খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ জানুন মজার কিছু তথ্য!

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে নিশ্চিত আপনি অবাক হবেন। কেননা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলেও অপকারিতা নিয়ে অনেকেই জানি না। খেজুর একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা আমাদের শরীরে রক্ত শূন্যতা পূরণে সহায়তা করে।

এছাড়াও খেজুরে রয়েছে প্রোটিন,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ক্যালরি, ভিটামিন সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান যা দেহের সকল চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে এতসব উপকারিতা থাকার পরেও এটি ক্ষেত্রবিশেষে আমার শরীরের অপকার করে। কীভাবে? জানতে হলে লেখাটি পড়ে ফেলুন ঝটপট। 

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা 

খেজুর সুস্বাদু এবং সুপরিচিত একটি ফল, যা কমবেশি সকলেই পছন্দ করে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। চলুন তবে প্রথমে জেনে নেয়া যাক এর উপকারিতাগুলি কী কী?

খেজুরের উপকারিতা 

১. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

খেজুর উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফল। তাই খেজুর খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। যারা হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা কয়েকটি খেজুর পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। এতে বিপাকক্রিয়া উন্নত হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। খেজুর অরুচি দূর করে রুচি বৃদ্ধি করে থাকে। 

২. রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বৃদ্ধি করে 

খেজুরে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এসব ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা চোখের জন্য খুবই কার্যকরী।

৩. রক্তশূন্যতা পুরণ করে 

খেজুরে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা রক্ত শূন্যতা পুরনে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিশোধনের ক্ষেত্রেও কাজ করে। যারা আয়রনের অভাবে ভুগছেন তারা নিয়মিত খেজুর খান। আয়রনের অভাব জনিত কারনে রক্তসল্পতা, শরীরে ক্লান্তি, বুকে ব্যথা,শ্বাসকষ্ট হতে পারে। খেজুর এসব সমস্যা দূর করে থাকে।  

৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

খেজুরে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ লবণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খেজুর খেলে পেটে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। 

৫. স্নায়ুতন্ত্র শক্তিশালী করে  

খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম যা স্নায়ুতন্ত্র শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম  শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এছাড়াও এতে থাকা সোডিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে ঠিক রাখে। খেজুর গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুর জন্য উপকারী। এটা শিশুর জন্মগত রোগ নিরাময় করে থাকে। 

৬. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে 

খেজুর ভিটামিন এ-এর একটি বড় উৎস। তাই নিয়মিত খেজুর খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রাতকাণা রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়।  এছাড়াও খেজুরে থাকা লিউটেন ও জিক্সাথিন চোখের রেটিনা ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

৭. শরীর ফিট রাখে

প্রোটিনের একটি শক্তিশালী উৎস হলো খেজুর। তাই খেজুর খেলে সহজেই প্রোটিন পাওয়া যায় যা আমাদের শরীর ফিট রাখতে সাহায্য করে এবং পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে। তাই বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিনের খাবারে খেজুর রাখার পরামর্শ দেন।  

৮. হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখে 

হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখতে খেজুর খান। কারন খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা হাড় গঠন করতে এবং মজবুত রাখতে সাহায্য করে। 

খেজুরে থাকা পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এছাড়াও খেজুর শিশুর মাড়ি ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে থাকে।  

৯. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে 

খেজুর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে হৃদপিন্ড শক্তিশালী হয়। ফলে স্ট্রোক এবং হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও যাদের হার্ট দূর্বল তাদের জন্য খেজুর হলো একটি নিরাপদ খাবার। 

১০. মানসিক বিষন্নতা দূর করে

খেজুরে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান গুলি সেরোটোনিন নামক হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে মানসিক বিষন্নতা দূর হয় এবং প্রফুল্লতা বৃদ্ধি পায়, যা মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

১১. শক্তি বৃদ্ধি করে 

খেজুর শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। কারন খেজুরে রয়েছে শতকরা ৮০ ভাগ চিনি। তাই খেজুর খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, তবেই উপকার পাবেন। 

১২.তারুণ্য বজায় রাখে 

খেজুর শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারী নয়। এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং ঔষধি গুনাগুন তারুণ্য বজায় রাখতে এবং যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর তাই খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিয়মিত খেজুর খাওয়া শুরু করুন।

খেজুরের অপকারিতা 

মূলত খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল। খেজুরের উপকারিতা বলে শেষ করার মতো নয়। তবে এর যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু অপকারিতা বা সতর্কতাও রয়েছে। 

  • খেজুর রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিৎ। 
  • যাদের ওজন বেশি তারা খেজুর এড়িয়ে চলুন। কারন খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি।  যা ওজন বৃদ্ধি করে। যাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তাদের খেজুর খাওয়া উচিৎ নয়।  
  • অতিরিক্ত খেজুর খেলে পেট ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তাই যাদের বদহজমের সমস্যা বা পেটের সমস্যা আছে তাদের খেজুর এড়িয়ে চলা উত্তম। 
  • এছাড়াও অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে ডাইরিয়া এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে এ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। 

খেজুর খাওয়ার নিয়ম 

খেজুর একটি উপকারী ফল। তবে অনেকেই জানেন না এটা কখন, কীভাবে খেতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নিই খেজুর খাওয়ার নিয়ম: 

  • সকালে খেজুর খাওয়া উত্তম। সকালে খালি পেটে তিন থেকে চারটি খেজুর খেলে সারাদিন দেহে প্রচুর শক্তি জোগায়। 
  • যারা ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়াম শুরু করার আধাঘন্টা আগে খেজুর খান। এতে সহজেই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং পেট থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যাবে। 
  • এছাড়াও খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সেই খেজুর সকালে খালি পেটে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। 
  • প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেজুর খেতে পারেন। দুধ ও খেজুর একত্রে মিশিয়ে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।  

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি: 

প্রশ্ন: দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিৎ? 

উত্তর: খেজুরের নানা উপকারিতা থাকলেও ইচ্ছামত সকাল এবং বিকালে খেজুর খাওয়া যাবে না। কারন অতিরিক্ত যে কোন খাবার হীতে বিপরীত হয়। তাই দিনে ৪ থেকে ৫ টি খেজুর খেতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।  

প্রশ্ন: খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটি?  

উত্তর: খেজুর, সকল ফলের মধ্যে সেরা একটি ফল। তাই যে কোন সময় খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যাবে। তবে কিছু সময় আছে যা খেজুর খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। 

ওয়ার্কআউটে যাবার আধাঘন্টা বা এক ঘন্টা আগে দুই থেকে তিনটি খেজুর খেতে পারেন। এতে ওয়ার্কআউটের সময় শরীরে এনার্জি পাওয়া যায়। 

এছাড়াও বিকেলে স্ন্যাক্স হিসেবে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেজুর খেতে পারেন। এমনকি খেজুর রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটেও খেতে পারেন। 

প্রশ্ন: সেক্সে খেজুরের উপকারিতা রয়েছে কী? 

উত্তর: সেক্সে খেজুরের যথেষ্ট উপকারিতা রয়েছে। কারণ খেজুর পুষ্টিগুণ এবং ঔষধিগুণে ভরপুর একটি ফল, যা আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং শারীরিক নানা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। 

যৌন দুর্বলতা দূর করতে অথবা যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন দুই থেকে চারটি খেজুর খাওয়া শুরু করুন উপকার পাবেন।  

পরিশেষ

পরিশেষে বলা যায় খেজুর আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তবে খেজুরের অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই বেশি। এতে রয়েছে অসাধারন পুষ্টিগুণ। তাই উপকারিতার কথা ভেবে শুধু রমজান মাসেই নয়, খাদ্য তালিকায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top