জরায়ু টিউমারের লক্ষণ

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ জানুন; লক্ষণ ও চিকিৎসার বিস্তারিত বিবরণ!

জরায়ু টিউমার বর্তমান সময়ে বেশ ভয়াবহ ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে সঠিক চিকিৎসায় এই রোগ মোকাবিলা করা যায়। তাই ভয় না পেয়ে সচেতন হোন।

আজকের প্রবন্ধে আমরা জরায়ু টিউমার, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ

সাধারণত জরায়ু টিউমারের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু টিউমার যদি হয়ে যায় তবে কোন না কোন লক্ষণ অবশ্যই দেখা দিবে। আবার অনেক সময় জরায়ুতে টিউমার অবস্থান করে অথচ রোগী বুঝতে পারেন না যে তিনি ফাইব্রয়েড বা জরায়ু টিউমারে ভুগছেন। এক্ষেত্রে অন্য কোন রোগের আলট্রাসাউন্ড করতে যেয়ে টিউমার ধরা পড়ে। তাই চলুন জরায়ু টিউমারের লক্ষণ সমূহ জেনে নিই। 

১. মাসিক সমস্যা

নারীদের জরায়ু টিউমারের কারণে মাসিক চক্রে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। তাই মাসিক চক্রে কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। 

২. অনিয়মিত ঋতুচক্র

অনিয়মিত ঋতুচক্র বলতে নিয়ম অনুযায়ী মাসিক না হওয়াকে বোঝায়। জরায়ু টিউমারের লক্ষণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো  অনিয়মিত ঋতুচক্র। 

মেয়েদের স্বাভাবিক নিয়মে মাসিক চক্র বা পিরিয়ড হয় ২৮ দিন পরপর। এছাড়াও কারো যদি ২৮ দিনের আগে অর্থাৎ ২১ দিন পর মাসিক হয়, সেটাও স্বাভাবিক নিয়ম ধরা যায়। 

কিন্তু মাসিক যদি ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয় এবং ৩ দিনের কম বা ৭ দিনের বেশি হয়, সেটাই হলো অনিয়মিত ঋতুচক্র। আর এই অনিয়মিত ঋতুচক্রই জরায়ু টিউমারের লক্ষণ  নির্দেশ করে। 

৩. দীর্ঘস্থায়ী মাসিক

জরায়ু টিউমার হলে মাসিক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে এবং মাসিক হওয়ার পর সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটি জরায়ু টিউমারের আরো একটি লক্ষণ। তাই এরকমটা হলে মোটেই অবহেলা করা উচিত নয়। 

৪. তলপেট ফুলে যাওয়া

জরায়ু টিউমারের আর একটি লক্ষণ হলো ঋতুস্রাবের সময় তলপেট ফুলে যাওয়া। জরায়ু টিউমার যদি বড় হয়ে যায় তাহলে ঋতুস্রাবের সময় তলপেট ফুলে যাবে এবং ব্যথা করবে।  

৫. অতিরিক্ত রক্তস্রাব

জরায়ুর মুখে টিউমার হলে অনেক সময় মাসিকের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু রক্তস্রাব স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। অতিরিক্ত রক্তস্রাবের কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।  

৬. তলপেটে ব্যথা

জরায়ু টিউমার হলে তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা অনেক সময় কোমড়ের দিকেও হয়ে থাকে। যদি মাসিক বা পিরিয়ডের সময় ব্যতীত এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৭. যৌন মিলনে ব্যথা

জরায়ু টিউমারের উপস্থিতির কারণে যৌন মিলন বা সহবাসে অস্বস্তি এবং ব্যথা অনুভূত হয়। তাই মিলনের সময় অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভূত হলে ডাক্তারের কাছে যান। 

৮. ঘনঘন প্রসাব

ফাইব্রয়েড বা জরায়ু টিউমারের কারণে মুত্রথলিতে চাপ সৃষ্টি হয় ফলে ঘনঘন প্রসাব করার প্রয়োজন পড়ে। জরায়ু টিউমারের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো এটি। 

৯. গর্ভপাত বা গর্ভধারণে অক্ষমতা

জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত মহিলা গর্ভধারণে অক্ষম হবে। এমনকি এ টিউমারের ফলে অনেক নারী বন্ধ্যাত্ব হয়। 

জরায়ু টিউমার কি 

নারীদের অতি সংবেদনশীল একটি অঙ্গ জরায়ু, যা নরম মাংসল পেশি দিয়ে তৈরি। এই মাংসল পেশির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে টিউমার হয়ে থাকে। জরায়ুতে সৃষ্ট টিউমারের ওপর নাম ইউটেরিন ফাইব্রয়েড, যাকে সংক্ষেপে ফাইব্রয়েড বলা হয়। 

জরায়ু টিউমার একটি পরিচিত এবং সাধারণ রোগ, যা সকল বয়সী নারীদের হতে পারে। ২০ থেকে ৭০ শতাংশ নারীদের প্রজননক্ষম বয়সে এ সমস্যা দেখা দেয় এবং  নারীরা কোন সমস্যার কারণে আলট্রাসাউন্ড করতে গেলে এটি ধরা পড়ে।

ফাইব্রয়েড বা জরায়ু টিউমার নারীদের গর্ভধারণের সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে তা ক্যান্সারে রুপান্তরিত হতে পারে। 

ফাইব্রয়েড বা জরায়ু টিউমার তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-

১.সাব সেরাস

২.ইন্ট্রা মুরাল

৩.সাব মিউকাস 

তিন প্রকার টিউমারের মধ্যে সাব মিউকাস টিউমার বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে জটিলতা সৃষ্টির আগেই চিকিৎসা নিতে পারলে এটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। গর্ভধারণের আগে এ টিউমার ধরা পড়লে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিলে কোন প্রকার জটিলতা ছাড়াই গর্ভধারণ করা সম্ভব। 

জরায়ু টিউমার হওয়ার কারণ 

জরায়ু টিউমার হওয়ার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ নেই। সাধারণত জরায়ু পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে ফাইব্রয়েড বা জরায়ু টিউমার সৃষ্টি হয়। 

এছাড়াও নারীদের জরায়ু টিউমার হওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ ডাক্তাররা উল্লেখ করে থাকেন। যেমন-

১. সন্তান নিতে বিলম্ব

আমাদের দেশে অনেক নারী আছেন যারা বিয়ের পর সন্তান নিতে বিলম্ব করেন। বাচ্চা নিবেন না তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এতে শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং জরায়ু টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  

২. অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা 

অনেক নারীর অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতার কারণে তলপেটে মেদ বা চর্বি জমে। যার ফলে শারীরিক পরিশ্রম করতে পারে না। এসব নারীদের জরায়ু টিউমার হওয়ার আশংকা বেশি।  

৩. দীর্ঘ গ্যাপ দিয়ে সন্তান নেওয়া

অধিকাংশ নারী বিয়ের পর একটি সন্তান জন্ম দেয়ার পর দীর্ঘ গ্যাপ দিয়ে আর একটি সন্তান নিতে চান। আর গ্যাপের সময় গুলোতে জন্ম বিরতি পিল গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন গ্যাপ দেয়া এবং পিল খাওয়ার ফলে জরায়ু টিউমার হতে পারে।   

৪. জিনগত কারণ

জরায়ু টিউমার হওয়ার পিছনে জিনগত কারণ রয়েছে। বংশে যদি মা, নানী, দাদী, ফুপুর টিউমার থেকে থাকে তাহলে এ রোগটি হতে পারে। 

শেষ কথা 

শেষ কথায় বলা যায় জরায়ু টিউমার একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। জরায়ু টিউমার বিবাহিত এবং অবিবাহিত সকল বয়সী নারীদের হয়ে থাকে। সাধারনত জরায়ু টিউমারের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে উল্লেখিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবহেলা না করে অতি শীঘ্রই ভালো হসপিটাল ও অভিজ্ঞ ডাক্তার থেকে পরামর্শ নিন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top