চিড়া খাওয়ার অপকারিতা

চিড়া খাওয়ার অপকারিতা এবং উপকারিতা সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!

চিড়া খাওয়ার অপকারিতা কি কি? আসলে চিড়া একটি অতি পরিচিত এবং সাধারন খাবার হিসাবে আমরা খেয়ে থাকি। সাধারণভাবে আমরা চিড়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানি। অর্থাৎ চিড়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে অনেক বেশি চিড়া খেয়ে ফেললে চিড়ার কিন্তু অপকারিতাও রয়েছে।

চিড়ার পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন রাখতে হলে চিড়া খাবার নিয়ম ঠিক রাখা এবং সঠিক সময়ে চিড়া খাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা চিড়া খাওয়ার সঠিক সময় সূচি, চিড়া ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম এবং চিড়ার উপকারের পাশাপাশি চিড়ার অপকারিতা সম্পর্কেও জানব।

বেশি চিড়া খাওয়ার অপকারিতা

কার্যত চিড়া খাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকারের পাশাপাশি উপকারিতাও রয়েছে। কিন্তু আমরা এই অপকারিতা সর্ম্পকে সকলেই খুব ভালোভাবে অবগত নই। আমরা জানি যে যেকোনো ধরনের খাবার বেশি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। চলুন জেনে নেয়া যাক বেশি চিড়া খেলে শরীরে কি কি ধরনের অসুবিধা হতে পারে-

  • চিড়া একটি উচ্চ গ্লাইসেমিক এবং শর্করা সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার। তবে এই এই জাতীয় খাবার খুব বেশি খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • চিড়া অধিক পরিমাণে খেলে শরীরে সিরাম ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এতে করেই হৃদরোগের ঝুঁকি পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়।
  • যাদের অ্যাজমা সমস্যা আছে তারা যদি ভেজা চিড়া ঘন ঘন খান তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে যাবে। তাই ঠান্ডার সমস্যা দূর করতে ভেজা চিড়া না খাওয়াই ভালো।
  • আপনার যদি নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনাকে  বেশি চিড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি নিয়মিত চিড়া খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার দিন দিন বাড়তে থাকবে।

চিড়া খাওয়ার সময় সূচি

চিড়া এমন একটি খাবার যেটা আপনি শুকনো খেতে পারেন আবার ভিজিয়ে খেতে পারেন। শুকনা চিড়া পাটালি গুড়ের সাথে খেতে অনেক বেশি সুমিষ্ট লাগে এবং এটি আপনার অনেক সহজেই হজম হয়ে যাবে। চিড়া ভিজিয়ে খেলে এটি আমাদের পেট কে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে আর তাই শীতের সময় ভেজা চিড়া খাওয়াটা ঠিক হবে না। তবে শীতে যদি আপনার চিড়া খেতে খুব মনে চায় তাহলে আপনি পাটালি গুড় বা অন্য কিছুর সাথে চিড়া খেতে পারেন।

বিকালে নাস্তা হিসাবে আপনি চিড়াকে বেছে নিতে পারেন। অনেকে আবার চিড়ার পোলাও করেন এবং চিড়াকে বিভিন্ন নতুন নতুন রেসিপির মাধ্যমে খাবার হিসাবে গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। গরমের সময় চিড়া আপনি যখন তখন খেতে পারেন।

যাদের অতিরিক্ত গরমে পেটের সমস্যা বার বার হয় তারা ভেজা চিড়াকে পেট ঠান্ডা করার একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে প্রায় খেয়ে থাকেন। অপরদিকে যারা খুব দ্রুত ওজন কমাতে ইচ্ছুক তারা ভাতের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে চিড়া খেতে পারেন।

সুতরাং আপনি সকালের নাস্তা হিসেবে অসীলা গ্রহণ করতে পারে না আবার বিকালে নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন। পাশাপাশি রাতের খাবার হিসেবে আপনি  চিড়া কে বেছে নিতে পারেন।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

চিড়া কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়?

খুব অল্প সময়ে চিড়া ভিজিয়ে আপনি খাবার হিসেবে খেতে পারেন। চিড়া অনেক সময় ভেজানোর কোন প্রয়োজন হয় না। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট ভিজিয়ে আপনি চিড়া খেতে পারেন। তবে ডায়রিয়া বা আমাশয় এর ক্ষেত্রে আপনি যদি চিড়া ভেজানো পানি খেতে চান সেক্ষেত্রে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হবেন। এক্ষেত্রে চিড়াটি আপনাকে আরো বেশি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার প্রয়োজন হতে পারে।

চিড়া প্রায় সব ধরনের চাল থেকেই তৈরি হয়ে থাকে। চিড়া ভিজতে আসলে কতটুকু সময় লাগবে এটা নির্ভর করে চালের উপর। সাধারণভাবে চিকন চাল থেকে তৈরি চিড়া খুব অল্প সময় ভিজে যায় এবং মোটা চাল থেকে তৈরি চিড়া তুলনামূলকভাবে একটু বেশি সময়ে ভিজে থাকে।

বাচ্চাদের জন্য চিড়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা 

স্বাভাবিকভাবেই চিড়া একটি খুবই সহজলভ্য খাবার। চাইলে আপনি এই খাবারটিতে অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন করে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।

চিড়া ভিজিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানিতে ফেলে দিয়ে আপনি বিভিন্নভাবে আপনার বাচ্চার সামনে পরিবেশন করতে পারেন। আপনার বাচ্চা যদি দই পছন্দ করে থাকে তাহলে ভেজা  চিড়ার সাথে আপনি  দই মিশিয়ে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।

এছাড়াও আপনি ভেজা চিড়ার সাথে আপনার বাচ্চার পছন্দের মিষ্টি ফল মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। মিষ্টি ফলের সাথে যদি দই আপনার বাচ্চাকে পরিবেশন করেন তাহলে এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হবে। 

পাশাপাশি আপনার বাচ্চা যদি দুধ পছন্দ করে তাহলে আপনি ভেজা চিড়া আপনার বাচ্চাকে দুধের সাথে পরিবেশন করতে পারেন। এতে করে আপনার বাচ্চা অনেক বেশি পুষ্টি পাবে এবং খেতেও অনেক পছন্দ করবে।

চিড়া বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী খাবার কারণ এটি বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই আপনি একটি উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে চিড়াকে আপনার বাচ্চার জন্য বেছে নিতে পারেন।

বাচ্চাদের জন্য চিরার অপকারিতার কথা বলতে গেলে দুই বছরের নিচে বাচ্চাদের চিড়া দেওয়া একদমই ঠিক নয়। কারণ চিড়া কোলেস্টেরল কমায় এবং বেশি খাওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় আর তাই অল্প বয়সের বাচ্চাদের চিড়া দেওয়া ঠিক নয়। 

চিড়া খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়

চিড়ার উপকারিতার শেষ নেই। আপনি যদি ভালো স্বাদের চিড়া খেতে চান তাহলে আপনাকে অনেক ভালমানের চালকে নির্বাচন করতে হবে। মানুষের শরীরের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। চলুন জেনে নেই চিড়ার বেশ কিছু উপকারিতার কথা-

  • প্রথমত চিড়া ভেজানো পানি বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চিড়া ভেজানো পানি তে রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের পানিস্বল্পতাকে পূরণ করে। তাই আমাশা, ডায়রিয়া, এমনকি কঠিন ডিসেন্ট্রি হলে মানুষ চিড়া ভেজানো পানি কে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে যা শরীরের সহজেই শক্তি বহন করে এবং শরীরকে দুর্বল হতে দেয় না। 
  • অনেকেই চিড়া কে সকালের নাস্তা হিসেবে এবং বিকেলের হালকা খাবার হিসাবে খেয়ে থাকে। মিষ্টি দইয়ের সাথে চিড়া মিশিয়ে বা মিষ্টি আমের সাথে চিড়াকে খাওয়া যায়। এছাড়াও,চিড়া কে অন্যান্য অনেক মিষ্টি খাবারের সাথে মিশিয়ে সুস্বাদু খাবার হিসেবে খাওয়া যায়। 
  • কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত অনেক পুষ্টিকর খাবার নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু, আনন্দের বিষয় এই যে চিড়াতে পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক অল্প পরিমাণে থাকায় এটি কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে একদমই উপযুক্ত একটি খাবার।
  • কিছু কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে চিড়া খাওয়ার অনেক বেশি উপকারিতা রয়েছে যেমন সিলিয়াক ডিজিজ। চালে বিদ্যমান গলুটেলিন এবং প্রোটিন প্রলামিন এর  শোষণ ক্ষমতা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় চিড়া রোগীদের ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে প্রযোজ্য।
  • চিড়ায় সাধারণত আঁশের পরিমাণ অনেক কম থাকে। আঁশের পরিমাণ কম থাকায় বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে আপনি চিড়াকে খাবার হিসেবে বগ্রহণ করতে পারেন। ক্রনস ডিজিজ, ডায়রিয়া, ডাইভারটিকুলাইটিস, পেটের ব্যথা, এবং অন্যান্য অনেক রোগীর ক্ষেত্রে চিড়া বেশ উপকারী।
  • অতিরিক্ত গরমে যখন আপনার শরীরে পানির অভাব দেখা দেয় তখন আপনি পানি স্বল্পতা দূর করতে চিড়ার পানি সেবন করতে পারেন। এতে করে খুব সহজে আপনার শরীরে পানি স্বল্পতা পূরণ হবে। 
  • অনেকে বিভিন্ন ধরনের তরল জাতীয় খাবার খেতে পারে না যেমন দুধ।  খুব সহজেই অনেক ধরনের তরল পদার্থকে চুষে নিতে সক্ষম আর তাই আপনি চাইলেই ছেলের সাথে দুধ মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার দুধ খেতে যে সমস্যাটা বোধ হতো সেই সমস্যা আর হবে না।
  • মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে থাকে যেমন শরীরের বাড়তি ওজন একটি অন্যতম সমস্যা। তাই যারা খুব সহজে নিজের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে আনতে চাচ্ছেন তারা চিড়া ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এতে করে খুব স্বল্প খরচে এবং কোন রকম কোন কষ্ট ছাড়াই আপনি সহজে আপনার শরীরের ওজন কে কমিয়ে আনতে পারবেন।

মন্তব্য

চিড়া খাওয়ার অপকারিতা কি? আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি যে, চিড়ার অনেক পুষ্টি গুনাগুন ও উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। চিড়া খাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম বিবেচনা  করতে হবে তাহলে চিড়ার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা আপনি সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে পারবেন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top