ঘুম আসার উপায়

ঘুম আসার ২১টি কার্যকারি উপায় জানুন!

সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ঘুমের কারণে শরীর মন উভয়ই ভালো থাকে। তবে অনেকে খুব দ্রুত ঘুমায়, অনেকে আবার অনিদ্রায় ভোগে। সুস্থ জীবনের জন্য ঘুম খুবই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ তাই ঘুম আসার উপায় গুলো জেনে রাখতে হবে। কারণ ভালো ঘুম অনেক রোগ নির্মূল করে। আর অনিদ্রা অনেক রোগ ডেকে আনে। 

ঘুম আসার উপায়

অনেকেই রাতে শোবার পর ঘন্টার পর ঘন্টা জেগে কাটান। কারণ ঘুম আসে না। তাদের অবশ্যই ঘুম আসার উপায়গুলো জানতে হবে। সুস্থ থাকতে হলে ভালো ঘুম জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নেই কিছু ঘুম আসার উপায় সম্পর্কে। 

ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন

ঘুম আসার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা। অতিরিক্ত লাইট, তাপ, শব্দ এগুলোতে ঘুমের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। ঘুমাতে যাবার আগে লিভিং রুমের লাইট অফ রাখুন। কোলাহলপূর্ণ স্থান পরিত্যাগ করুন। অর্থাৎ ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। 

ডিভাইস দূরে রাখুন 

ঘুম আসার উপায় গুলোর মধ্যে আরও একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো ডিভাইস দূরে রাখা। অনেকেই শোবার পর মোবাইল, ট্যাব ব্যবহার করে। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। মোবাইল স্ক্রীনের ব্লু লাইট আপনাকে জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই ঘুমানোর আগে যাবতীয় সকল ডিভাইস দূরে রেখে ঘুমাতে যান। এতে ঘুম ভালো হবে।

বিছানা পরিত্যাগ করুন

অনেকেই রাতে ঘুম না এলে বিছানায় শুয়ে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে ঘুম আসে না বরং বিরক্তি কাজ করে। এমনটা হলে বিছানা পরিত্যাগ করুন। এমন কোনো কাজ করে আসুন যা একটু হলেও শরীরকে ক্লান্ত করে; যেমন-হাঁটা। এরপর ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যান। এই ক্লান্তিই চোখে ঘুম টেনে আনবে। 

হিট বাথ

ঘুমানোর আগে হিট বাথ খুবই ভালো একটি পন্থা। এতে শরীরের উত্তাপ হ্রাস হয়। ঘুম না আসার সমস্যা হলে ঘুমাতে যাবার আগে হালকা উষ্ণ পানিতে গোসল করুন। এই পদ্ধতি শরীর শিথিল করে। ফলে ঘুম আসতে সহায়তা করে।

ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন

রাতে ঘুমের অগ্রাধিকার সবকিছুর আগে। কারণ একটি ভালো ঘুমের উপর আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত। সেই সাথে যুক্ত পরবর্তী দিনটি আসলে কেমন কাটবে অর্থাৎ ঘুম ভালো না হলে পরের দিন ভালো যায় না। এজন্য রাত জেগে আড্ডা দেওয়া, পড়াশোনা করা উচিত নয়। ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসুন।

রাত জেগে কাজ নয় 

আজকাল অনেকেই ক্যারিয়ারের স্বার্থে রাত জেগে কাজ করেন। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সার। সারারাত জেগে কাজ করে ভোরে ঘুমালে শরীর ও মনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই রাত জেগে কাজ করা মোটেও ঠিক নয়৷ 

নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান 

সবকিছুর একটি সময় আছে, ঠিক তেমনি ঘুমেরও নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা উচিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। এতে ভালো ঘুম আসে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস ভালো ঘুমের সহায়ক। 

ক্যাফেইন ত্যাগ করুন

যাদের অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান করার অভ্যাস আছে তাদের ঘুমের সমস্যা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিমাত্রায় চা-কফি পান না করা ভালো। আর ভালো ঘুমের জন্য ঘুমানোর ৫-৬ ঘন্টা আগে পরিমিত পরিমাণে চা-কফি পান করা উচিত। দিনে বেশি হলে দুইবার লাল চা, একবার কফি পান করা উত্তম। দুধ চা এক্ষেত্রে না খাওয়া ভালো।

মেডিটেশন 

মেডিটেশন ভালো ঘুমের সহায়ক। যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন তাদের ঘুম ভালো হয়। কারণ মেডিটেশন ঘুমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধ্যান শরীর ও মনকে শিথিল করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ধ্যান গভীর ঘুম আনতে সাহায্য করে। তাই যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা উচিত। 

ব্যায়াম

ঘুম আসার অন্যতম একটি কার্যকরী উপায় হলো ব্যায়াম। ব্যায়ামকে ঘুমের প্রাকৃতিক ওষুধ বলা যায়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের ভালো ঘুম আসে। কারণ এটি শরীরকে শিথিল করে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

হার্বাল টি

অধিক ক্যাফেইন স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ঘুমের জন্যও ক্ষতিকর। ঘুমের আগে চা বা কফি খাওয়া একদমই উচিত নয়। তবে আপনি যদি হার্বাল টি পান করতে পারেন, তবে তা উত্তম। ভ্যালেরিয়ান অথবা ক্যামোমিল চা পান করলে ভালো ঘুম হয়।

প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিল্যাক্সেশন ব্যায়াম

প্রোগ্রেসিভ মাসেল রিল্যাক্সেশন ব্যায়াম খুবই কার্যকরী একটি ব্যায়াম। এটি এমন এক ধরণের ব্যায়াম যা মাসেলকে শিথিল করে। এই ব্যায়াম করলে অবসন্নতা দূর হয়ে ঘুমের পরিমাণ বাড়ে। তবে একজন ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শে এই ব্যায়াম করা উচিত।

অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস

অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে ঘুমের সমস্যা হয়। তাই সুশৃঙ্খল জীবন-যাপনের সাথে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা উচিত। অনেকেই রাত জেগে ফাস্টফুড খেয়ে থাকেন বা অতিমাত্রায় তেল-চর্বি যুক্ত খাবার খান। যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। ভালো ঘুমের জন্য এগুলো বর্জন করা উচিত।

ভাতঘুম

শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ভাতঘুম খুবই কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি পন্থা। দিনের বেলায় দুপুরে খাবার পরের ঘুমকে ভাতঘুম বলে। এটি শরীর, মন ও ব্রেইনকে প্রশান্ত ও রিফ্রেশ করে। সাধারণত ৪৫ মিনিটের বেশি ভাতঘুম দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু আমরা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে ১/২ ঘন্টা ঘুমিয়ে নেই ফলে এটি রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

রাতে ঘুম আসে না কেন?

প্রতিটি মানুষের জন্য রাতে ভালো ঘুমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ঘুম শরীর ও মনকে সবসময় সতেজ রাখে৷ কিন্তু অনেকেরই রাতে ঘুম আসে না। ফলে তাদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে, অলসতা, দুর্বলতা, কাজে অনীহা ইত্যাদি। তাই জেনে নিন রাতে ঘুম না আসার কারণ সম্পর্কে- 

  • প্রতিদিনের জীবন-যাপনে পরিবর্তন আসলে ঘুমেও পরিবর্তন আসে৷ রাতে ঘুম না আসার অন্যতম কারণ হলো সঠিক লাইফস্টাইল মেইনটেইন না করা।
  • দুশ্চিন্তা জীবনকে ঘিরে রেখেছে। যার প্রভাব পড়ে রাতের ঘুমে। যারা দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাদের রাতে ঘুম হয় না। 
  • দিন দিন অতিরিক্ত কাজের চাপ ও স্ট্রেস বাড়ছে। কাজের চাপ ও স্ট্রেস ঘুম না হবার পেছনে দায়ী। আর কাজের চাপজনিত স্ট্রেসের কারণে অনেকের ঘুমহীনতা দেখা দেয়। 
  • মানুষ বিভিন্ন কারণে ডিপ্রেশনে ভোগেন। আর যারা অনেকদিন ধরে ডিপ্রেশনে ভোগেন তাদের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। 

দ্রুত ঘুম আসার উপায়

দ্রুত ঘুম আসা অনেকের কাছেই তৃপ্তির বিষয়। কারণ যারা ঘুমের সমস্যায় প্রতিনিয়ত ভোগেন, তারাই জানেন ভালো ঘুমের মর্ম। চলুন জেনে নেই দ্রুত ঘুম আসার উপায়-

  • নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান।
  • ঘুম না এলে শুয়ে শুয়ে উল্টো দিক থেকে সংখ্যা কাউন্ট করুন। 
  • ঘুমানোর আগে বই পড়ার অভ্যাস করলে দ্রুত ঘুম আসে।
  • সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করুন।
  • মোবাইল দূরে রাখুন। 
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ঘুম আসার খাবার 

রাতে ঠিকমতো ঘুমের প্রয়োজন৷ নয়তো শরীরে তার প্রভাব পড়ে। তবে ঘুম না আসার জন্য বিশেষজ্ঞরা খাবারকে দায়ী করছেন। চলুন জেনে নেই কোন ধরণের খাবার রাতে ঘুম আনতে সহায়ক-

  • রাতে ঘুমানোর আগে একগ্লাস গরম দুধ খান। তাছাড়া আধা কাপ টকদইও খেতে পারেন।
  • ডিমে ভিটামিন ডি থাকে যা ঘুমের সহায়ক। তাই নিয়মিত ডিম খান।
  • কলা, মিষ্টি আলু, আমে পটাশিয়াম আছে। যা খেলে ভালো ঘুম হয়।
  • কাঠবাদাম খেলে ভালো ঘুম হয়।
  • নিয়মিত মধু খেলে ভালো ঘুম হয়। 

উপসংহার

ঘুম যেমন আরামদায়ক বিষয়, তেমনি এর সাথে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও সম্পর্কিত৷ ভালো ঘুম সুস্বাস্থ্য বয়ে আনে। ঘুম আসার উপায় গুলো জেনে সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। ঘুম ভালো হলে শরীর ও মন থাকবে সতেজ। কাজে আসবে উদ্যম।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top