cardiology কি

কার্ডিওলজি কি; জানুন এই ভয়ানক রোগ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য

কার্ডিওলজি বা হৃদরোগ সবার কাছে একটি পরিচিত নাম। প্রতি বছর এক তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হয় এই কার্ডিওলজি বা হৃদরোগ সমস্যায়। হৃদরোগ এমনি একটি অসুখ যা প্রতিনিয়ত আমাদের আপনজনকে খুব নিষ্ঠুরভাবে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩৮ লাখ পুরুষ ও ৩৪ লাখ নারী মারা যান। আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়া কার্ডিওলজি বা হৃদরোগের লাগাম টেনে ধরতে এখনই প্রয়োজন সচেতনতা।

আপনাদের এই সচেতনতা জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল কার্ডিওলজি সম্পর্কে। আসুন জেনে তাহলো জেনে কার্ডিওলজি কি এবং কার্ডিওলজি সম্পর্কে বিস্তারিত 

কার্ডিওলজি কি

কার্ডিওলজি কি? কার্ডিওলজি হল- হার্ট বা হৃদপিণ্ড কেন্দ্রিক রোগের সমষ্টি। একক কোন রোগকে কার্ডিওলজি বলা হয়না। সোজা কথায় হার্ট বা হৃদপিণ্ড কেন্দ্রিক যত সমস্যা রয়েছে তার সকল সমষ্টি কার্ডিওলজি। কার্ডিওলজি কে হৃদরোগ ও বলা হয়।

আমাদের হৃদপিণ্ডে সর্বদা রক্ত প্রবাহিত হয়। আর হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহিত ধমনী মাধ্যমে। ধমনী আমাদের নিশ্বাসের অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডে প্রবাহিত করে থাকে। 

এই ধমনী দিয়ে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে কার্ডিওলজি বা হৃদরোগ বলে। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টোরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ—এগুলি মূলত রক্ত প্রবাহে বাঁধা দেওয়ার কারণ।

এই রক্ত প্রবাহ বাঁধা পেলে হৃদযন্ত্রের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন প্রবাহিত করতে পারে না। হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন প্রবাহিত না হতে পারলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবং আক্রান্ত ব্যাক্তি মারা যান। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে, রক্ত প্রবাহ বাঁধা পেলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয় তা আমাদের জানতে। আমরা এতক্ষণ  জানলাম কার্ডিওলজি কি তার সম্পর্কে । এবার জানবো কার্ডিওলজি সমস্যা হলে কি কি লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলোর ব্যাপারে। 

কার্ডিওলজি রোগের লক্ষণ

নীরব ঘাতক কার্ডিওলজি বা হৃদরোগে প্রতি বছর এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। বেশিরভাগ রোগি কার্ডিওলজিতে আক্রান্ত হয়ে হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া বা হার্ট অ্যাটাক মারা যান। প্রায়ই হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক উপসর্গগুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ চিকিৎসকেরা বলেন, প্রাথমিক উপসর্গগুলো দেখে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলে কার্ডিওলজি ঝুঁকি কমানো সম্ভব।আসুন জেনে নিই কার্ডিওলজি লক্ষণগুলো

১. বুকে ব্যথাঃ

কার্ডিওলজি ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে হয়। প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। শুধু বুকে ব্যথাই নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ব্যথা অনুভব হতে পারে। যেমনঃ পেটের উপরের অংশ, কাঁধ, পিঠ, গলা, দাঁত ও চোয়াল এবং বাম বাহুতে হুট করে অতিরিক্ত ব্যথা হতে পারে। ব্যথার সাথে চাপ অনুভব অথবা আড়ষ্টতা অনুভব হতে পারে। মাঝেমাঝে গলায় চিনচিনে ব্যথা হতে পারে। এই রকম ব্যথা দেখা দিলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাঃ

যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোন সমস্যা না থাকে এবং হঠাৎ করে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়, তবে সেটা কার্ডিওলজির লক্ষণ। মূলত হৃদপিণ্ড থেকে ফুসফুসে পানি জমা-সহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে এই শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া কোনো কারণ ছাড়াই শারীরিক দুর্বলতা। খুব সহজেই হাঁপিয়ে উঠা। ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া। অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া।মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া কার্ডিওলজি লক্ষণ। এসব সমস্যা শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. ক্লান্তিঃ

নিশ্বাসের সমস্যা সাথে আপনি যদি সহজেই ক্লান্ত বোধ করেন এবং অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত বোধ করেন তাহলে সেটি কার্ডিওলজির লক্ষণ। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া। কিছু ক্ষণ কাজ করলে বুক ধড়ফড়। কাজ করার মাঝেই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কার্ডিওলজি লক্ষণ। মহিলাদের মাঝে এমন লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

৪. অতিরিক্ত ঘাম হওয়াঃ

অতিরিক্ত ঘাম হওয়া কার্ডিওলজি পূর্ব লক্ষণ। যখন হার্ট ব্লক হয় তখন রক্ত সঞ্চালনের জন্য হৃদপিণ্ডকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে ঘামের সৃষ্টি হয়। এই ঘাম সাধারণত অনেক ঠাণ্ডা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, হঠাৎ শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলে লক্ষণ বেশি দেখা যায়। এমন লক্ষণ দেখা দিলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

৫. বদহজমঃ

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্ডিওলজি আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগি বদহজম এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যায় ভুগেন। এছাড়াও বুকে জ্বালা, বুকে চাপ ধরে থাকা, অতিরিক্ত ঢেকুর উঠা। যা আমরা অনেকে স্বাভাবিক বদহজমের সমস্যা ভেবে অবহেলা করি।

কিন্তু অনেকসময় এই লক্ষণগুলো কার্ডিওলজির ইঙ্গিত। এর পাশাপাশি আচমকা কোনো কারণ ছাড়াই মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব এবং বমি করার কার্ডিওলজি লক্ষণ। হার্টের রোগীর খাবার তালিকা দেখুন-

৬. অনিয়মিত হার্টবিটঃ

অনিয়মিত হার্টবিটও কার্ডিওলজি সমস্যার বড় লক্ষণ। এটি হলে নিজেই ভালো বুঝতে পারবেন। যখন কোনও কারণ ছাড়াই হার্টবিট বাড়বে বা কমবে। তখন বুঝতে হবে এটি কার্ডিওলজির লক্ষণ হতে পারে।

কার্ডিওলজি থেকে মুক্তির উপায়

 মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে হৃদপিণ্ড একটি জরুরী অঙ্গ। হৃদপিণ্ডে যেসকল সমস্যা দেখা দেয় তাদের সমষ্টি হল কার্ডিওলজি। হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতার ওপর মানুষের বেঁচে থাকা, শক্তি, শারীরিক কর্মক্ষমতা, আবেগ অনুভূতি বলতে গেলে জীবনের সবকিছুই নির্ভরশীল।

অন্য যেকোনো অঙ্গ অকেজো বা নষ্ট হয়ে গেলে শুধু ওই অঙ্গের কার্যের ব্যাঘাত ঘটে বা কার্যক্ষমতা লোপ পায়। কিন্তু হৃদপিণ্ড নষ্ট বা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ মারা যায়। তাই হৃদপিণ্ড  ভালো থাকলে একজন মানুষ ভালো থাকবে। তার সাথে হৃদপিণ্ড ভালো থাকলে কার্ডিওলজি সমস্যা থেকে দূরে থাকবে মানুষ।  তাহলে আসুন জেনে নিই হৃদপিণ্ড ভালো রাখা বা কার্ডিওলজি থেকে মুক্তির উপায়-

১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন

কার্ডিওলজি সমস্যা ঠেকাতে সবার আগে নজর রাখুন কোলেস্টেরলের দিকে। অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে শরীরে বাসা বাঁধে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল।

এছাড়া কোলেস্টেরল জাতীয় ঔষধ থেকে হাই কোলেস্টেরলের পাওয়া যায়। কোলেস্টেরল আমাদের  আজীবন সঙ্গী তাই এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

আমরা প্রতি দিনের খাবার থেকে কোলেস্টেরল পেয়ে থাকি। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরলের যতটা প্রয়োজন, ততটা স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়ে যায়৷ তাই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার না খেয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।

২. স্থূলতা হ্রাসঃ

যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহনের ফলেও ওজন বৃদ্ধি পায়। শরীরের ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃদপিণ্ডকে এর সাথে তাল মিলিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।

ফলে অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ দেখা দিতে দেয়। যা পরবর্তীতে কার্ডিওলজি সমস্যা আকারে আমাদের সামনে আসে। এসমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

৩. ধূমপান বর্জনঃ

হৃদপিণ্ডের অন্যতম প্রধান শত্রু ধূমপান। ধুমপান রক্তনালিতে ট্রাইগ্লিসারাইড চর্বি বৃদ্ধি করে। ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যা কার্ডিওলজি রোগের লক্ষণ। 

এছাড়া ধুমপানের মাধ্যমে শরীরে নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি ঘটে। ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দেয়। এসকল সমস্যা কার্ডিওলজি অন্তর্ভুক্ত। তাই তামাক জাতীয়  জর্দা, গুল খাওয়া পরিহার করতে হবে।

৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ

ডায়াবেটিস একটি মেটাবলিক কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ। অর্থ হলো এটি শুধু মেটাবলিক বা হরমোনাল সমস্যা নয়। এটি শরীরের সব রক্তনালিকে আক্রান্ত করে। আর সব রক্তনালির সাথে সম্পর্কিত মানে  হৃদপিণ্ডের সঙ্গে এটি সরাসরি যুক্ত। 

ডায়াবেটিসের মাত্রার ওপর নির্ভর শরীরে রক্ত চলাচলের ধরণ। রক্ত চলাচলের মাত্রার পরিবর্তন আসলে কার্ডিওলজি সমস্যা রোগি আক্রান্ত হোন। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুষ্টিকর খাবার ও ব্যায়াম করতে হবে। এর পাশাপাশি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

৫. লবণঃ

অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। খাবার লবণে থাকা সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে কার্ডিওলজি সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। যতবেশি লবণ খাবেন রক্তচাপ ততবেশি বৃদ্ধি পাবে। 

৬. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ

জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে হবে। রক্তচাপ যতবেশি বৃদ্ধি পাবে হৃদপিণ্ড ততবেশি রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। বেশি রক্ত সঞ্চালন করার সময় হৃদপিণ্ড বিকল হয়ে পড়তে পারে।যা একটি কার্ডিওলজি সমস্যা। 

নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এবং কার্ডিওলজি জটিল রোগ মুক্তি মিলবে।

উপসংহার 

পরিশেষে বলা যায়, কার্ডিওলজি কি এই আর্টিকেল মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম সুস্থ থাকার জন্য সুস্থ হৃদপিণ্ডের বিকল্প নেই। আর আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে এই কঠিন কার্ডিওলজি বা হৃদরোগ সমস্যা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জানুন হার্টের সমস্যা সমাধানের উপায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top