্র এবং হারের মাধ্যমে টেবিলের ১০ নম্বর অবস্থানে আছে দলটি। লা-লিগায় সময়টা খারাপ গেলেও উয়েফা ইউরোপা লিগে যেন নিজেদের সেরা ছন্দে আছে লস নার্বিয়োনেনসেসরা। 

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লওগ থেকে অবনমন হওয়ার পর ইউরোপার শেষ ১৬, কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সবশেষে সেমিফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় সেভিয়া। অপরদিকে, জোসে মরিনহোর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সময়টা যেন দারুণ কাটছে রোমার। 

২০২১-২০২২ মৌসুমে ইইরোপা কনফারেন্স লিগ জেতার মাধ্যমে ২০২২-২০২৩ মৌসুমের ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিয়েছিল রোমা। গ্রুপ পর্ব, শেষ ১৬, কোয়ার্টার ফাইনালে এবং সেমিফাইনালে লেভারকুসেনের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ফাইনালে আসে রোমা। ইউরোপা লিগের আগের ৭টি ফাইনালের একটিও কখনো হারেনি সেভিয়া। 

আবার, ইউরোপা লিগে কখনো হারের স্বাদ পায়নি জোসে মরিনহোর নেতৃত্ব ফাইনাল খেলা দল। এসব সমীকরণ বুদাপেস্টের ফাইনালে খেলতে নামে দুই দল।

প্রথমার্ধ :

নিজেদের সপ্তম ইউরো শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে খেলা শুরুর প্রথম থেকেই বলের উপর আধিপত্য রেখে খেলতে থাকে সেভিয়া। কিন্তু, দুই দলই সমানে সমানে ছোট ছোট আক্রমণ চালায়। ম্যাচের ৩২ মিনিটের মাথায় রোমার পেনাল্টি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও ভিএআরের মাধ্যমে তা বাতিল করে দেয় রেফারি। 

অবশেষে, ম্যাচের ৩৫ মিনিটের সময় রোমা ডিফেন্ডার জিয়ানলুকা মানচিনির বাড়ানো বলে গোল করেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পাওলো দিবালা। ১-০ পিছিয়ে পড়ে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় সেভিয়া। কিন্তু, প্রথমার্ধের নির্দিষ্ট সময়ের খেলা শেষ হলে যোগ করা সময়েও আর কোনো দলই গোলের দেখা না পেলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে রোমা। 

দ্বিতীয়ার্ধ:

পিছিয়ে পড়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা সেভিয়া এবার গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। রোমার রক্ষণ দুর্গে একের পর এক আক্রমণ চালালেও প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় প্রতিবারই গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয় সেভিয়ার। এরপর ৫৫ মিনিটে রোমা ডিফেন্ডার জিয়ানলুকা মানচিনির করা আত্মঘাতী গোলে ১-১ গোলের সমতায় আসে ম্যাচ। 

সমতায় এসে উভয় দলই ছোট ছোট আক্রমণ চালাতে থাকে। মাঝে সেভিয়া ৭৫ মিনিটে পেনাল্টি পেলেও ভিএআরের মাধ্যমে পরে তা বাতিল করে দেয় রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধের নির্ধারিত সময় ও যোগ করা সময়ে আর কোনো দলই স্কোরলাইন দ্বিগুণ করতে ব্যর্থ হলে শিরোপা নিষ্পত্তিতে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। 

অতিরিক্ত সময় ও টাইব্রেকার: 

নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ের শুরু থেকেও খেলা চলে সমান তালে। যেখানে, অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের বেশ সময় ধরে বল দখলে এগিয়ে ছিল সেভিয়া। ট্যামি এ্যাব্রেহাম ও পাউলো দিবালার মাঠ ছাড়ার পর একপ্রকার ছন্দ হারিয়ে ফেলে রোমার আক্রমণভাগ। 

যেখানে, গোল ব্যবধানে এগিয়ে যেতে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সেভিয়াও। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধও শেষ হয় একইভাবে। বল দখলে রেখেও রোমার বিরুদ্ধে কাজের কাজ করতে পারেনি মেন্ডিলিবার শিষ্যরা। অন্যদিকে, মূল একাদশের অধিকাংশ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে সাব করে ফেলে বেশ ভালোভাবেই ভুগতে হয় রোমা বস জোসে মরিনহোকে। 

ফলে, উভয় দল গোলের দেখা পেতে ব্যর্থ হলে ১-১ গোলের সমতা নিয়ে শেষ করা ম্যাচটি গড়াই পেনাল্টি শুটআউটে। 

সেভিয়া ও রোমার হয়ে ১ম পেনাল্টি নেন যথাক্রমে লুকাস অকাম্পোস ও ব্রায়ান ক্রিস্তান্তে। এসেই দলকে গোলের দেখা দেন উভয়ে। ২য় পেনাল্টিতে সেভিয়ার হয়ে এরিক লামেলা জালের দেখা পেলেও সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর সেভে গোল পাওয়া হয়নি রোমার হয়ে পেনাল্টি নিতে আসা জিয়ানলুকা মানচিনির। 

এরপরের পেনাল্টিতেও ঘটে একই ঘটনা। সেভিয়ার পক্ষে ইভান রাকিতিচ গোল করলেও, রজার ইভানেজের বল বারে লাগাই আবারও হতাশ হতে হয় রোমাকে। শেষ পেনাল্টিতে গোল করে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতানো গঞ্জালো মন্টিয়েল সেভিয়ার হয়ে ৪র্থ পেনাল্টি নেন। 

বিশ্বকাপের ন্যায় এবারও গোল করে নিজের দলকে শিরোপা উপহার দেন মন্টিয়েল। তার করা শেষ পেনাল্টি গোলে সপ্তমবারের মতো উয়েফা ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতল সেভিয়া এফসি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top