টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না জানুন বিস্তারিত তথ্য!

টনসিল হলে চিকিৎসকেরা মূলত টকজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, এমনকি কিছু বিশেষ ধরনের শাকসবজি খেতে নিষেধ করেন। তাছাড়া দুগ্ধজাত খাবারের ক্ষেত্রেও টনসিল রোগীদের বিধিনিষেধ রয়েছে।  

তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা নিয়ে। এবং শেষ পর্যন্ত আমরা টনসিল হলে যেসব খাবার আপনি খেতে পারেন তা নিয়েও একটা ছোট্ট আলোচনা করবো। তাই চলুন, আর দেরি না করে শুরু করা যাক। 

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না? 

আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ হলো টনসিল। টনসিল যখন জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন তাকে টনসিলাইটিস বলে। 

টনসিলাইটিস হলে গলা ব্যথা হয়, গলা ফুলে যায়, ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়, মাথা ব্যথা করে এবং জ্বর সহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এটি সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। 

তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না, তা কিন্তু নয়। টনসিলের সমস্যা দেখা দিলে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং জানতে হবে কিভাবে টনসিল সারানো যায়। 

সেইসাথে টনসিল সমস্যা থাকলে বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। তাই আসুন জেনে নিই, টনসিল থাকলে যে সমস্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। 

দুগ্ধজাত খাবার

টনসিল থাকলে দুধ বা দুগ্ধ জাত খাবার যেমন ছানা, চিজ, পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা টনসিল হলে গলায় যে শ্লেষ্মা জমা পড়ে তা দুগ্ধজাত খাবার আরো বাড়িয়ে দেয়। দুধের অতিরিক্ত প্রোটিন টনসিলকে আরো শক্ত করে ফেলতে পারে। 

টক জাতীয় খাবার

টক জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ টক জাতীয় খাবার টনসিলের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও টক ও ঝাল জাতীয় খাবার টনসিলের পাথর বৃদ্ধি করে তোলে। 

ফাস্টফুড 

ফাস্ট-ফুড খাবারে থাকে ঝাল ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান। এছাড়াও এগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুকনা এবং শক্ত হয়। তাই আপনার টনসিল হয়ে থাকলে অবশ্যই ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা উচিত। 

মিষ্টিজাতীয় খাবার 

মিষ্টিজাতীয় খাবার টনসিলের বৃদ্ধি ও প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। তাই চিনি, সাদা পাস্ত, ময়দার রুটি ও মিষ্টি কম খেতে হবে। 

বিশেষ কিছু সবজি

বিশেষ কিছু সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলি টনসিলের সমস্যা বৃদ্ধি করে থাকে। 

অতিরিক্ত তেল চর্বি

অতিরিক্ত তেল-চর্বি, লবণ এবং মসলা যুক্ত খাবার টনসিলের জন্য ক্ষতিকর। এগুলি টনসিল শক্ত করে ফেলে। তাই টনসিল হলে মসলাজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। 

এছাড়াও অন্যান্য যেসব খাবার টনসিল রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে তা হলো: 

  • মিষ্টি আলু, মুলা, চিনা বাদাম খাওয়া যাবে না। 
  • ফুচকা, চিপস, চানাচুর এবং চটপটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 
  • টমেটো সস, আলু ও শুকনো ফল খাওয়া যাবে না। 
  • যে কোন কোমল পানীয় যেমন কফি, মদ ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

এছাড়াও এলার্জি যুক্ত খাবার এবং যে সমস্ত খাবার সহজে হজম হয় না সেসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। 

টনসিলের লক্ষণ

ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে টনসিলাইটিস হয়ে থাকে। টনসিলাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলো টনসিল ফুলে যাওয়া এবং জ্বালা পোড়া করা। এছাড়াও টনসিলাইটিস হওয়ার আগে যে সমস্ত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। 

  • টনসিল লাল হওয়া 
  • গলা ফুলে যাওয়া 
  • খাবারে অরুচি 
  • গলায় প্রচন্ড ব্যথা
  • মাথা ব্যথা
  • মুখ হা করতে এবং খাবার খেতে কষ্ট 
  • বমি বমি ভাব
  • অনেক সময় কানেও ব্যথা হতে পারে 
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া 
  • পেট ব্যথা হওয়া 
  • ঢোক গিলতে কষ্ট 
  • মুখে দুর্গন্ধ 
  • স্বরভঙ্গ হওয়া 
  • গলার মধ্যে ফোস্কা বা ক্ষত সৃষ্টি হওয়া। 
  • গলার মধ্যে জ্বালা পোড়া করা। 

টনসিল অপারেশন হলে কি কি খাওয়া যাবে না? 

টনসিল এক ধরনের লসিকা গ্রন্থি। এই গ্রন্থি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে ইনফেকশন বা প্রদাহ হয় যাকে আমরা টনসিলাইটিস বলে থাকি। টনসিলাইটিস হওয়ার পর চিকিৎসকের দেয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিত ওষুধ সেবনে টনসিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

টনসিল ইনফেকশনের চিকিৎসা সঠিক ভাবে না করলে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চললে দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন হয়ে থাকে। এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি ২ বছরের মধ্যে ৪ থেকে ৫ বার হয় তবে এই অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়াটাই শ্রেয় বলে মনে করা হয়। কারণ দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে তা ধীরে ধীরে জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

তাই টনসিলাইটিসের সমস্যা অবহেলা না করে চিকিৎসকের নির্দেশ মোতাবেক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তবে টনসিল অস্ত্রোপচার করানোটাই উত্তম। 

টনসিল অপারেশনের পর শুধু শক্ত এবং ধারালো খাবার যেমন চিড়া, পপকর্ন, মুড়ি, আলুর চিপস বা ক্র্যাকার্স, খই, টোস্ট ইত্যাদি খাবার ছাড়া স্বাভাবিক সকল খাবার খেতে পারবেন।

টনসিল হলে কি খেতে হবে? 

বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে যেমন রুচি হারিয়ে যায়, ঠিক তেমনি টনসিল হলেও খাবার প্রতি কোন রুচি থাকে না। তাই যতদূর সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। 

টনসিল হলে শরীর কে হাইড্রেট রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার টনসিলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। 

এছাড়াও টনসিলের প্রদাহ দূর করতে যে সমস্ত খাবার গুলো সহায়ক তা হলো 

নারকেল তেল, মধু ও লেবুর রস 

একটি পরিস্কার পাত্রে মধু ও লেবুর রসের সাথে উৎকৃষ্ট মানের নারকেল তেল মিশিয়ে হালকা আঁচে গরম করুন। এরপর মিশ্রণটি ঠান্ডা করে একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিন। 

টনসিলের সংক্রমণ কমাতে এই মিশ্রণটি প্রতিদিন এক টেবিল চামচ করে এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে দুই থেকে তিন বার সেবন করুন। এতে টনসিলের সমস্যা কমে যাবে। 

আদা, মধু ও লেবুর সিরাপ

এক কাপ গরম পানিতে পরিমাণ মতো আদা ছেঁচে পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর সেই পানি ছেঁকে তাতে আদা ও লেবুর রস মিশিয়ে দৈনিক তিন বার পান করুন। এতে টনসিলের সমস্যা কমে আসবে। 

গরম স্যুপ

টনসিলে আক্রান্ত রোগীদের জন্য গরম স্যুপ অত্যন্ত কার্যকরী এবং আদর্শ খাবার। টনসিল রোগীদের যেহেতু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন তাই বিভিন্ন কাঁচা সবজি কুঁচি কুঁচি করে কেটে সেদ্ধ করে স্যুপের সাথে মিশিয়ে খেলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। এমনকি স্যুপের সাথে নরম পাস্তা মিশিয়ে খেতে পারবে।

আদা

আদা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টিইনফ্লেমেটরি গুন সমৃদ্ধ উপাদান। আদা যে কোন প্রদাহ, ব্যথা এবং সংক্রমণ কমাতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। তাই টনসিলাইটিসে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং গলার প্রদাহ কমাতে আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।  

দই

দই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এতে রয়েছে হেলদি ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং উপকারী ব্যাক্টেরিয়া যা টনসিল সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। 

পাকা কলা

কলা একটি পুষ্টিকর খাবার। কলা নরম তাই টনসিলে আক্রান্ত রোগী সহজেই তা খেতে পারে। যেহেতু টনসিলে আক্রান্ত রোগীর শক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ তাই কলার সাথে আরও কিছু নরম ফল মিশিয়েও খেতে পারবে।

মধু

টনসিলের সমস্যায় মধু বেশ উপকারী। কারণ মধু ব্যাক্টেরিয়াল ও ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী। তাই টনসিল হলে মধু খান।

ডিম

টনসিলাইটিসে ডিম একটি আদর্শ খাবার। কারণ ডিমে রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, আয়রন, জিংক ও সেলেনিয়াম সহ আরও অনেক পুষ্টিকর উপাদান যা টনসিল সমস্যা দূরীকরণে ব্যাপক ভাবে কার্যকর। 

উপসংহার 

টনসিলাইটিসের সাধারণ লক্ষণ গুলি দেখা দিলে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে তা প্রতিকার করা সম্ভব। ওপরে উল্লেখিত টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা মেনে চললে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে নির্ধারিত মাত্রায় ওষুধ সেবনে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top