ওটস কি

ওটস কি; জানুন এর উপকারিতা ও অপকারিতাসহ বিস্তারিত তথ্য!

ওটস বা ওটমিল সম্পর্কে কমবেশি সকলেই জানেন। ওটস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্যশস্য। ওটস দিয়ে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। তাই আজ আলোচনা করবো ওটস কি, কোথায় পাওয়া যায়, ওটস এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।  

ওটস কি

কার্যত ওটস ধান, গম, এবং যব জাতীয় একটি  উদ্ভিদ শষ্য। ঠান্ডা আবহাওয়ায় এর ফলন খুব ভালো হয়। ওটস কি আগের মানুষ জানত না। তাই ওটস আগে পশুদের খাদ্য বলে গন্য করা হত।

বর্তমানে গবেষকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, এতে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, কপার, প্রোটিন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, রিবোফ্লাভিন এবং আরও অনেক ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।

এই সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ওটস থেকে যখন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরি করা হয় তখন একে ওটমিল বলে। চলুন তাহলে ওটস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই। 

সকল ধরনের অর্গানিক ফুড কিনুন আমাদের শপ থেকে!

ওটস এর উপকারিতা

মূলত ওটস একটি পুষ্টিকর খাবার। বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ওটস শরীরে পুষ্টি জোগায় এবং নানা ধরনের রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। নিয়মিত ওটস খাওয়ার ফলে যে উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় সেগুলি জেনে নিন। 

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে 

ওটস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ওটস কি এই সম্পর্কে সকলের জেনে রাখা উচিৎ। কারন ওটস এমন একটি খাদ্যশষ্য যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং আমাদের শরীরকে নানা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। 

২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে

ওটস কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ডায়াটরি-ফাইবার রক্তে লিপিড বা চর্বি কমায়। এছাড়াও ওটসে থাকা উচ্চ মাত্রার বেটা-গ্লুকোন রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। 

৩. মনকে শান্ত ও প্রফুল্ল রাখতে 

ওটসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মনকে শান্ত ও প্রফুল্লতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ওটস খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেরোটোনিন হরমোন ক্ষুধা, ঘুম ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। 

৪. ওজন কমাতে ওটস

ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রনে রাখতে ওটস খান। কারন ওটস প্রোটিন এবং ফাইবার যুক্ত খাবার যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই  ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওটস কি এবং এর উপকারিতা জেনে ওটস খাওয়া শুরু করুন। 

৫. ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে

ওটস লো ক্যালোরি ও সুগার ফ্রি। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওটস একটি আদর্শ খাবার। কারন ওটস রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।  

৬. হার্ট সুস্থ রাখতে 

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ওটস খান তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা ২৯ শতাংশ কমে যায়। কারন ওটস এর উচ্চ এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে হার্ট এট্যাকের  ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও এতে থাকা বেটা-গ্লুকোন হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে।

৭. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে

ওটস হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। ওটসে থাকা ফাইবার কোষ্টকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যা দূর করে। তাই যারা হজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ওটস খান। এছাড়াও ওটস লিভারের জন্যও বেশ উপকারী। 

৮. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওটস কার্যকর ভুমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ওটস বা ওটমিলের খাবার রাখুন। এতে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকবে। ওটসে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

৯. ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় 

ওটস মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইটো নিউট্রিএন্টস উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ব্রেস্ট এবং অন্যান্য হরমোন সম্পৃক্ত ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করে ফেলে। এছাড়াও ওটস কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তাই ওটস কি জানার পর প্রতিদিন পরিমাণ মতো ওটস খান। 

১০. স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলতে 

ওটস স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত চিন্তা এবং উদ্বেগের কারেন মস্তিষ্কে স্ট্রেস বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ওটস খাওয়ার ফলে স্ট্রেস ঝড়ে যায়। 

১১. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে 

ওটস স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। নিয়মিত ওটস খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন সুস্কতা, রুক্ষতা, ব্রনের কালো দাগ, মেছতা, বলিরেখা, ত্বকের চুলকানি, এগজিমা ইত্যাদি দূর করে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।  

এছাড়াও ওটস ত্বকের পি এইচ লেভেল স্বাভাবিক করে। ফলে ত্বক টানটান ও লাবন্যময় হয়ে ওঠে। 

ওটস এর অপকারিতা 

ক্ষেত্রবিশেষে ওটস এর কিছু অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

  • ওটস ঠিকমতো রান্না করে খেতে হবে। নাহলে পেটের সমস্যা এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। 
  • ওটস ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। যেমন চিনি মিশ্রিত ওটস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই চিনির মিশ্রণ ওটস গ্রহণ না করায় ভালো। 
  • ওটস উচ্চ মাত্রার ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। তাই অতিরিক্ত ওটস খেলে স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে।

এছাড়াও অতিরিক্ত ওটস খাওয়ার ফলে পেশীর দূর্বলতা, ক্লান্তি, অতিরিক্ত ঘুম, মাইগ্রেন, চোখে ছানি পড়া ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে। 

ওটস খাওয়ার নিয়ম 

কার্যত ওটস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী শষ্য। ওটস বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। জেনে নিন কখন এবং কিভাবে ওটস খাবেন। 

  • সকালের নাস্তায় আপনি দুধের সাথে ওটস খেতে পারেন। এমনকি ওটসের সাথে পছন্দ  মতো ড্রাই ফ্রুটস কুঁচি কুঁচি করে মিশিয়ে নিতে পারেন। 
  • দুপুরে ভাতের বিকল্প হিসেবেও খেতে পারেন ওটস। ওটস সেদ্ধ করে তার সাথে মাছের ঝোল, ডাল এমনকি সবজি তরকারির দিয়ে খেতে পারেন। 
  • এমনকি ওটস দিয়ে খিচুড়ি বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। 
  • বিকেলে স্ন্যাক্স হিসেবে চা বা কফির সাথে ওটস দিয়ে তৈরি বিস্কুট খেতে পারেন। 
  • এছাড়াও টকদই দিয়েও খেতে পারেন ওটস। ওটসের স্বাদ অতুলনীয় করতে এর সাথে আপনার পছন্দ মতো ফল কুঁচি করে কেটে মিশিয়ে নিন। 
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ওটস রাতে খাওয়া যাবে কী ? 

মূলত ওটস যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে।  কারন ওটসে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। 

ওটস খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। যার ফলে সকালের নাশতায় এটি বেশি খাওয়া হয়।

তবে রাতের খাবারে আপনি নিশ্চিন্তে ওটস খেতে পারেন। ওটস দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। 

মোট কথা ওটস সকাল, দুপুর এবং রাত যেকোনো সময় খাওয়া যাবে। তবে রাতে যাদের ঘুমের সমস্যা আছে সহজেই ঘুম আসতে চাই না, তাদের জন্য ওটস অত্যন্ত উপকারী। কারন রাতে ওটস খেলে ঘুম ভালো হয়। 

ওটস কোথায় পাওয়া যায় 

সুপার শপ গুলোতে প্যাকেট ওটস কিনতে পাওয়া যায়। তবে মসলা যুক্ত ওটমিলের প্যাকেট নিবেন না। কেনার সময় ভালোভাবে যাচাই করে প্যাকেটের গায়ে লেখা দেখে পিওর ওটমিল নিবেন।  এছাড়াও প্যাকেট বিহীন ওটস যেকোনো সুপার শপে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে।  

শেষ কথা

শেষ কথায় বলা যায়, ওটস আমাদের কাছে অপরিচিত হলেও বহু বছর ধরেই ওটস খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ওটস কি এবং এর উপকারিতা যেহেতু জানলেন সেহেতু এটি নিয়মির খাওয়া শুরু করুন। কারন ওটসে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও ওটস দিয়ে তৈরি নানা প্রসাধনী ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top