টনসিলের চিকিৎসা কি

টনসিলের চিকিৎসা কি? জানুন কখন অস্ত্রোপচার করা দরকার!

শীতে ঠাণ্ডা লাগা ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে অনেকেরই টনসিলের সমস্যা দেখা দেয়। আবার একটু গলা ব্যথা হলেই আমরা মনে করি টনসিল বেড়েছে। মুখ-গলা, নাক, কান দিয়ে শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয় এই টনসিল। তাই টনসিল আক্রান্ত হলেই জীবাণুর প্রকোপ বাড়ে। আর সাথে বাড়ে অন্যান্য অসুখের ভয়ও। তাই টনসিলের চিকিৎসা কি এ বিষয়ে জেনে রাখা ভালো। কারণ টনসিল হলো আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ এবং আমাদের মুখের ভেতরেই অবস্থান করে। তাই টনসিল বাড়লে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। 

টনসিলের চিকিৎসা

টনসিল একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি ক্ষেত্র বিশেষে জটিলতা সৃষ্টি করে। টনসিলের চিকিৎসা কি এ বিষয়ে অবগত থাকা প্রয়োজন৷ কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই টনসিল ভালো হয়। তবে বেশি হলে চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই টনসিলের সমস্যা হলে টনসিলের চিকিৎসা কি হতে পারে এবং কি ধরনের চিকিৎসা নিলে এটি ভালো হয় তা জানা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক টনসিল হলে টনসিলের চিকিৎসা কি ধরনের হতে পারে-

লবণ পানি 

টনসিলের চিকিৎসায় লবণ পানি খুবই কার্যকরী। এটি একটি ঘরোয়া রেমিডি। এক গ্লাস গরম পানিতে সামান্য একটু লবণ ফেলে তা দিয়ে কুলকুচি বা গার্গল করে নিলে সহজেই দূর হয় টনসিলের ব্যথা। কুলকুচি করার সময় কান-মাথা জড়িয়ে নিন। ফ্যানের বাতাস থেকে দূরে থাকুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমানোর আগে এটি করুন। 

লেবু-মধু

টনসিলের চিকিৎসা কি ধরনের হতে পারে এ বিষয়ে জানতে হলে টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কেও জানা উচিত। এক্ষেত্রে লেবু-মধু আরও একটি কার্যকরী সমাধান। এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে পাতিলেবুর রস, ১ চামচ মধু ও সামান্য  একটু লবণ মিশিয়ে খান। টনসিলে ব্যথা হলে দিনের মধ্যে মাঝে মাঝেই এই পানীয় তৈরি করে পান করুন। এই পানীয় টনসিলের ব্যথায় বেশ উপশম দেয়। শুধু তাই নয়, এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। 

গ্রিন টি ও মধু

গ্রিন টি একটি উৎকৃষ্ট মানের হার্বাল পানীয়। এতে রয়েছে ভেষজ গুণ। কারণ গ্রিন টি তে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এটি জীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে, সেই সাথে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর মধুর অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল টনসিলের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। আধ চামচ গ্রিন টি ও এর সাথে এক চামচ মধু দিয়ে মিনিট দশেক ফুটিয়ে নিন। দিনে তিন বার এই চা খান তাহলে টনসিলের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।

হলুদ ও দুধ

হলুদ ও দুধ যথেষ্ট কার্যকরী গুণসম্পন্ন একটি ঘরোয়া পদ্ধতি। হলুদ ও দুধ একত্রে মিশিয়ে খেলে অনেক রোগ মুক্তি ঘটে। কারণ হলুদ অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

এক কাপ গরম দুধে সামান্য হলুদ গুড়া মিশিয়ে নিন। গলা ব্যথা দূর করতে সত্যিই এর জুড়ি মেলা ভার। তাই হলুদ মেশানো গরম দুধ যেমন সর্দি-কাশি দূর করে। ঠিক তেমনই টনসিলের ব্যথা দূর করতেও বিশেষ কার্যকর একটি ঘরোয়া চিকিৎসা।

আদা চা

সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাতে আদা চা একটি উত্তম পানীয়। আদা চা ঠিক তেমন টনসিলের ব্যথা কমাতেও কাজে লাগে। আদা ঔষধিগুণে ভরপুর কারণ অ্যান্টি ব্যকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফালামেন্টরী উপাদান সংক্রামণ ছাড়াতে বাধা দেয়। এক কাপ আদা চা তৈরি করতে দেড় কাপের সমপরিমাণ পানিতে এক চামচ আদা কুচি আর প্রয়োজন অনুসারে চা দিয়ে ৮-১০ মিনিট পানি ভালো করে ফুটিয়ে নিন। দিনে অন্তত ২-৩ বার এই পানীয় করুন। আদা চা গলার ব্যথা কমিয়ে দিতেও  খুবই কার্যকরী।

রসুন

রসুন খুব ভালো একটি অ্যান্টিবায়োটিক। আর গলার সমস্যার জন্য খুবই ভালো রসুন। যা টনসিলের ব্যথা কমাতেও কাজ করে। এ কারণে রসুন আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রসুন রাখতে কারণ প্রতিদিন এক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে অনেক রোগের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। এছাড়া গরম ভাতে রসুন ভেজে মেখে খাওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। যে কারণে রেহাই মেলে ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

মেথি

গলা ব্যথায় মেথি কার্যকারী। গরম পানিতে মেথি ফেলে ফুটিয়ে ওর মধ্যে চা পাতা ফেলে দিন। কিছুক্ষণ চাপা দিয়ে রেখে এরপর ছেঁকে খেয়ে নিন। এতে টনসিলের গলার ব্যথার সমস্যার সমাধান হয়। সেই সঙ্গে সংক্রমণ থেকেও রেহাই মিলবে।

ক্যামোমাইল চা

ক্যামোমাইল চা খুবই উপকারী। ক্যামোমাইলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়াও ক্যামোমাইলের আরও একটি গুণ হলো এটি সংক্রমণ আটকায়। ক্যামোমাইলের নিজস্ব একটা গন্ধ রয়েছে যা গলার সমস্যায় উপশম দেয়। বলা হয়, ক্যামোমাইলের চা দিয়ে ভেপার নিলেও ভালো কাজ করে। সেই সঙ্গে গলা, নাক পরিষ্কার থাকে এই চা।

টনসিলের লক্ষণ 

টনসিলের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়কে দায়ী করা হয়। টনসিলের কারণে বারবার ঠাণ্ডা- সর্দি লাগে। চলুন জেনে নেওয়া যাক টনসিলের লক্ষণগুলো-

  • টনসিলের প্রাথমিক লক্ষণ হলো গলাব্যথা। টনসিলের কারণে গলাব্যথা এবং একই সঙ্গে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে। সেই সাথে শরীরে বেশ ক্লান্তি ভাবও থাকে।
  • টনসিলের গলাব্যথার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে পারে জ্বর যা ১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। তার সাথে থাকতে পারে খাবার গ্রহণে অরুচি ও বমি বমি ভাব।
  • আমাদের গলার সঙ্গে কানের যোগসূত্র  রয়েছে। তাই টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা হয়। তাছাড়া অনেক সময় গায়েও ব্যথা হতে পারে।
  • অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে। এ কারণে মুখ খুলতে ও গিলতে অসুবিধা হতে পারে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই টনসিল হয়। শিশুদের টনসিল হলে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে।
  • অনেকসময় কন্ঠস্বর ভারী হয়ে যায় এবং মুখে দুর্গন্ধ হয়।

কী কী কারণে টনসিলের অস্ত্রোপচার করা দরকার?

সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় টনসিল নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। তবে তা দীর্ঘমেয়াদি হলে জটিলতার সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করলে যেসব সমস্যা হতে পারে-

  • টনসিলে ইনফেকশন হলে চারপাশে ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে। এতে টনসিলে পুঁজ জমে ফোঁড়া পর্যন্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে অপারেশন করা ভালো।
  • অনেকসময় টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। তখন শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতেও অনেক কষ্ট হতে পারে। এ অবস্থায় অপারেশন করা শ্রেয়।
  • যখন ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হয়।
  • বয়স্কদের দীর্ঘমেয়াদি টনসিল প্রদাহ পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই অপারেশন ভালো।

কখন অস্ত্রোপচার করা যাবে না

টনসিল বড় হলে বা অসুবিধা থাকলে অপারেশন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টনসিল অপারেশন করা যায় না বা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে পরে অপারেশন করতে হয়। যেসব ক্ষেত্রে টনসিলের অপারেশন করা যায় না-

  • টনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে।
  • জ্বর বা ব্যথা থাকলে সে অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না।
  • শিশুদের বয়স তিন বছরের কম হলে।
  • রক্তশূণ্যতা থাকলে বা রক্তে হিমেগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে।
  • রক্তরোগের ইতিহাস থাকলে বা হিমোফিলিয়া নামক রোগ থাকলে।
  • নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অপারেশন করা যায় না।

উপসংহার

টনসিলের চিকিৎসা প্রাথমিক অবস্থায় বাসায় বসে করা যায়। তবে টনসিলের চিকিৎসা কি ধরনের হয় সে সম্পর্কে ধারণা রাখলে আপনি ঘরে বাসেই এর প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন। তবে জ্বর বা ইনফেকশন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে টনসিলের অপারেশনও খুবই সহজ অপারেশন, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সুস্থ থাকুন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top