জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার জানুন!

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ : বর্তমান বিশ্বে নারীদের একটি জটিল রোগ জরায়ু ক্যান্সার, যা ‘সাইলেন্ট কিলার’ বা নিরব ঘাতক নামেও পরিচিত। এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলেও রোগীরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। ফলে দীর্ঘদিন জরায়ু ক্যান্সারে ভোগেন।

জরায়ুর মুখে ক্ষতিকর মারাত্মক টিউমারই হলো জরায়ু মুখ ক্যান্সার। বর্তমানে নারীরা জরায়ু মুখ ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই আজ জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ, এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরেও অনেক সময় কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় না।

তবে জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ আছে। যেমন-

  • অনিয়মিত মাসিক 
  • ঘন ঘন প্রসাব
  • মলদ্বারে ব্যথা বা রক্ত পড়া
  • পা ফুলে যাওয়া 
  • প্রসাবে রক্ত 
  • ওজন কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • প্রসাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। 

এই সমস্ত লক্ষণগুলো ছাড়াও জরায়ু ক্যান্সারের আরও কিছু পূর্ববর্তী লক্ষণ আছে যা প্রতিটি নারীর জেনে রাখা আবশ্যক। 

  • পেটে ব্যথা অনুভব করা বা পেট ফুলে যাওয়া 
  • শরীরে ক্লান্তিবোধ
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া 
  • পেট ভারি হয়ে থাকা বা পেটে অস্বস্তি 
  • বমি বমি ভাব বা ঘন ঘন বমি হওয়া
  • যৌন মিলনের সনয় ব্যথা পাওয়া 
  • পিরিয়ডের পরেও ব্লিডিং হওয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও পেটের পরিবর্তন বা পেটের খুব বেশি সমস্যা, বদহজম, গ্যাসের সমস্যা, অল্প খাবারের পরেও পেট ভারি লাগা ইত্যাদি জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার কারণ

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) জরায়ু মুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০০টিরও বেশি প্রজাতির এইচপিভি ভাইরাস আছে। তবে এর মধ্যে দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণে নারীরা জরায়ু  ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। 

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস শতকরা ৯৯ ভাগ জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টি করে। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাস নারীদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। তবে গবেষক এবং চিকিৎসকের মতে, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পরপরই ক্যান্সার হয় না, ক্যান্সার হতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লাগে। 

আরও অন্যান্য কারণেও জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। যেমন-

  • অপুষ্টি
  • বাল্য বিবাহ বা অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক
  • ধুমপান
  • পিরিয়ডের সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব
  • অল্প বয়সে গর্ভধারণ
  • একাধিক সন্তান বা ঘন ঘন সন্তান ধারণ
  • গনোরিয়া
  • একাধিক যৌন সঙ্গী
  • দীর্ঘ বছর ধরে জন্মনিরোধক পিল ব্যবহার
  • কলামাইডিয়া
  • দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব

জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা 

জরায়ু ক্যান্সার বা গর্ভাশয় ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ঔষধ সেবন বা অস্ত্রপচারের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। এটি যেকোনো বয়সের নারীদের হয়ে থাকে। এমনকি ৫০ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সের নারীরাও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

তবে প্রানঘাতী এ রোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো সতর্ক এবং সচেতনা। চিকিৎসকদের মতে, জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে বা  ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে তা সহজেই চিকিৎসাযোগ্য। তাই এর উপসর্গ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কারণ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে এবং ষথা সময়ে টিকা নিলে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জরায়ুর শক্তিবর্ধক ও স্ত্রীরোগে কার্যকরী ওষুধ দেখুন আমাদের শপে।

জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য  বিভিন্ন ব্যয়বহুল থেরাপি হলো:-

  • কেমোথেরাপি 
  • লেজার থেরাপি 
  • রেডিয়েশন থেরাপি 
  • ক্রায়োথেরাপি
  • হিস্টেরেক্টোমি এবং 
  • কেমো রেডিয়েশন 

শেষ কথা 

জরায়ু ক্যান্সার বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সারা বিশ্বে নারীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হলো জরায়ু ক্যান্সার। তবে সতর্ক, সচেতনা বৃদ্ধি, এবং টিকা আবিষ্কারের ফলে এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। 

তাই উপরে উল্লেখিত জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ গুলির মধ্যে যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলেই অবজ্ঞা না করে যত দ্রুত সম্ভব গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top