ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা কী? জানুন গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা সম্পর্কে জানার আগে যে বিষয় জানা উচিত তা হলো এলার্জি, এ্যাজমা বা হাপানি এবং শ্বাসকষ্ট একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ। সাধারণত এলার্জির তীব্রতা বাড়লে এ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তাদের বিশেষ নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করাই উচিত। 

যেকোনো ঔষধ ছাড়া শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলেও এ সমস্যার তীব্রতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এসব রোগীদের চলাফেরা, ওঠাবসা, খাবার-দাবার এক কোথায় জীবনযাত্রার সকল বিষয়ে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। 

ঠান্ডা এলার্জির  চিকিৎসা হিসেবে করণীয় এবং বর্জনীয় নিয়ে এই লেখনীতে উপস্থাপন করা হলো।

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা; প্রাথমিক যেসব বিষয় মেনে চলবেন

কোন খাবার বা কোন পরিবেশের কারণে এই এলার্জি সমস্যাগুলো হচ্ছে। এভাবে খুঁজে বের করে যে সকল কারনে এলার্জি জনিত সমস্যা হয়ে থাকে সেগুলো সাবধানে এড়িয়ে চলতে হবে।

অ্যালার্জি প্রতিরোধক (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) মেডিসিন কিনুন আমাদের শপ থেকে!

যদি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার কারণে এলার্জি হয়ে থাকে তাহলে সে সকল খাবার পরিহার করতে হবে। সেইসাথে রাস্তার ধুলাবালি এবং গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যদি সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধান করতে হব। যদি কখনো এলার্জি সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

এলার্জির হোমিও ঔষধ

এলোপ্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি এলার্জির জন্য বেশ ভালো কিছু হোমিও ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই হোমিও ঔষধে কোন এলোপ্যাথিক ঔষধের চেয়ে পার্শপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। তাই চাইলেই এলার্জির চিকিৎসা হোমিও ঔষুধের মাধ্যমে করা সম্ভব।

ঠান্ডা এলার্জি রোধে ঘরোয়া চিকিৎসা

যেকোনো এলার্জির সমস্যায় ঔষধ খাওয়ার চেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু নিয়ম মেনে চললে ভাল ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া শরীরে এলার্জির কারণে যে রস বের হয়, ঘি মেখে নিয়ে ঐ আক্রান্ত স্থানে লাগালে আরেকটা উপকার পাওয়া যায়। এলার্জির চিকিৎসা ঘি ভীষণ কার্যকর। দৈনিক এক চামচ করে ঘি খেতে পারলে ঠান্ডা লাগা বা ঠান্ডা জনিত সমস্যায় এলার্জি থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।

প্রতিরোধই ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ 

এলার্জি সমস্যায় ডাক্তাররা সবসময় ঔষধ সেবন না করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর কারণ হলো ইহা এমন একটি রোগ যার উপযুক্ত চিকিৎসা হলো প্রতিরোধ করা। তারপরও যখন এলার্জির সমস্যা গুরুতর হয়ে পড়ে তখন চিকিৎসকরা সাধারণত মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম জাতীয় ঔষধ সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। কেননা বয়সভেদে এই ঔষধের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে এলার্জির জন্য যদি মাথায় যন্ত্রণা হয় এবং সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে আসে বা নাক দিয়ে জল পড়তে থাকে তাহলে একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে সেখানে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল দিয়ে গরম ভাপ নাকের ভেতরে টেনে নিন।

এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

ডাক্তারগণ এলার্জির জন্য নির্দেশিত ঔষধ মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০ মিলিগ্রাম প্রতিদিন একবার সেবনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা;যেসব খাবার পরিহার করবেন

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা ঔষধ গ্রহনের মাধ্যমে এবং ঘরোয়া উপায়ে, দুইভাবেই করা সম্ভব। ঠান্ডা এলার্জি অন্যান্য রোগের মতো বিশেষ তেমন কোনো রোগ না হলেও এর কারণে মানুষের সামনে বিব্রত হতে হয় সবচেয়ে বেশি। তাই এলার্জি এড়াতে যেসব খাবার পরিহার করবেন:

১.ইলিশ মাছ

২.চিংড়ি, 

৩.গরুর মাংস, 

৪.দুধ, 

৫.হাঁসের ডিম,

৬. মিষ্টি কুমড়া, 

৭.কচু, 

৮.বেগুন, 

৯.আপেল, 

১০.কলা 

এ সকল খাদ্য আপনার এলার্জি ও শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিবে। তাই এসব থেকে সাবধান থাকুন।

এলার্জি মূলত কি?

এলার্জি হল ইমিউনসিস্টেমের এক প্রকার অবস্থা যা পরিবেশগত বা খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণে মানবদেহে হাইপার-সেনসিটিভিটি রূপে প্রকাশ পায়। এলার্জির বাহ্যিক রূপ সাধারণত শরীরে চুলকানো, গোল গোল চাকা দাগ, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহনে বাধার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ঠান্ডা জনিত এলার্জি কেন হয় ?

যাদের শরীরে রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেশি তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা এলার্জি বেশি দেখা যায়। তবে কিছু কারণে এই এলার্জি শরীরে বেশ ভালোভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে । যেমন:

বিভিন্ন পশু পাখির লোম

কসমেটিক্স সামগ্রী

গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া

রাস্তার ধুলাবালি

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জাতীয় খাবার যেমন: ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি, বেগুন, হাঁসের ডিম এসব খাদ্য থেকে মানবদেহে অ্যালর্জিজনিত সমস্যাগুলো বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। 

এছাড়া বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ায় এলার্জির সমস্যা বেশি প্রকোপ হয়।

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় বর্জনীয় বিষয়সমূহ :

সর্বোত্তম হয় সবসময় লক্ষ্য রাখুন কি কি কারণে আপনার এলার্জি, এ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন আরো কি কি করা দরকার তা অনুধাবন করুন।

  • বাসা বাড়িতে কার্পেট ব্যবহার না করা খুব উত্তম।
  • অতি উচ্চ মাত্রার মাথায় ধরে এমন সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • সব প্রকার স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
  • বাসা-বাড়িতে বিড়াল, কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণী পোষা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
  • মশার কয়েলও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে থাকে তাই এর থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন।
  • সবরকম স্প্রে করার সময় নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন কেননা এটাও বেশ ক্ষতিকর।
  • যে কোনো ভাবেই হোক ধূমপান পরিহার করা অপরিহার্য।
  • ঠান্ডা পানি এবং ঠান্ডা খাবার গ্রহণ করা পরিহার করুন।
  • বাসা বাড়ির ফ্রীজে রাখা খাবার ভালো করে গরম করে খাবেন।
  • পুরাতন বই, আসবাব-পত্র এবং বিছানা বা কার্পেট ঝেড়ে নেওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন বা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন।
  • শীতকালে নিয়মিত লেপ-তোষক ভাল করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।
  • শীতের সময় পরিধেয় শীতবস্ত্র ধুঁয়ে ব্যবহার করুন ।
  • শীত থেকে বাচতে উলযুক্ত কাপড়ের পরিবর্তে সুতি অথবা জিন্সের কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ছোট বা বড় ফুল ধরা গাছের নিচে বা তার আশেপাশে বসবেন না কেননা ফুলের পাপড়ি আপনার শ্বাসকষ্ট বাড়াবে।
  • রান্না করার সময় মশলার তীব্র ঝাঁঝাঁলো গন্ধ এড়াতে মাস্ক বা শুকনো কাপড় ব্যবহার করবেন।
  • ঘরে যেন তেলাপোকা এবং ছারপোকা বাসা বাধতে না পারে সেদিকে অবশ্যই সজাক দৃষ্টি রাখুন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ঠান্ডা জনিত এলার্জি প্রতিরোধে যেসব পালন করার চেষ্টা করবেন

ডাক্তাররা ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে এলার্জির চিকিৎসা করার চেয়ে এলার্জি প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো। তাই যদি আপনার ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে খুজে বের করতে হবে যে এই এলার্জির উৎস কোথায়।

  • ধূলাবালি থেকে বাচতে রাস্তা-ঘাটে চলাচলের সমসয় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • সবসময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন,এনজয় করুন।
  •  কখনোই ভয়, হতাশা ও চিন্তাগ্রস্থ হবেন না । বিষয়টা ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিন।
  • মানসিক ভাবে চাঙা থাকতে ভুলে যান যে আপনার এ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা রয়েছে।
  • শ্বাস গ্রহনের পরে কমপক্ষে প্রায় পনের সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখার অভ্যাস করুন।
  • প্রতিদিন কিছু সময় শ্বাস- প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
  •  সুযোগ পেলে কিছুটা সময় স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিন।
  •  দুই ঠোট শীষ দেওয়ার ভঙ্গিতে এনে আস্তে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
  • সবসময় ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন বা গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন।

শ্বাসকষ্ট বেশি হলে বা শ্বাসকষ্ট না কমলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ঠান্ডা জনিত এলার্জির প্রধান সব লক্ষণ

এলার্জির প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি ও ছোট ছোট অংশ গোল হয়ে ফুলে যাওয়া। 

তবে ঠান্ডা এলার্জির আরেকটি লক্ষণ হলো দ্রুত নাক বন্ধ হয়ে আসা এবং বারবার হাচি হওয়া। 

তাছাড়া এসবের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যেতে পারে। 

এলার্জিতে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এই কারণে অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে।

শেষকথা

ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা বা এলার্জি জনিত সমস্যা দূর করার একমাত্র উপায় হল এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অর্থাৎ যে সকল কারণে আপনার ঠান্ডা এলার্জি হয়ে থাকে সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এলার্জিজনিত খাবারগুলো পরিহার করার পাশাপাশি যে সকল কাজ করলে সমস্যা বেড়ে যায় সেগুলো থেকে বিরত থাকুন। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top