ডায়াবেটিস ওষুধের নাম

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়; জানুন প্রয়োজনীয় সব তথ্য!

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। ডায়াবেটিস হলো একধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার।মানবদেহের ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে যে বিপাকজনিত রোগ টি হয় তার নামই ডায়বেটিস।

মূলত ডায়াবেটিস হলে দেহের অগ্ন্যাশয় থেকে এই ইনসুলিন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে বা কম নিঃসৃত হয়। অথবা বিভিন্নভাবে অকার্যকর হওয়ায় কোষে গ্লুকোজের ঘাটতি ঘটে এবং রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়; জেনে নিন বিস্তারিত

যে সকল ব্যাক্তির দাদা-দাদী, নানা-নানী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার বেশ ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও ডায়বেটিস হওয়ার বেশ অনেকগুলো নির্দিষ্ট লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। যেমন –

  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা।
  • শরীর দুর্বল লাগা থেকে ঘোর ঘোর ভাব আসা।
  • ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া।
  • সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে বাজে হাইপো হওয়া।
  • মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া।
  • কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া।
  • শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না শুকানো।
  • চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে এবং চুলকানি ভাব।
  • অতিরক্ত বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা।
  • হঠাৎ চোখে কম দেখতে শুরু করা।

ডায়াবেটিসের ওষুধ (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) কিনুন আমাদের শপ থেকে!

ডায়বেটিসের তিনটি ধরন

অসুস্থতার বিচারে ডায়াবেটিসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ধরণ গুলো হলো

  • টাইপ 1 ডায়াবেটিস : শরীরে যখন একদমই ইনসুলিন তৈরি হয় না, সেটাই টাইপ-1 ডায়াবেটিস।
  • টাইপ 2 ডায়াবেটিস : শরীরে যখন নির্দিষ্ট ইনসুলিন তৈরি হয় না বা হলেও তা সঠিক ভাবে কাজ করে না, সেটাই টাইপ-2 ডায়াবেটিস।
  • প্রি ডায়াবেটিস : যখন দেহের সুগার লেভেল স্বাভাবিক লেভেল থেকে একটু বেশি থাকে, সেটাই প্রি ডায়াবেটিস।

ডায়বেটিস এর মাত্রাতে সুগার লেভেল

ডায়াবেটিস হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তির উপায় নেই।তবে নিয়ম মেনে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

  • সাধারণত রেন্ডম ব্লাড সুগারে ১১ মি.মো./লি. এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে 

শরীরে ডায়াবেটিস আছে।

  • ফাস্টিং ব্লাড সুগারে ৭ এর মি.মো./লি. এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে শরীরে ডায়াবেটিস আছে।
  • তাছাড়া সকালে খালি পেটে মাপলে যদি ৫.৬ মি.মো./লি. এর  কম হয় তাহলে ধরে নিতে হবে ডায়াবেটিস নেই।
  • আর যদি ৫.৬ থেকে ৬.৯ মি.মো./লি. এর মধ্যে হয় তাহলে  ধরে হবে প্রিডায়বিটিস।

ডায়বেটিসের কারণসমূহ 

ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব মাথা থেকে পা পর্যন্ত সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গের ওপর পড়ে। বেশি আক্রান্ত হয় চোখ, দাঁত, হৃদযন্ত্র ও কিডনি। ডায়াবেটিসের কারণ সমূহ হলো:

  • অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ
  • বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করা
  • শরীরচর্চা না করা
  • খেলাধুলা না করা
  • অতিরিক্ত ওজন হওয়া

ডায়াবেটিসের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা 

সাধারণত ডায়াবেটিসে নিউরোলজিক্যাল সমস্যাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে— পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। পায়ে-হাতে যে সমস্যাটি হয়। আরেকটা হচ্ছে— ইন্টার্নাল অর্গানের নার্ভ যখন যুক্ত হয়, সেটাকে বলা হয় অটোনোমিক নিউরোপ্যাথি। এর ফলে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা হতে পারে।

☆ পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি:সাধারণত রোগীর কিছু নিউরোপ্যাথলজিক্যাল উপসর্গ (হাতে-পায়ে ঝি ঝি করা, জ্বালাপোড়া করা, ব্যথা করা, অলটার সেন্সেশন বা হেঁটে যাচ্ছেন পায়ের তলায় নরমাল একটা সেনসেশন হচ্ছে) দেখা দিতে পারে।

☆ অটোনমিক নিউরোপ্যাথি:অটোনমিক নার্ভ আক্রান্ত হলে দেহের ভিতরের অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা হতে পারে। যেমন আমাদের হৃদপিণ্ড ও রক্ত পরিবহন তন্ত্র আক্রান্ত হলে হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। শোয়া বা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে রক্তচাপ কমে যায় ও মাথা ঘোরে। অনেকসময় পরিপাক তন্ত্রেরও সমস্যা হয়। ফলে মনে হয় পেটের মধ্যে খাবার জমে আছে।

ডায়বেটিসের দুইটি জটিলতা 

১. দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা: এগুলো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, যা ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এবং যদি সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না হয় এবং চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় থাকে, তবে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।দীর্ঘস্থায়ী জটিলতাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

☆চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি):ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’ নামে একটি চোখের রোগ তৈরি করে, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

☆স্নায়ুর ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি): ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিছু লোকের রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার জটিলতার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এটি স্নায়ুর জন্য মস্তিষ্ক এবং রোগীর শরীরের প্রতিটি অংশের মধ্যে বার্তা বহন করা কঠিন করে তুলতে পারে। এর ফলে আমরা কীভাবে দেখি, শুনি, অনুভব করি এবং নড়াচড়া করি তা প্রভাবিত হয়।

☆পায়ের সমস্যা:স্নায়ুর ক্ষতি হলে ডায়বেটিস  আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে এবং রক্তে শর্করার বৃদ্ধি রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে, যা ঘা এবং কাটাছিড়া নিরাময়ের পদ্ধতিকে ধীর করে তোলে।

হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক:যখন একজন মানুষের ডায়াবেটিস থাকে, তখন রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি তার রক্তনালিগুলোর ক্ষতি করতে পারে। এটি কখনো কখনো হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর কারণ হতে পারে।

☆কিডনির সমস্যা (নেফ্রোপ্যাথি): ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময়ের জন্য একজন মানুষের  কিডনির ক্ষতি করতে পারে, যা তার শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল এবং বর্জ্য পরিষ্কার করা কঠিন করে তোলে। এটি রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়ে থাকে। এটি ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বা কিডনি রোগ নামে পরিচিত। ডায়াবেটিক রোগীদের দুটা কিডনিই একই সাথে আক্রান্ত হয়।তখন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয় বা ডায়ালাইসিস করতে হয়। তা না হলে বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

☆মাড়ির রোগ এবং মুখের অন্যান্য সমস্যা:  মানুষের রক্তে অত্যধিক চিনি তার লালায় আরও চিনির কারণ হতে পারে। এটি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আসে, যা অ্যাসিড তৈরি করে। ফলে এটি দাঁতের এনামেলকে আক্রমণ করে এবং মাড়ির ক্ষতি করে।  মাড়ির রক্তনালিগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে মাড়িতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

২. অ্যাকিউট জটিলতা: এগুলো যে কোন সময় ঘটতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী, বা দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।অ্যাকিউট জটিলতার মধ্যে রয়েছে –

☆হাইপোস বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া: যখন রক্তে শর্করা খুব কম হয়, সাধারণত চার মিলিমোল পার লিটার এর নিচে তখন এই সমস্যাটি দেখা দেয়।

☆হাইপারস বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া: যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি হয়, সাধারণত খাবারের আগে সাত মিলিমোল পার লিটার এর উপরে এবং খাবারের দুই ঘন্টা পরে আট দশমিক পাঁচ মিলিমোল পার লিটার এর উপরে তখন উক্ত সমস্যা দেখা দেয়।

গর্ভবতী নারীর উপর ডায়বেটিসের প্রভাব

গর্ভকালীন ডায়বেটিসকে বলা হয় জেস্টেশনাল ডায়বেটিস। সন্তান গর্ভে থাকার সময় মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে নানাভাবে সন্তানের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  • জন্মগ্রহণের পরপরই স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন হৃৎপিন্ড ও শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা।
  • ভবিষ্যতে স্থূলাকৃতির দেহ (অতিরিক্ত ওজন) হওয়ার বা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এছাড়া জন্মের পর থেকেই স্নায়ুতন্ত্র এবং হৃৎপিন্ডের সমস্যার পাশাপাশি আরো বিভিন্নরকম সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডায়বেটিস রোগীদের অবশ্য করণীয়

যাদের পরিবারে বা নিকট আত্মীয়ের আছে, তাদের পরিবারের সদস্য বা সন্তানের হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই তাদের ২৫ বছরের পর থেকে ২ বছর বা ৫ বছর অন্তর পরীক্ষা করা দরকার। যাদের ডায়াবেটিস হয়ে গেছে, তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।

  • নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ 
  • নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ 
  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন 
  • মানসিক সমর্থন
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট হাটাহাটি করা
  • নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিনের কাজকর্ম পরিচালনা করা
  • রক্তে গ্লুকোজের পরিমানের দিকে নজর রাখা
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ডায়বেটিস রোগীদের চিকিৎসার রুটিন 

যাদের পক্ষে সম্ভব তাদের উচিত দ্রুত গ্লুকোমিটার কিনে অবশ্যই প্রতিদিন রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা।আর যাদের পক্ষে সম্ভব নয় তারা সপ্তাহে ১\২ বার রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা।

রক্তের এই পরীক্ষা দিনের বিভিন্ন সময়ে করতে হবে যেমন খালি পেটে, নাশতার দুই ঘণ্টা পর দুপুরের খাওয়ার আগে ও পরে এবং রাতে খাওয়ার আগে ও পরে।

একটি নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা তৈরি করে দৈনিক সেই অনুযায়ী খেতে হবে। দৈনিক অল্প করে তিন ঘন্টা পর পর খেতে হবে। সকাল ৮টা, বেলা ১১টা ও ২টা, বিকেল ৫টা, রাত ৯টা এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই কিছু খেয়ে ঘুমাবেন। 

শেষকথা 

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় আশা করি বুঝতে পেরেছেন। যাদের বংশে ডায়াবেটিস নেই বা হয়নি, তাদের হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। তাদের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের পর থেকে শুধু চেকাপ করাই যথেষ্ট।

ডায়বেটিস যেহেতু একটি সারাজীবনের রোগ তাই এটি নিয়ে অহেতুক চিন্তা না করে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপরোক্ত পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top