ইউরোপিয়ান ট্রান্সফার উইন্ডো

শেষ হয়েছে ইউরোপিয়ান ট্রান্সফার উইন্ডো | বিশ্বকাপের পর নিজেদের দল গোছাতে বড় বড় সব তারকাদের দলে ভিড়িয়েছে বিগ ক্লাবগুলো।

কাতার বিশ্বকাপের পর পুনরায় মাঠে ফিরেছে ক্লাব ফুটবল। ইউরোপের লিগগুলোর প্রায় অর্ধেক মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও শিরোপা নিষ্পত্তিতে বাকি আছে এখনও বাকি অর্ধেক মৌসুম।

তাই শিরোপা জয়ে দলের শক্তিমত্তা বাড়াতে একের পর এক প্লেয়ারকে দলে নিচ্ছে চেলসি, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডসহ প্রিমিয়ার লিগের অন্যান্য ক্লাবগুলো। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে লা লিগা, সিরি আ, বুন্দেসলিগা ও লিগ ১ এর দলগুলো।

শীতকালীন দলবদলের ট্রান্সফারগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি দলবদল হলো:

এঞ্জো ফার্নান্দেস:

এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোর সবচেয়ে দামি সাইনিং আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এঞ্জো ফার্নান্দেস। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছর পর শিরোপা জয়ে তার অবদান দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের থেকে মোটেও কম ছিলনা। বিশ্বকাপে নজর কাড়া তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম ম্যাচ থেকেই একাদশে ছিলেন নিয়মিত।

 আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭ ম্যাচ খেলে করেছেন ১ গোল ও ১ এ্যাসিস্ট। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফির পাশাপাশি জিতেছেন সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কার। তাছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও বেনফিকার হয়ে তার ফর্ম ছিল অসাধারণ। এরই ধারাবাহিকতায় পিএসজি ও জুভেন্টাসকে পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপ সেরা হয়েই শেষ ১৬ নিশ্চিত করে তার সাবেক দল বেনফিকা। এই মৌসুমে বেনফিকার হয়ে খেলা ২৬ ম্যাচে আছে ৩ গোল ও ৬ এ্যাসিস্ট। তাই বিশ্বকাপের পর থেকেই তাকে দলে নিতে তোরজোর শুরু করে চেলসি।

কিন্তু তার রিলিজ ক্লজ থেকে কম অর্থ পরিশোধের জন্য বারবার চেষ্টা করলেও পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা তাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। অবশেষে ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষ দিনে এসে বেনফিকা থেকে ১২০ মিলিয়ন ইউরো খরচে তাকে দলে নিয়েছে স্ট্যাম্ফোর্ড ব্রিজের প্রতিনিধিরা। 

মাকাইলো মুদরিক:

এঞ্জো ফার্নান্দেসের পর এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোর দ্বিতীয় বড় সাইনিংটাও চেলসির দখলে। ইউক্রেনীয় খেলোয়াড় মাকাইলো মুদরিককে শাখতার দোনেৎস্ক থেকে ৭০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে নিয়েছে প্রিমিয়ার লিগে টেবিলের ১০ নম্বরে অবস্থান করা দলটি।

দলের বাজে অবস্থার কারণে বরখাস্ত হওয়া টমাস টুখেলের পর তার স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক ব্রাইটন কোচ গ্রাহাম পটার। পটারের অধীনে দলকে আবারও শিরোপা লড়াইয়ে ফেরাতে তরুণ এই মিডফিল্ডারকে দলে নেয় দ্যা ব্লুসরা। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৭৪ ম্যাচ খেলা মুদরিকের নামের পাশে রয়েছে ১৩ গোল ও ১৫ এ্যাসিস্ট।

হোয়াও ক্যান্সেলো:

ম্যানচেস্টার সিটি থেকে লোনে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিয়েছেন হোয়াও ক্যান্সেলো। সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার সাথে দ্বন্দ্বের গুঞ্জনের জেরে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত তাকে দলে নেয় বিশ্বকাপের পর থেকে বুন্দেসলিগায় খেই হারিয়ে ফেলা বায়ার্ন।

পর্তুগিজ এই ডিফেন্ডারকে লোনে নেওয়ার পাশাপাশি মৌসুম শেষে তাকে চাইলে কিনে নিতে পারবে বাভারিয়ানরা। সেক্ষেত্রে তাদের গুনতে হবে ৭০ মিলিয়ন ইউরো। বিশ্বকাপের আগে সিটির ভালো পার্ফম্যান্সের অন্যতম কান্ডারী ছিলেন এই ডিফেন্ডার। সিটিজেনদের জার্সিতে খেলেছেন মোট ১৫৪ ম্যাচ।

কোডি গাকপো:

এবারের মৌসুমে সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম দল লিভারপুল। দলের প্লেয়ারদের ইনজুরি ও ফর্মহীনতায় এফএ কাপ ও লিগ কাপে বাদ পড়ার সাথে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্টস টেবিলে রয়েছে ৯ নম্বরে। অল রেডসদের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় লুইস ডিয়াজ, দিয়োগো জোটা ও রবার্তো ফিরমিনোর ইনজুরির কথা মাথায় রেখেই দলে নেওয়া হয় এবারের কাতার বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে নজর কাড়া কোডি গাকপোকে।

বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে ৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল। এরই সাথে ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ২০৪ ম্যাচে গোলের দেখা পেয়েছেন ৭৮টি। এছাড়া পিএসভি এইদোভেনের হয়েও ছিলেন অসাধারণ ফর্মে। তার এই ফর্মকে কাজে লাগাতেই ৪২ মিলিয়ন ইউরোতে তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে দলে নিয়েছে ইউর্গেন ক্লপের দল।

হোয়াও ফেলিক্স:

মাকাইলো মুদরিকের পর শীতকালীন দলবদলে চেলসির আরও এক চমক হোয়াও ফেলিক্স। ১১ মিলিয়ন ইউরোর খরচে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে তাকে লোনে নিয়েছে লন্ডনের ক্লাবটি। স্প্যানিশ লিগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে ছিলেন নিয়মিত পার্ফমার। ২০২২/২৩ মৌসুমে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ১৯ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল ও অবদান রেখেছেন ৫ গোলে।

নিজের খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও মরক্কোর কাছে ১-০ গোলের হারে পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় এই তারকার। যেখানে চেলসির হয়েও অভিষেকটা রাঙাতে ব্যর্থ এই খেলোয়াড়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ফুলহ্যামের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই সরাসরি লাল কার্ডে টানা ৩ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয় ফেলিক্সকে।

অ্যান্থনি গোর্ডন:

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এভারটন থেকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড যোগ দিয়েছেন তরুণ ইংলিশ ফরোয়ার্ড অ্যান্থনি গোর্ডন। শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোর সবচেয়ে দামি সাইনিং এর দিক দিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছেন তিনি।

এবারের মৌসুমে এভারটনের অবস্থান খুব একটা সন্তোষজনক না হলেও দলের হয়ে ঠিকই ভালো করার চেষ্টা করে গেছেন এই ২১ বছর বয়সী খেলোয়াড়। এভারটনের হয়ে খেলা ৮০ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল। তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে তাকে নিয়ে ভালো কিছু করার আত্মবিশ্বাস থেকেই গোর্ডনকে দলে নিয়েছেন নিউক্যাসেল ইউনাইটেড কোচ এডি হওয়ে।

বেনয়েট বাদিয়াশিল:

গ্রীষ্মকালীন দলবদলে লেস্টার সিটি ডিফেন্ডার ওয়েসলে ফোফানাকে দলে নিলেও ইনজুরিতে দল থেকে তার ছিটকে পড়া ও রিসি জেমস, বেন চিলওয়েলের মতো ডিফেন্ডারদের ইনজুরি বেশ ভোগাচ্ছে চেলসি ডিফেন্স লাইনকে। এক থিয়াগো সিলভা ছাড়া কেউই দলের রক্ষণভাগে তেমন অবদান রাখতে পাড়ছেননা।

তাই দলের ডিফেন্সের এই দুরাবস্থা কাঁটাতেই ৩৮ মিলিয়ন ইউরোতে এএস মোনাকো থেকে ফরাসি সেন্টার ব্যাক বেনয়েট বাদিয়াশিলকে দলে নিয়েছে চেলসি। এএস মোনাকোর হয়ে খেলছেন ১৩৫ ম্যাচ। চেলসির হয়ে ইতিমধ্যে ২ ম্যাচ খেলে ২টিতেই রেখেছেন ক্লিনশীট।

পেদ্রো পোর্রো:

শীতকালীন দলবদলের শেষ দিনে এসে স্পোর্টিং লিসবন থেকে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত লোনে পেদ্রো পোর্রোকে চুক্তিবদ্ধ করেছে টটেনহাম হটস্পার। মৌসুম শেষে ৩৯ মিলিয়ন ইউরোতে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত তাকে দলে নেওয়ার সুযোগ থাকছে স্পার্সদের।

স্পোর্টিংয়ের হয়ে এই মৌসুমে খেলেছেন ১৯ ম্যাচ। যেখানে করেছেন ৩ গোল ও ৭ এ্যাসিস্ট। তাই মিডফিল্ড কোটায় স্প্যানিশ এই ফুটবলারকে দলে নিয়েছে অ্যান্তনিও কন্তের দল।

ননি মাদুয়েকে:

এবারের দলবদলের বাজারে সবচেয়ে বেশি খরচ করা ক্লাব চেলসির আরেক সাইনিং পিএসভি এইদোভেন উইঙ্গার ননি মাদুয়েকে। জাতীয় দলের হয়ে এখনো অভিষেক না হলেও ক্লাব ফুটবলে দলের হয়ে ভালোই পারফর্ম করে যাচ্ছেন ২০ বছর বয়সী এই ইংলিশ উইঙ্গার।

পিএসভির হয়ে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় ৮০ ম্যাচ খেলে করেছেন ২০ গোল ও অবদান রেখেছেন ১২ গোলে। ৩৫ মিলিয়ন ইউরো খরচে ৭ বছরের জন্য তাকে দলে নিয়েছে টড বোহেলির মালিকানাধীন দলটি।

মালো গুস্তো:

দলবদলের বাজার থেকে চেলসির ডিফেন্স লাইনের আরেক সংযোজন অলিম্পিক লিঁও হতে ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে জুন ২০৩০ পর্যন্ত যোগ দেয়া রাইট ব্যাক মালো গুস্তো। অলিম্পিক লিঁওর হয়ে এই মৌসুমের প্রায় সব ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন মালো গুস্তো।

লিওঁর হয়ে এই মৌসুমে খেলেছেন মোট ১৫ ম্যাচ ও ছিলেন ভালো ফর্মে। এর পাশাপাশি ফ্রান্স অনূর্ধ্ব ২১ দলের হয়ে খেলা ৫ ম্যাচে আছে ১টি গোল। অলিম্পিক লিওঁর হয়ে তার এই দারুণ ছন্দ নিজ দলে কাজে লাগাতেই তাকে ডেরায় নিয়েছে চেলসি। 

এসব বড় বড় সাইনিং ছাড়াও শীতকালীন দলবদলে উল্লেখযোগ্য অন্যতম ট্রান্সফারগুলো হলো: 

ভিতিনহা (অলিম্পিক মার্সেই – €৩২ মিলিয়ন)

লিয়ন্দ্রো ট্রোসার্ড (আর্সেনাল – €২৪ মিলিয়ন)

জর্জিনহো (আর্সেনাল – €১১.৩ মিলিয়ন)

আরনাউ দানজুমা (টটেনহাম – লোন)

দানিলো (নটিংহ্যাম ফরেস্ট –  €২০ মিলিয়ন)

ওয়েস্টন মিক্কেনি (লিডস ইউনাইটেড – লোন)

পাবলো সারাবিয়া (উলভস – €৫ মিলিয়ন)

মেম্ফিস ডিপাই (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ – €৩ মিলিয়ন)

মার্সেল সাবিতজার (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – লোন)

ড্যানি ইংস (ওয়েস্ট হ্যাম – €১২ মিলিয়ন)

উট ওয়েগহোর্স্ট (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড – লোন)

হেক্টর বেল্লেরিন (স্পোর্টিং সি পি – ফ্রি ট্রান্সফার)

গেরোনিমো রুল্লি (আয়াক্স – €৮ মিলিয়ন)

ইয়ান সোমার (বায়ার্ন মিউনিখ – €৮ মিলিয়ন)

জাকুব কিউয়র (আর্সেনাল – €২৫ মিলিয়ন)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top